শিরোনাম
রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - সালাহউদ্দিন আহমেদ

গুম খুনের অপসংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন করতে হবে

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজই হলো জাতিকে একটি অবাধ সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়া, সেজন্য রাষ্ট্রকাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন

শফিউল আলম দোলন

গুম খুনের অপসংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন করতে হবে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে গুম ও খুনের অপসংস্কৃতি চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিগত ১৬ বছর রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীমতের অসংখ্য নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গুম ও খুন করা হয়েছে। নির্বাচন বহির্ভূত অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতেই এই গুম-খুন-অপহরণ করা হয়। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গায়েবি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি-নির্যাতন করে অগণিত মানুষকে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চালানো হয়েছে পিলখানা, হেফাজত, ছাত্র-জনতা হত্যার মতো একের পর এক গণহত্যা। লাখ লাখ নেতা-কর্মী ও ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে দেড় লক্ষাধিক মামলা দিয়ে অকথ্য জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে। অবশেষে ভয়াবহ এই দানব সরকারের পতন হয়েছে পৃথিবী কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। আমরা এখন বৈষম্যহীন, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যে দেশে মানুষ নিজের পছন্দমতো ভোট দিয়ে নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে।  দীর্ঘ ৯ বছর নির্বাসন শেষে গত ১১ আগস্ট প্রতিবেশী ভারত থেকে দেশে ফেরেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন আহমেদ শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় স্থানীয় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়। পরের টানা ৯ বছরের ইতিহাস। তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার গোয়েন্দা সংস্থা তথা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে অপহরণ শেষে প্রথমে ৬২ দিন আয়নাঘরে গুম রাখার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ করে বিএনপি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ভয়াবহ পতনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তিন দিনের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।  দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজই হলো- জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর জাতীয় নির্বাচন উপহার দেওয়া। সে জন্য একটি নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর তার প্রধান কাঠামোগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধন। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের উপযুক্ত করে পরিবেশ তৈরি করা। যাতে সুন্দর একটি পরিবেশের মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিয়ে তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য যেসব সংস্কার অনিবার্য সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য যৌক্তিক সময় ও সর্বাত্মক সহযোগিতা বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই দেবে।   শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলের এই কঠোর অবস্থান সব সময়ই আছে। তবে যে কোনো একটা বিপ্লব কিংবা গণঅভ্যুত্থানের পর সংগত কারণেই মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যায় এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে কিছু সুযোগ-সন্ধানী ব্যক্তি অন্যায় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দল বদ্ধপরিকর। তিনি অবিলম্বে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ তৈরি করে সে অনুযায়ী নির্বাচনি প্রস্তুতির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একটি দলের নেতাদের ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা’ সংবলিত বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণহত্যার মতো বৃহৎ অপরাধের কোনো ঘটনা ক্ষমা করার এক্তিয়ার কোনো ব্যক্তির নেই। রাষ্ট্র যদি মনে করে আর নির্বাচিত কোনো সরকার যদি পার্লামেন্টে আইন পাস করে রি-কনসিলিয়েশনের সিদ্ধান্ত নেয় তখনই সেটি সম্ভব। সে ক্ষেত্রেও জনগণের মতামত নিতে হবে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভিন্নমতের মানুষকে গুম, অপহরণ ও খুনের জঘন্য সংস্কৃতি চালু করে। এসব অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল- তাদের সবাইকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় আনতে হবে।

এই গুম-খুন-অপহরণের অপসংস্কৃতি দেশ থেকে চিরতরে তুলে দিতে হবে।  শহীদ ছাত্র-জনতার স্বপ্নের বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রকৃত অর্থেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ও আইনের শাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং তখনই কেবল নাগরিকের সব অধিকার নিশ্চিত হবে ও একটি মানবিক সমাজ সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। এমন একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য দেশে-বিদেশে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। এ সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। যাতে এই বাংলাদেশে আর কোনো দিন কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।

সর্বশেষ খবর