বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ডিসি নিয়োগ নিয়ে অস্থিরতা

বিক্ষোভ অব্যাহত, নিয়োগ বাতিল আটজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অস্থিরতা কাটেনি। গতকাল এ বিষয়ে সচিবালয়ে আলোচনার পাশাপাশি ডিসি হতে না পারাদের মহড়া ছিল দিনভর। তারা সব ডিসির নিয়োগ বাতিল চেয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে আটজন ডিসির নিয়োগ বাতিল এবং চারজনের জেলা বদল করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ নিয়োগ কেন্দ্র করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের ঘটনায় এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকালও সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ ছিল থমথমে। এক দিন আগে মঙ্গলবার ডিসি নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতিসহ হট্টগোল হয় দিনভর। গতকালও এর রেশ ছিল। সকাল থেকেই ডিসি হতে না পারা কর্মকর্তারা দলবল মিলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ফ্লোরে মহড়া দেন। সেখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ডিসি নিয়োগ। সন্ধ্যার পরও ডিসি পদপ্রত্যাশী কর্মকর্তারা বিভিন্ন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পদায়নকৃত যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ভ্যালিড অভিযোগ পাওয়া গেছে তা আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। স্ট্যান্ডিং বাছাই কমিটির মাধ্যমে ডিসি ফিট লিস্ট হয়। এর প্রধান থাকেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সে কমিটি আজ (গতকাল বুধবার) বসেছিল। তাদের পর্যালোচনায় লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। আর চার জেলায় রদবদল করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সচেতনতার সঙ্গে কাজ করি। কোথাও যদি ফাঁকফোকর থাকে, তবে সেটা আপনারা (সাংবাদিক) ধরিয়ে দেবেন। যে আট জেলায় নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, সেখানে তিন দিনের মধ্যে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দফায় ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয় সরকার। এ নিয়োগ নিয়ে কিছু কর্মকর্তার মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তাঁরা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে তাঁরা তাঁদের দাবি তুলে ধরেন। তাঁদের (ডিসি হতে ইচ্ছুক) মতে, যাদের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী।? গত সরকারের অনুগত থাকায় তাঁরা ভালো জায়গায় চাকরি করেছেন। একই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে হেনস্তা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, সাবেক মন্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলেন তাঁরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, মন্ত্রণালয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে সততা, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন করে পদায়নের দাবি জানান ডিসি পদপ্রত্যাশী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজ। তিনি প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। কতজন ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ-জানতে চাইলে নুরুল হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, সেটা অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। ডিসি পদে পদায়নের পর তা বাতিলের জন্য এভাবে হট্টগোল আগে কখনো দেখা যায়নি, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নুরুল হাফিজ বলেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। পরে দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডিসি পদপ্রত্যাশী কর্মকর্তারা। সাক্ষাৎ শেষে ডিসি পদপ্রত্যাশী উপসচিবদের সমন্বয়ক নূরুল করিম ভূঁইয়া জানান, সম্প্রতি ডিসি নিয়োগের দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি (জনপ্রশাসন সচিব)। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন। গতকাল সরেজমিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেখা যায় দ্বিতীয় তলায় পুলিশ মোতায়েন। মাঠ প্রশাসন শাখার বিভিন্ন ডেস্ক ফাঁকা। ঊর্ধ্বতন নিয়োগ অধিশাখার যুগ্মসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও মাঠ প্রশাসন শাখার যুগ্মসচিব কে এম আলী আযম গতকাল অফিসে আসেননি। ডিএমপির (সচিবালয় নিরাপত্তা শাখা) উপকমিশনার মমতাজুল আহসান হুমায়ুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এক দিন আগের ঘটনার প্রেক্ষিতে সার্বিক নিরাপত্তা ও সাবধানতার জন্য আমাদের ১৫ জনের মতো ফোর্স ছিল।’ সচিবালয়ে ডিসি হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি : ডিসি হতে ইচ্ছুকদের সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি বলে মনে করেন এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির একমাত্র সদস্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সব উপসচিব কি ডিসি হন? কম করে হলেও ১ হাজার উপসচিব থেকে মাত্র ৬৪ জন ডিসি হন। বর্তমান সরকার পাঁচজন বাদে ৫৯ জনকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকজন সচিবের নেতৃত্বে হাই পাওয়ার কমিটি যাচাইবাছাই করে টপ স্কোরার, বেস্টদের এ পদে মনোনয়ন দিয়েছে। এখন বিতর্ক হচ্ছে, এরা খারাপ, এরা ভালো। এরই মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব কয়েকজনের নিয়োগ বাতিল করেছেন। সচিবালয়ে ডিসি হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন নিউজ দেখে সাধারণভাবে মনে করি এটা শোভন হয়নি। কারা করেছেন, যারা ডেপুটি সেক্রেটারি (উপসচিব), ডিসি হতে ইচ্ছুক, তালিকায় তাদের নাম ছিল, কিন্তু তারা হননি। তালিকায় নাম থাকলেই যদি তারা মনে করেন ডিসি হয়েছেন, এটা ঠিক নয়। যারা ডিসি হননি, তাদের তো পদাবনতি হয়নি, ইজ্জতহানি হয়নি। তিনি বলেন, তারা কেন ডিসি হতে পারেননি আমরা কিন্তু সেটা প্রকাশ করিনি। যদিও প্রকাশ করার কোনো আইনগত সুযোগ নেই, তাহলে তারা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবেন। অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী আমরা এটা প্রকাশ করতে পারি না। যিনি হতে পারেননি, তিনি সেই পদের জন্য যোগ্য হতে পারেননি। অযোগ্য শব্দটা আমরা ব্যবহার করি না। তদন্তে গঠিত কমিটির একমাত্র সদস্য আরও বলেন, একটা জেলার ডিসি মানে একটি মিনি বাংলাদেশের তিনি নেতা। বর্তমান সময়ে ১২০টি কমিটির সভাপতি ডিসি। সুতরাং ডিসি পদায়নে অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ্য অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। তিনি বলেন, আমি কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার অথরিটি না। সাক্ষ্যপ্রমাণে আমি কী পেলাম তা বলতে পারি, কারা দোষ করেছেন, কারা করেননি।

ঢাকা ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার প্রত্যাহার : জেলা প্রশাসকের পর এবার সরানো হলো ঢাকা ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারদের। গতকাল এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাবিরুল ইসলাম ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাকির হোসেনকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। সারা দেশে আট বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার আট বিভাগীয় কমিশনার রয়েছেন। অন্যদেরও শিগগিরই সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর