সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে

আদালত প্রতিবেদক

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে

আত্মসমর্পণের পর কারাগারে মাহমুদুর রহমান

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক এ আদেশ দেন।

মাহমুদুর রহমানের মোট সাজার পরিমাণ ৭ বছর হওয়ায় এ আদালত আপিলের শর্তে জামিন দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না বিধায় তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেননি। পরবর্তীতে আপিল আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে। গতকাল সকাল ১০টার পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিজ আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন মাহমুদুর রহমান। শুনানিতে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘এ মামলাটির ঘটনা ঘটেছে আমেরিকায়। কারসাজি করে ঘটনাটি বাংলাদেশে দেখিয়ে একটি সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলায় মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমান আইনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি বিদেশে ছিলেন, আইন মান্য করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন’। এ সময় তার আইনজীবী আদালতের কাছে মাহমুদুর রহমানের আপিল করার জন্য প্রয়োজনীয় সই মুহুরির নকল দ্রুত পাওয়ার আবেদন করেন এবং ডিভিশন চান। মাহমুদুর রহমানের অপর আইনজীবী সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘মাহমুদুর রহমানের মোট সাজার পরিমাণ ৭ বছর হওয়ায় এই আদালত আপিলের শর্তে জামিন দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না বিধায় আমরা মাহমুদুর রহমানের জামিনের আবেদন করিনি। পরবর্তীতে আপিল আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে। এজলাস কক্ষ থেকে বের হয়ে মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোনো দলের হয়ে কখনো লড়াই করিনি। আমি অতীতে যেমন ন্যায়ের জন্য লড়াই করে গেছি, এই ন্যায়ের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই করে যাব। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর। সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত শুক্রবার সকালে দেশে ফেরেন তিনি।

এ মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যায়যায়দিন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। বিচার চলাকালে জয়সহ রাষ্ট্রপক্ষের ১১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি দায়ের করলে শফিক রেহমান ও মাহমুদুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে মূল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের আগে মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি জোটের বেশ কয়েকজন শীর্ষনেতা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন আইসিটি উপদেষ্টা জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ এক ফেসবুক পোস্টে জয় অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতারা তাকে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মামুন বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। পরিবার নিয়ে কানেকটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। তার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইএর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের ৪ মার্চ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদন্ড দেয় নিউইয়র্কের একটি আদালত। ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফৌজদারি দন্ডবিধির ৩০৭ ও ১২০ (বি) ধারায় ঢাকার পল্টন থানায় এ মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর