রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
গোপালগঞ্জে খুন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা

হঠাৎ অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় দু-তিন শ জন

বাবা হারাল আমার দুই ছেলে, দিদারের স্ত্রীর আর্তনাদ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জে হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছোট দুই ছেলে। বড়জন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোটজন কেজিতে। আমার ছেলেরা বাবা হারিয়েছে। আমি বিধবা হয়েছি।’ তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে আওয়ামী লীগের হামলায় নিহত দিদারের লাশ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে নিহতের নিজ বাড়ি ঢাকার জুরাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় আলিমুজ্জামান চৌধুরী (৫০) ও সিজার শেখ (৪২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায়। শুক্রবার বিকালে ঘোনাপাড়া মোড়ে হঠাৎ অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় দুই তিনশ জন। এ সময় ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সাংবাদিকসহ ৫০ জন আহত হন। দিদার ঢাকায় ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বুঝে নেন নিহতের স্ত্রী রাবেয়া রহমান ও শ্বশুর হাবিবুর রহমান। পরে তাঁরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে ঢাকার জুরাইনের উদ্দেশে রওনা হন। নিহত দিদারের স্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। ওই বহরে আমার স্বামী ছিল। তার খবর নেওয়ার জন্য মোবাইলে ফোন দিই। পুলিশ আমার স্বমীর ফোন রিসিভ করে মৃত্যুর খবর দেয়। খবর শুনে আমরা গোপালগঞ্জে ছুটে আসি।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছোট দুই ছেলে। বড়জন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে আর ছোটজন কেজিতে। আমার ছেলেরা বাবা হারিয়েছে। আমি বিধবা হয়েছি।’

তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। দিদারের শ্বশুর হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার জামাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে।’ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২০০ থেকে ৩০০ নেতা-কর্মী দেশি অস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেন। এতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৫০ জন আহত হন।’ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম মোড়ে পথসভা শেষে এস এম জিলানীর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছিলাম। ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফকির, স্থানীয় আওয়ামী নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্বে গাড়িবহরে হামলা করা হয়।’ এদিকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা এবং ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারকে গোপালগঞ্জে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম, নাটোর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল।

এদিকে আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন অনাকাঙ্খিত ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত নয়।

সর্বশেষ খবর