রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায়

ডিসিসিআই গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায়

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা ভীষণভাবে অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। যা উত্তরণে শিল্পাঞ্চলে বিশেষ করে শিল্পপুলিশ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।

গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারের এফবিসিসিআইর প্রাক্তন সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিসিসিআইর প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ-এর সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং ফুডপান্ডা বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমব্রারিন রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা ভীষণভাবে অনিশ্চিয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে, যা উত্তরণে শিল্পাঞ্চলে বিশেষ করে শিল্পপুলিশ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও প্রশাসনের অনেক জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকরের নিকট হতে সুনির্দিষ্ট বার্তা প্রদান করা আবশ্যক। ডিসিসিআইর প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বর্তমান সময়ে তৈরি পোশাক খাতের জুট ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ায় পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। যে কোনো মূল্যে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশ বৈশি^কভাবে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমার কারখানায় প্রবেশ করতে আমার ভয় লাগে। ভয় লাগে এ জন্য যে আমি কি এই কারখানা থেকে নিজের জীবন নিয়ে বের হয়ে আসতে পারব। যদি ব্যবসায়ীরা নিজের কারখানায় প্রবেশ করতেই শঙ্কিত হন তাহলে কোনো ব্যবসায়ী কিন্তু আগামী দিনে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবেন না। বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদ্যমান শ্রমিক অসন্তোষে কার্যক্রমে অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে এবং এ অবস্থা উত্তরণে শ্রমিক-মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে হবে।  তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শ্রমিকদের বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি শ্রমিকদের যে কোনো যৌক্তিক দাবি বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ ইতিবাচক ভাবে মেটাতে বদ্ধ পরিকর। এ মুহূর্তে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কনফিডেন্স বাড়ানোর ওপর আরও অধিক হারে গুরুত্ব দিচ্ছি। খেলাপি ঋণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অধিকাংশ উদ্যোক্তাদের খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন, সেই সঙ্গে শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার ওপর জোরারোপ করেন।  পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, শিল্প খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মাঠপর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যেটি মোটেই কাম্য নয়, সরকারকে এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া জরুরি। এ ছাড়াও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, এসএমই খাতে অর্থায়ন ও উন্নয়ন কার্যকর নীতি সহায়তা প্রদান একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।  এফবিসিসিআইর প্রাক্তন সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ১৫% বেশি ব্যাংক ঋণের সুদ দিয়ে পৃথিবীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার, তবে আমাদের উদ্যোক্তাদের সেটা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে কাস্টমস হাউসগুলো দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যেটি নিরসনে সরকার ফিন্যান্সিয়াল রিফর্মস কমিটি গঠন করার পাশাপাশি অটোমেশন নিশ্চিত করা জরুরি। ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের ভালো ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে, ফলে উদ্যোক্তারা প্রত্যাশিত মাত্রায় ঋণ পাচ্ছেন না, সেই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা শিল্প খাতে পণ্য উৎপাদনকে ব্যাহত করছে, ফলে স্থানীয় চাহিদার জোগান মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি সমন্বিত রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা চেম্বার সভাপতি শিল্পাঞ্চলগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান। এ ছাড়াও শিল্পাঞ্চলগুলোয় বিশেষ করে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা স্বল্পমূল্যে নিশ্চিতকরণে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর