বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
জিরো টলারেন্সে সরকার

হাসিনার সাবেক এপিএস এমপি ভিসির দুর্নীতির অনুসন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু, সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আক্তারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। দুদক বলছে, গাজী হাফিজুর রহমান লিকু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস-২ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম  ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার স্ত্রীর নামে রামদিয়া কাশিয়ানীতে মেসার্স রাফি অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ নামে বিভিন্ন মৌজায় কয়েক শ বিঘা জমি এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলায় মধুসিটিতে ৬ নম্বর রোডে ৫৮৩ নম্বর বাড়ির এ-৬ নম্বর ফ্ল্যাট কিনেছেন। উত্তরায় ১৭ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর রোডে ৪৬ নম্বর সরকারি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দ নিয়েছেন। গোপালগঞ্জ পৌরসভায় ১০ শতক জমি ক্রয় ও পৈতৃক জমিতে পাঁচ তলা বাড়ি নির্মাণ করেন। তার শ্যালকের নামে ছয় তলা বাড়ি, ১০ তলা কমার্শিয়াল ও আবাসিক ভবন, বসিলা মধুসিটিতে এক বিঘা জমির ওপর ছয় তলা ভবন নির্মাণ করেন। কুয়াকাটার লাইট হাউসের পাশে ওশান ব্লু রিসোর্ট করেছেন।

এ ছাড়া নামে-বেনামে নিজের ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বিপুল সম্পদ রয়েছে লিকুর। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ লাখ টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। তার নিজ নামে একটি টয়োটা প্রাডো গাড়ি আছে, যার মূল্য ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার স্টেশন ওয়াগন আছে, যার মূল্য ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৪ একর জমি, নিজ নামে বরাদ্দ নেওয়া রাজউকের ৩ কাঠার প্লট, ১৪ গন্ডা অকৃষি জমি, ৪ কাঠার প্লট, পুরান ঢাকার চকবাজার সুপার মার্কেটে দোকান রয়েছে।

মোস্তাফিজুরের স্ত্রীর নামে পাঁচ তলা বাড়ি, রাজধানীর কাফরুলে ১ হাজার ৮৭২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি ও তার আত্মীয়-স্বজন বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে।

দুদক সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে বহু শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ, ঠিকাদারের জামানতের টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে রূপালী ব্যাংকে স্থানান্তর করে প্রতি কোটিতে ৫০ হাজার টাকা করে কমিশন নিয়েছেন। গাড়ির জ্বালানি বাবদ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরে ডুপ্লেক্স বাড়ি, ঢাকার ধানমন্ডি ও উত্তরায় একাধিক ফ্ল্যাট এবং শেরপুরে জমি কিনেছেন। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ থাকায় দুদক অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর