মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

পাহাড়ে স্বাভাবিক বাজার ও যান চলাচল

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

পাহাড়ে এখন আর উৎকণ্ঠা নেই। স্বাভাবিক হচ্ছে হাটবাজার, সড়ক। ঘর ছেড়ে বেরোচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালিরা। করছেন দৈনন্দিন কাজ। স্তস্তি ফিরেছে পাহাড়ে। গত শুক্রবার সহিংসতার পর চাপা আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছিল রাঙামাটি। রবিবার ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের পর শান্তির সুবাতাস বইছে পাহাড়ে। অন্যদিকে নতুন কোনো অপশক্তি যাতে পাহাড়ের এ সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে তার জন্য কঠোর অবস্থানে আছে যৌথ বাহিনী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘সব জাতি-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্প্রীতির সভা করা হয়েছে। এ সভার পর কোথাও কোনো গুজব আর উৎকণ্ঠার খবর আমারা পাইনি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছেন। দোকানপাট ও বাজার সচল হতে শুরু করেছে। শহরে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। আরও কিছুদিন রাঙামাটিতে আইনশৃঙ্খালা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। সহিংসতায় যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সহিংসতায় নিহতদের পরিবারকে দেওয়া হবে বিশেষ সহায়তা।’

গতকাল সকাল থেকে রাঙামাটির বনরূপা, তবলছড়ি ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। স্বাভাবিক হয়েছে অফিস-আদালতও। তবে গতকাল পর্যন্ত খোলেনি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এদিকে টানা ৭২ ঘণ্টা পর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে শেষ হয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ডাকা সড়ক ও নৌ পথ অবরোধ কর্মসূচি। জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন জানান, রাঙামাটি শহরে নতুন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গুজবকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যারা ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুকে) গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও জননিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সড়কে পুলিশের অবস্থান থাকবে। ইউপিডিএফের ডাকা সড়ক ও নৌপথ অবরোধের কোনো প্রভাব পড়েনি রাঙামাটিতে।

খাগড়াছড়িতে সহিংসতা কেন্দ্র করে শুক্রবার ইউপিডিএফ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল করতে এসে তা ব চালান বাঙালিদের দোকানপাট, গাড়ি, মসজিদ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন পথচারীদের। একপর্যায়ে তাদের ধাওয়া করেন স্থানীয় বাঙালিরা। ঘটে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় অনীক চাকমা নামে একজন নিহত হন। এ ছাড়া মনির ইসলামসহ আরও চারজন গুরুতর আহত হন। সব মিলে উভয় পক্ষের আহত অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাৎক্ষণিক মাঠে নামে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব-৭। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।

এদিকে টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধে আটকে পড়া ১ হাজার ৫০০ পর্যটকের মধ্যে অর্ধশতাধিক বেসরকারি হেলিকপ্টারে সাজেক ত্যাগ করেন। জানা গেছে, ব্যক্তিগত খরচে হেলিকপ্টার ভাড়া করে নিয়ে আসেন পর্যটকরা। গতকাল সাজেকের বিজিবি হেলিপ্যাডে বেসরকারি চারটি হেলিকপ্টার পর পর অবতরণ করে। পরে প্রায় অর্ধশত পর্যটক ওইসব হেলিকপ্টারে সাজেক ত্যাগ করেন। বিষয়টি দীঘিনালার ইউএনও শিরিন আক্তার নিশ্চিত করেছেন। খাগড়াছড়িতে অবরোধ চলাকালে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার থাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

 

 

 

 

সর্বশেষ খবর