রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্নীতির তদন্তে নজরদারিতে ৩০০

মাহবুব মমতাজী

আওয়ামী লীগ সরকারের নানা দুর্নীতির অভিযোগে ৩ শতাধিক ব্যক্তিকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, উপাচার্য, পুলিশ, আমলাসহ সাবেক সরকারের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন। যদিও ক্ষমতায় থাকাকালে ওইসব ব্যক্তির অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়নি দুদক। পটপরিবর্তনের পর কৌশল বদল করে এসব দুর্নীতিবাজের পিছু নিয়েছে সংস্থাটি।

দুদকের সর্বশেষ অনুসন্ধানের আওতায় আসা ৮৬ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, ব্যাংক ঋণ ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন-বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা ১৩ সাবেক মন্ত্রী ও এমপির কেউই দুদকে হাজির হননি। এমনকি দুদকের কাছে সময় চেয়ে আবেদনও করেননি তারা।

দুদক কর্মকতারা বলছেন, দুদকের মূল কাজ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাত থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে- মূল এ লক্ষ্য ধরে হাঁটছে না প্রতিষ্ঠানটি। বরং যখন যে সরকার আসে, সেই সরকারের মেজাজ-মর্জি বুঝে পথ চলছে। শেখ হাসিনার আমলে সরকারবিরোধী দলগুলোর রাজনীতিকদের দুর্নীতি দমনের বিষয়েই কমিশন ছিল তৎপর। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারবিরোধীদের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। অন্যদিকে হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা যে দুর্নীতি করছে, তা নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না। এখনো কমিশনের সেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুদক এ পর্যন্ত যাদের অনুসন্ধানের আওতায় এনেছে তাদের সবাই সে সময়ের মন্ত্রী-এমপি, তৎকালীন সরকার-ঘনিষ্ঠ আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

দুদক সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৮ মন্ত্রী, ৭ প্রতিমন্ত্রী, ৪১ এমপি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার উপাচার্য, দুই মেয়র ও সচিব, উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে ঘুষ, নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। তবে অনুসন্ধান শুরু হলেও এখনো কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

জানা গেছে, আপাতত মামলার দিকে না গিয়ে অনুসন্ধানের তালিকা বড় করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। তবে এখনই দুদক কাউকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে না। দুদকের অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুদকের এখন কৌশল হচ্ছে, বিগত সরকারের দায়িত্বশীল কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ যদি সংবাদপত্র কিংবা ব্যক্তি মাধ্যম থেকে আসে তাহলে দ্রুততার সঙ্গে গোয়েন্দা ইউনিট থেকে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা জানার চেষ্টা করা এবং সত্যতা পাওয়া গেলে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করা।

সর্বশেষ খবর