রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

হঠাৎ ভয়ংকর বন্যা চার মৃত্যু

প্রতিদিন ডেস্ক

হঠাৎ ভয়ংকর বন্যা চার মৃত্যু

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে এবং উপচে প্লাবিত হয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার অন্তত ১৬ ইউনিয়ন। পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ। পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌরশহর। ভারী বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। প্রতিনিধিদের খবর-

শেরপুর : টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সবকটি পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার অন্তত ১৬ ইউনিয়ন।

পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ। সড়ক ভেঙে যাওয়ায় শেরপুর-তিনআনী-নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ চারজন। একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল আসে আবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দ্রুত পানি চলে যায়। এমন বন্যা আর এ এলাকায় দেখা যায়নি বলে জানালেন এলাকাবাসী।

শেরপুরের সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো কোনো নদীর বাঁধ ভেঙে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরসহ নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী উপজেলায় পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। শ্রীবরদীর বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৬৫৯, পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর পানি ৫২৫ এবং ভোগাই নদীর দুটি পয়েন্টের পানি যথাক্রমে ১৭২ ও ৫৬ মিলিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়া অন্য দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে।

নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মন্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্ন্যাসীভিটায় ভোগাই ও চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙেছে। তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার, ঝিনাইগাতী-ধানশাইল সড়কসহ অসংখ্য সড়ক। চেল্লাখালী তীরবর্তী বাতকুচি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় অনেকে বাড়িতে আটকা পড়েছেন।

এ ছাড়া নন্নী-আমবাগান সড়ক, নন্নী-মধুটিলা ইকো পার্ক সড়ক, আমবাগান-বাতকুচি সড়ক চেল্লাখালীর পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। জেলার প্রতিটি শহরে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ওই দুই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এদিকে সীমান্তের দুর্গম এলাকা পর্যন্ত সেনা, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সিভিল প্রশাসন উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ভারী বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর অন্তত ১০ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির উঠতি আমন, সবজিবাগান, মাছের ঘের। এদিকে গতকাল দুপুরের পর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এতে নকলা উপজেলার বিস্তৃত অঞ্চল ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ১৭৭ এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে যথাক্রমে ২৫৫ ও ২৬০ মিলিমিটার।

জানা গেছে, কদিন ধরে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলাসংলগ্ন মেঘালয়ের তুরা জেলায় গতকাল সকাল পর্যন্ত ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই পানি শেরপুরের ভোগাই, চেল্লাখালী ও মহারশি নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আরেক দফা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণ এবং ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৬০০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দুর্গত এলাকার অর্ধেক স্থানে বিদ্যুৎব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, আটকে পড়াদের উদ্ধারে অংশ নিয়েছেন ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে টানা ২৪ ঘণ্টার ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে হালুয়াঘাট পৌরশহর। প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। এ ছাড়া হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হালুয়াঘাট থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, খাদ্য গুদাম, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনের অংশ, জয়িতা প্রাঙ্গণসহ পৌরশহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে আছে। পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল।

নেত্রকোনা : টানা বর্ষণ আর ভারতের মেঘালয় থেকে আসা ঢলে বাড়ছে নেত্রকোনার সবকটি নদনদীর পানি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত দ্রুতবেগে গুরুত্বপূর্ণ সোমেশ্বরী ও কংস নদের পানি বাড়লেও গতকাল সকালে সোমেশ্বরীর পানি কমতে শুরু করেছে। যে কারণে নদীতীরের মানুষের ভয় কিছুটা কম।

তবে আবারও বৃষ্টিপাত শুরু হলে এবং ভারতের অভ্যন্তরে সিমস্যাং নদের বাঘমারা বা যে কোনো অংশের বাঁধ খুলে দিলে বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নোয়াখালী : গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালী জেলায় ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে নোয়াখালী পুলিশ সুপার, ডিবি অফিস, জেলা রেকর্ড রুম, ডিসি, এসপির বাসভবনের নিচতলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেবাপ্রত্যাশীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। এ ছাড়া সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ও বাসাবাড়ির উঠানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বিকালে জেলার সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নাঞ্চলীয় এলাকাগুলোয় নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল বন্ধ : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন বিকল্প নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিন থেকে বিভিন্ন কাজে টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে গিয়ে আটকা পড়েছেন ৩ শতাধিক মানুষ।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সমুদ্র উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় নৌযান চলাচল শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর