বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যাংকের মতোই দখল হয় সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও উত্তরা ফাইন্যান্স

শাহেদ আলী ইরশাদ

ইসলামী ব্যাংকগুলো যেভাবে দখল হয়েছিল ঠিক একইভাবে দখল হয় সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এ দুটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা এখন তাদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ফিরে পেতে চান। এ ব্যাপারে বঞ্চিত উদ্যোক্তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স দখলে সহযোগিতা করেছেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। পেছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জনৈক শীর্ষ কর্তা।

‘সোনালী জীবন সুখের জীবন’- স্লোগানে কয়েকজন স্বপ্নচারী মানুষের হাত ধরে ২০১৩ সালের আগস্টে যাত্রা শুরু করে চতুর্থ প্রজন্মের বিমা প্রতিষ্ঠান সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। এক দশকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স দেশের অন্যতম শীর্ষ বিমা কোম্পানিতে পরিণত হয়। ৮ লাখ মানুষকে বিমা সুবিধার আওতায় এনে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মুস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, একেবারে ইসলামী ব্যাংক দখলের প্রক্রিয়ায় সোনালী লাইফ দখল করা হয়েছিল। আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সরাসরি ইন্ধনে লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটিকে দখল করা হয়। পেছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাদের নির্দেশেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ নিযুক্ত প্রশাসক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স দখলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন। পুরো দখল প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সরকারের দুটি সংস্থার তৎকালীন কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা। দখলের সার্বিক কার্যক্রম তদারক করেছেন তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান। সাবেক চেয়ারম্যানের অভিযোগ, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সোনালী লাইফের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। দুদকও সোনালী লাইফের বোর্ডসংশ্লিষ্ট কাউকে না ডেকেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সবাই যেন মেতে ছিল প্রতিষ্ঠানটি দখলের মহোৎসবে। যারা এ প্রতিষ্ঠানটিকে লুট করার চেষ্টা করেছিল তাদের সহযোগিতা করেছে প্রশাসক। এর অংশ হিসেবে ২০২৩ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ অধিকাংশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন প্রশাসক। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। 

উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড : ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ারবাজারে  অন্তর্ভুক্ত ছিল।  এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। বিগত সরকারের প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) মো. মাকসুদুর রহমানের নেতৃত্বে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি দখল হয় বলে জানিয়েছেন ছয়জন উদ্যোক্তা। তাকে সহযোগিতা করেন সে সময়কার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ইসলাম। মো. মাকসুদুর রহমান এখনো উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান।

এদিকে উত্তরা ফাইন্যান্সের ছয়জন উদ্যোক্তা তাদের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ফিরে পেতে বর্তমান গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উত্তরা ফাইন্যান্সের সাবেক চেয়ারম্যান ও অন্যতম উদ্যোক্তা মতিউর রহমান গত ১৯ তারিখে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি দখলমুক্ত করার জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেই সঙ্গে দখলদাররা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি দখল করে যেভাবে লুটপাট করেছে তা নিরীক্ষা করে ন্যায়বিচার করার জন্য গভর্নরের কাছে প্রার্থনা জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর