শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
৪ হাজার আবেদন

প্রশাসনে আবদারের পাহাড়

♦ আর্থিক সুবিধাসহ সিনিয়রিটি চান ♦ অবসরে যাওয়াদের আবেদন বেশি ♦ যাচাইবাছাইয়ে কমিটি গঠন

ওয়াজেদ হীরা

প্রশাসনের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা আবু তালেব মিয়া। যুগ্মসচিব হিসেবে অবসরে গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। ২০০৬ সালে ৩ জুলাই যুগ্মসচিব পদোন্নতি পাওয়ার পর অজ্ঞাত কারণে আর কোনো পদোন্নতি পাননি এ কর্মকর্তা। এখন আর্থিক সুবিধা ও জেষ্ঠ্যতা পুনঃস্থাপনের আবেদন করেছেন তিনি জনপ্রশাসনে। একই ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা শামছুল আলম খানও যুগ্মসচিব হিসেবে অবসরে গিয়েছেন। তিনি আবেদন করেছেন সচিব/সিনিয়র সচিব হতে। ব্যাচের কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব হয়েছেন তাকেও ‘নেক্সট বিলো’ রুল অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা চেয়েছেন আবেদনপত্রে।

১৯৮২ ব্যাচই শুধু নয়, প্রশাসনে বিগত দিনগুলোতে যারা নানাভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন বা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন অবসরে যাওয়াদের পাশাপাশি বর্তমান কর্মকর্তারাও সুযোগ-সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এদের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার, যাদের বেশির ভাগই অবসরে যাওয়া। অবসরে যাওয়া যারা জ্যেষ্ঠতাসহ আর্থিক সুবিধা চেয়েছেন তাদের সংখ্যা আড়াই হাজার। বাকি কর্মকর্তারা এখনো সার্ভিসে যুক্ত আছেন। আবেদনকারী সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে মন্ত্রণালয়। অবসরে যারা চলে গেছেন তাদের বিষয় ভেবে দেখতে গঠন করা হয়েছে কমিটিও। আর চাকরিতে থাকাদের বিষয় দেখছে মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রতিদিন জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব বরাবর এসব আবেদন জমা হয় মন্ত্রণালয়ে। তবে ১৫ সেপ্টেম্বরের পর এসব আবেদন জমা পড়া কমে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা চাকরিতে আছেন তারা অনেকে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব হতে পারেননি। এ ছাড়া অবসরে গেছেন ৫ থেকে ১০ বছর আগে এমন বহুজন আবেদন করেছেন সেই সময়ের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে। ইতোমধ্যে চাকরিরতদের তিন স্তরে পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে যারা চাকরিতে আছেন তাদের কোনো আবেদন অনিষ্পন্ন থাকলেও সেটি বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে। আর অবসরে যাওয়াদের নিয়েও একটা সিদ্ধান্ত আসবে দ্রুতই। এদিকে, একাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন দীর্ঘদিন পর সরকারের এই উদ্যোগ আমরা সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা পাওয়ার স্বপ্ন দেখছি।

জানা গেছে, যারা বিগত আওয়মী লীগের শাসনকালে বিভিন্ন সময় পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন এমন কর্মকর্তাদের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে তিন স্তরে পদোন্নতিও দিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আন্যদিকে প্রায় আড়াই হাজার অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা নিজেদের বঞ্চিত উল্লেখ করে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি চেয়েছেন। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির অর্থ হলো, পুরনো কোনো তারিখে তাদের পদোন্নতি কার্যকর ধরা হবে, সেই তারিখ থেকেই তারা নতুন পদের বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন। এতে করে সরকারের একটি বড় ব্যয় বাড়বে অনেকে মনে করছেন। তবে আরেকটি পক্ষ মনে করছে এতে সামাজিকভাবে এরা সম্মান ফিরে পাবেন। এদিকে, একাধিক আবেদনকারীর আবেদনপত্র ঘেটে জানা গেছে, তারা চাকরিতে থাকলে উচ্চ পদে যেতে পারতেন। অর্থনৈতিক সুুযোগ-সুবিধা ছাড়াও পেনশনে গেলে পিআরএল অর্থ বৃদ্ধিসহ ইত্যাদির বিষয় উল্লেখ করেছেন। সে কারণে সেই সময়ের তারিখ থেকে প্রাপ্ত মর্যাদা চেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যারা চাকরিতে আছেন তাদের অনেকেই পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকি কোনো আবেদন থাকলে সেটি মন্ত্রণালয় সে বিষয়ে কাজ করবে। তবে পুরনো যারা অবসরে চলে গেছেন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচাই-বাছাই করতে সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত চাকরিকালীন পদোন্নতি বঞ্চিত শুধু অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয় দেখবে এই কমিটি। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, এই কমিটিতে আরও চারজন সদস্য থাকবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের একজন করে অতিরিক্ত সচিব পদের কর্মকর্তা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কমপক্ষে যুগ্মসচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এই কমিটির কথা জানিয়ে বলেন, জনপ্রশাসনের আওতায় চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা ও নিষ্পত্তির জন্য এ কমিটি করা হয়েছে। অবসরে যাওয়া আড়াই হাজার আবেদন জমা পড়েছে সে তথ্য উল্লেখ করে জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব বলেন, গত ১৬ বছর তারা পারিবারিক-আর্থিক ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশমালা এবং কেস টু কেস, তারা কে কোন পদ পাবেন তা জানাবে। এ বিষয়ে সরকারের সাবেক অর্থসচিব এবং আবেদন পর্যালোচনা ও নিষ্পত্তি কমিটির চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এই সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করব। যারা প্রকৃত কারণে বঞ্চিত হয়েছেন তারা যেন তাদের যৌক্তিক প্রাপ্ত পান সেটি অবশ্যই আমরা দেখব।’

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর