আগামী সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে গত ১৬ বছরে যত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটেছে তার জন্য একতরফাভাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দায়ী। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ হত্যাকারীদের মধ্যে পুলিশও ছিল, ছাত্রলীগের গুন্ডাবাহিনীও ছিল। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ দাবি তুলে ধরেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনি সাতটি দাবি তুলে ধরেন। ‘আমার দেশ পরিবার’ এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে। ফ্যাসিবাদ দেশে এখনো রয়েছে দাবি করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এসবির প্রতিবেদনে এখনো আমাকে ‘ক্রিমিনাল’ বলা হয়। আর যে নিজামুল হক নাসিমের জেলে থাকা দরকার- তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, শুধু পুলিশ কেন দেশের বড় সমস্যা মিডিয়াতে। ১৯৭১ সাল থেকে দেশের মিডিয়া সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় এজেন্ট আর ভারতীয় সম্প্রসারণে এদেশের দালালদের দখলে চলে গেছে। সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খানকে দুর্নীতিবাজ ও নিম্নশ্রেণির চাটুকার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ইকবাল সোবহান চৌধুরী এখনো কীভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসেন? এই ইকবাল সোবহান চৌধুরী ‘আমার দেশ’ দখল করতে চেয়েছিল। সম্পাদক মাহফুজ আনামের একটি লেখা দেখিয়ে তিনি বলেন, এ সম্পাদক লিখেছিলেন ‘শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দেশ গঠনে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অতীতের যে কোনো সরকারের চেয়ে এ অর্জনগুলো স্মরণীয় ও অতুলনীয়’। এই সম্পাদকরা হলেন সাংবাদিক সমাজের মাথা। এই স্বাধীনতার পরে সম্পাদক পরিষদ সরকারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল সেই পরিষদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মাহফুজ আনাম। তিনি এখনো সম্পাদক পরিষদের নেতা। সরকারকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে হলে মিডিয়া ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, মৌলবাদ ও ইসলামী জঙ্গিবাদ ফেরি করে অ্যান্টি ইসলামের, বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আবহ তৈরি করেছে এদেশের মিডিয়াগুলো। অথচ এই শব্দগুলো হচ্ছে ‘মোদির ন্যারেটিভ’। এদেশের মিডিয়ায় দুর্ভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত জাতীয় আইডেন্টি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে না। সরকারগঠিত একটি কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান সম্প্রতি ‘মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে বাংলাদেশে’ এমন বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, এমন উত্থান কোথায় দেখেছেন ইফতেখারুজ্জামান? এ সরকারের আমলে ফের মৌলবাদের কার্ড ফেরি করা ইফতেখারুজ্জামানের উদ্দেশ্য কী? মাহমুদুর রহমান ইফতেখারুজ্জামানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আপনি সাম্প্রদায়িকতা শব্দ ব্যবহার করতে পারেন, মৌলবাদ বলবেন না’। তিনি বলেন, দেশের ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’ বাই নেম সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এটা নিয়ে তো কথা বলেন না তিনি। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এতই পাওয়ারফুল যে তাকে এক-এগারোর সরকারে পদ দিতে আইন পরিবর্তন করতে হয়েছিল। এই দেবপ্রিয় ২০০৫ সাল থেকে এক-এগারোর সরকারের সময় পর্যন্ত দেশে ইন্ডিয়ান করিডোর দিতে প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করতেন। বিদেশের টাকা নিয়ে প্রতিদিন সেমিনার করেছেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মাহমুদুর রহমানের উত্থাপিত সাত দফা দাবি হলো- ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য চারজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হবে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে চলতি সপ্তাহের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে, যমুনা সেতুকে শহীদ আবু সাঈদের নামে নামকরণ করতে হবে, ২০০৯ সালের পর থেকে ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে তার প্রত্যেকটা ধারা-উপধারা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকে শহীদ আবরারের নামে নামকরণ করতে হবে, শেখ মুজিবের নামে কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ হিসেবে মাহমুদুর রহমানের হাতে আইডি কার্ড হস্তান্তর করেন জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বিএফইউজে সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ডিইউজে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার ফরিদ আহমেদ, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানি, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, আমার দেশ ইউনিট চিফ বাছির জামাল।