দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ থেকে আগামী মাসে বাদ পড়বেন অর্ধ শত প্রভাবশালী পরিচালক। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর সরকারি-বেসরকারি অনেক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক বিদেশে পালিয়েছেন। অনেকেই রয়েছেন আত্মগোপনে। ফলে গত জুলাই থেকে তারা পর্ষদ সভায় অংশ নিচ্ছেন না। বিগত ১৫ বছর ধরে তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পর্ষদে ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো পরিচালক ব্যাংকের পর পর তিনটি পর্ষদ সভায় অংশ না নিলে তিনি পরিচালক পদ হারাবেন। আবার কোনো পরিচালক টানা তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে ব্যাংকের পর্ষদ শূন্য পদে পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে অনেক মন্ত্রী-এমপি নামে-বেনামে শেয়ার কিনে ব্যাংকের মালিক হয়েছেন। অনেক ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের বের করে দিয়ে নানা কৌশলে শেয়ার কিনে পরিচালক হয়েছেন। ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য হয়ে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাচার করেছেন। দেশে সরকারি-বেসরকারি ৫২টি এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব ব্যাংকের মোট পরিচালকের সংখ্যা ৭৬০ জন হলেও এক ধরনের সমঝোতাভিত্তিক বড় অঙ্কের ঋণ বিনিময় করেন শতাধিক পরিচালক। যাদের মধ্যে কয়েকজন বিতর্কিত পরিচালক রয়েছেন। মূলত তাদের কাছেই জিম্মি পুরো ব্যাংক খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি বছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক খাতে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আট বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় তদন্ত করলেও সরকারের প্রভাবশালীদের কারণে সেই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। তার পরই এসব ব্যাংকের পরিচালকরাও আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আত্মগোপনে থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত হচ্ছেন না। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এক সার্কুলারে এখন থেকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পর্ষদ সভায় পরিচালকদের অবশ্যই সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিয়ে পদ টিকিয়ে রাখার সুযোগও নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের পরিচালকরা পর্ষদ থেকে বাদ পড়লেও ওই সব ব্যাংকের পর্ষদ ভাঙতে হবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্গঠন হয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করেছিলেন, বা যেসব শেয়ারহোল্ডার কোনো বেনামি ঋণ নেননি তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের শূন্য পরিচালকদের পদে আসতে পারবেন। এতে আইনি কোনো জটিলতা থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত জুলাই মাস থেকে তাদের ব্যাংকের তিনজন পরিচালক পর্ষদ সভায় উপস্থিত হচ্ছেন না। ৩০ সেপ্টেম্বর আবার পর্ষদ সভা হবে। ওই সভায় অনুপস্থিত থাকলেই তাদের পরিচালক পদ বাতিল হবে। আরেকটি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব জানিয়েছেন, তাদের ব্যাংকেও এমন দুজন পরিচালক রয়েছেন যারা চলতি মাস গেলে তিনটি পর্ষদে অনুপস্থিত থাকবেন। আগামী মাস থেকে তাদের পরিচালকের পদ শূন্য হবে।
এদিকে জনগণের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পাচার করায় ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেক ব্যাংকেরই এমন সমস্যা রয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোরও পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র।