বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিশ্বের ১১টি দেশে বিপুল সম্পদ ও বাড়ির তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওইসব সম্পদের তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ ১১ দেশে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। একই সঙ্গে মাসুদ বিশ্বাস যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বরাবরও চিঠি পাঠিয়েছে তারা।
গতকাল দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা পৃথক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। চিঠিতে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎপূর্বক কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।দুদক জানায়, ১১টি দেশে তার বাড়ি এবং বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি দেশত্যাগ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিএফআইইউয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন মাসুদ বিশ্বাস। সরাসরি অর্থ পাচারের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, দুটি গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। ঘুষের বিনিময়ে জিনাত এন্টারপ্রাইজের বিদেশে অর্থ পাচারের মামলা ধামাচাপা দিয়েও বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। বিগত দিনে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহসহ ২৪টি বড় কেসে ৯২ হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে সংঘটিত মুদ্রা পাচারের ঘটনায় অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন তিনি। এ ছাড়া ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট (সিটিআর) বিএফআইইউর পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়নি- যার পেছনের খলনায়ক ছিলেন মাসুদ বিশ্বাস। এ ছাড়াও ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামসহ অপ্রয়োজনীয় ইভেন্ট আয়োজন ও বিদেশ সফরের মাধ্যমে অর্থ অপব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত কয়েক বছর বিএফআইইউর পক্ষ থেকে বছরে গড়ে ৮-১০টি বড় তদন্ত দায়সারাভাবে শেষ করে অভিযুক্ত পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। জানা যায়, তিনি মার্কেট সিস্টেমস ও নগদের আর্থিক কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে বিদেশ সফরের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ গ্রহণ করেন।