বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

পণ্যের খবর নেই টাকা নিয়ে হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে চারটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য ওষুধ ও সরঞ্জাম না কিনেই ভুয়া বিল-ভাউচারে সেই টাকা ব্যয় দেখিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়। একেকটি কেন্দ্রের জন্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা করে সরকারি বরাদ্দ ছিল। এ নিয়ে চারটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি কেনাকাটার নামে ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করা হলে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সেই বিল-ভাউচারে স্বাক্ষরও করেননি। এ নিয়ে ওই কর্মকর্তাদের বদলিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে। রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্যমতে, গত অর্থবছরে রাজশাহী নগরীতে অবস্থিত চারটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য মোট ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ১৯৮ টাকার ওষুধসহ বিভিন্ন মালামাল কেনা হয়। চারটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি হলো আরবান ডিসপেনসারি এবং একটি বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এগুলো হলো- পবা-১ আরবান ডিসপেনসারি, রাণীনগর আরবান ডিসপেনসারি, শিরোইল আরবান ডিসপেনসারি ও বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ চারটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য গত অর্থবছরে ওষুধপত্র ছাড়াও ৫২ হাজার ৫১০ টাকার ১৫টি বিপি মেশিন, ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৮ টাকার গ্লোভস, ৭৯ হাজার ১১০ টাকার ১৫টি নেবুলাইজার মেশিন, তিনটি কেন্দ্রের জন্য ৮২ হাজার ৪৫৫ টাকার তিনটি রেফ্রিজারেটর, চারটি কেন্দ্রের জন্য ৩৪ হাজার ৪৫০ টাকার ৩৫টি স্টেথোস্কোপ, ১৮ হাজার ১৭৯ টাকার থার্মোমিটার এবং ৪৮ হাজার ৩৭৫ টাকার ওয়েট মেশিন কেনা হয়েছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে সরেজমিন ঘুরে কোনো কেন্দ্রেই এসব মালামাল নতুন পাওয়া যায়নি। গত অর্থবছরে এসব মালামালের একটিও কেনা হয়নি বলেও দাবি করেছেন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পবা-১ আরবান ডিসপেনসারির জন্য ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ টাকার ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, লিনেন সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং গজ, ব্যান্ডেজ তুলাসহ বিভিন্ন মালামাল কেনার নামে বিল উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে একটি রেফ্রিজারেটরও আছে। কিন্তু আদৌ কোনো রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য মালামাল কেনা হয়নি। তবে সামান্য পরিমাণে কিছু ওষুধপত্র কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, ‘কিছু ওষুধ তাদের কাছে সরবরাহ করা হলেও কোনো মালামাল দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভুয়া বিল-ভাউচার পাঠানো হয় রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে।’ নগরীর রাণীনগর আরবান ডিসপেনসারির জন্য একই জিনিসপত্র কেনার নামে ব্যয় করা হয় ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ টাকা। কিন্তু সেখানেও কোনো রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য মালামাল কেনা হয়নি। কিছু ওষুধপত্র কেনা হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই সেগুলো গায়েব হয়ে গেছে। নগরীর শিরোইল আরবান ডিসপেনসারির জন্য ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ টাকার ওষুধপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজশাহী সিভিল সার্জন দপ্তর। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, তারা কোনো মালামাল পাননি। কিন্তু কেনাকাটার নামে ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করা হয়। নগরীর রাজশাহী কলেজের সামনে অবস্থিত বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য রেফ্রিজারেটর ছাড়া অন্যান্য ওষুধপত্র ও মালামাল সামগ্রী কেনা হয়েছে। এখানে ব্যয় করা হয়েছে ৪ লাখ ৫ হাজার ৮২২ টাকা। কিন্তু সেখানেও কোনো মালামাল পৌঁছানো হয়নি। রাজশাহী সিভিল সার্জস ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমার মনে নেই কী কেনা হয়েছে, কী কেনা হয়নি। তবে খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরে জানাতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সামান্য বাজেট পাই। সেই বাজেট থেকে নগরীর এ চারটি কেন্দ্র পরিচালনা করা হয়। সেটি করতে গিয়ে কোথাও কম-বেশি হয়ে যায়। তবে কোনো অনিয়ম হয়নি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর