সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

গুমের শিকার ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ শুরু

সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় কমিশনে বৃদ্ধ, অনেকেই আসছেন তথ্য দিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে গুমের ঘটনার তদন্ত ও বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি’ গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল শুরু হয়েছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে অভিযোগ দাখিল। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে তথ্য সংগ্রহ। এর মধ্যে গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের অনেকেই আসতে শুরু করেছেন কমিশন কার্যালয়ে। গতকাল সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় কমিশনে এসে হাজির হন সত্তরোর্ধ একজন বৃদ্ধ। তিনি জানান, পাঁচ বছর আগে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। থানা মামলা নেয়নি। জানা যায়, গত ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করবে কমিশন। গত বৃহস্পতিবার  কমিশনের সংযুক্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা জজ মো. বুলবুল হোসেন এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। এতে বলা হয়, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার (পুলিশ, র?্যাব, বিজিবি, সিআইডি, বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্টগার্ড) কোনো সদস্য দ্বারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে সরকার এ কমিশন গঠন করেছে। কমিশনে গুমের ঘটনায় ভুক্তভোগী নিজে অথবা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যে কোনো ব্যক্তি অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। অভিযোগ জানাতে যে কেউ সশরীরে কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে, ডাকের মাধ্যমে অথবা কমিশনের ই-মেইলে লিখিতভাবে পাঠাতে পারবেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৫-৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ অভিযোগ করা যাবে। এ সময়ে অভিযোগ দাখিলের জন্য হটলাইনের মাধ্যমে আগেই সময় নেওয়ার (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) জন্যও অনুরোধ করেছে তারা। এদিকে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা থেকে গতকাল রাজধানীর গুলশানের গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন কার্যালয়ে এসেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব আমিরুদ্দিন। পাঁচ বছর আগে গুম হন তার ছেলে মাসুদ মিয়া। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা থেকে ছাতা মাথায় তদন্ত কমিশন কার্যালয়ে  আসেন তিনি। এই বৃদ্ধ জানান, ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার এক চায়ের দোকান থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তার ছেলে মাসুদ মিয়াকে দুটি মোটরসাইকেল করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ মেলে না মাসুদের। ছোট দুটি সন্তানের বাবা মাসুদ ছিলেন একজন সামান্য ব্যবসায়ী। আমিরুদ্দিনের অভিযোগ, থানায় বারবার ধরনা দিয়েও লাভ হয়নি। বরং কোনো মামলা না নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়। এরপর আদালতে মামলা করলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে তদন্তের ভার দেন বিচারক। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রতিটি অভিযোগনামায় অন্যান্য তথ্যসহ গুমের ঘটনার সুনির্দিষ্ট বিবরণ, ঘটনার স্থান, তারিখ ও সময়, অভিযোগকারী ও তার বাবা-মায়ের নাম, ভুক্তভোগীর নাম ও তার বাবা-মায়ের নাম, ভুক্তভোগীর সঙ্গে অভিযোগকারীর সম্পর্ক, অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীর ডাক-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল ও অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা সংস্থার নাম-ঠিকানা ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। অভিযোগনামায় বর্ণিত গুমের ঘটনার সমর্থনে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি, সাক্ষীদের নাম-ঠিকানার তালিকাসহ অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে) দাখিল করতে হবে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই কমিশন পরে প্রয়োজনবোধে অভিযোগ দাখিলকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

সর্বশেষ খবর