বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

দিল্লি নাকি দুবাই

♦ শেখ হাসিনা কোনো দেশে যাননি দিল্লিতেই আছেন : বিবিসি ♦ অবস্থান নিশ্চিত নয় সরকার : উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি

দিল্লি নাকি দুবাই

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ঢাকা ছাড়ার পর থেকেই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে তাঁর অবস্থানের তথ্য ছিল বিভিন্নভাবে। কিন্তু হঠাৎ দিল্লি ছেড়ে তাঁর দুবাই যাওয়ার তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

শেখ হাসিনার দুবাই যাওয়ার তথ্যের কোনো সত্যতা না পাওয়া গেলেও এ নিয়ে আলোচনা সবার মুখে মুখে। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। জানা যায়, কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের প্রবল গণ আন্দোলন ও জনরোষ থেকে বাঁচতে ৫ আগস্ট গণভবন থেকে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে বিমানবন্দরে, সেখান থেকে বিমান বাহিনীর একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে নামেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা হিন্দন বিমানঘাঁটির একটি সেফ হাউসে ছিলেন প্রায় দুই সপ্তাহ।

অসমর্থিত সূত্রের খবর, পরে শেখ হাসিনাকে দিল্লির বেসামরিক এলাকায় একটি বাসায় আশ্রয় দেয় ভারত সরকার। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নামের একটি ব্রিটিশ গণমাধ্যমে এমন খবরও আসে, নয়াদিল্লির একটি পার্কে শেখ হাসিনাকে ঘুরতে দেখা গেছে। সর্বশেষ সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে আরব আমিরাতের আজমান শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি শামীম ওসমানের বাসায় শেখ হাসিনা আশ্রয় নিয়েছেন বলে কথা ছড়ানো হয়। এর কোনো সত্যতা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও শামীম ওসমানকে দুবাইয়ে শপিং মলে দেখা যাওয়ার ছবি আলোচনায় ঘি ঢেলেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতে খোঁজ করেছি, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও খোঁজ করেছি। কনফারমেশন অফিশিয়ালি কেউ দিতে পারেননি। তবে আপনারা যেমন দেখেছেন, আমরাও দেখেছি যে উনি আজমানে সম্ভবত গেছেন। কিন্তু এটা রিকনফার্ম করার চেষ্টা করেও আমরা সফল হইনি। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হয়েছে- আমেরিকার চাপে ভারত সরকার তাকে দিল্লি থেকে আমিরাতে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, এটা আমি বলতে পারব না, আমেরিকাকে জিজ্ঞাসা করেন- ‘ওরা চাপ দিয়েছে কি না’।

ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা ট্রাভেল পাস নিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ট্রাভেল পাস ইস্যু করবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ মিশন ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে শুধু দেশে ফেরার জন্য, অন্য দেশে যাওয়ার জন্য নয়। অন্য দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন পড়ে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, তারা যদি দেশে ফিরতে চান, ট্রাভেল পাস ইস্যু করা যেতে পারে এবং তারা দেশে ফিরে আসতে পারেন। আদালত চাইলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় গতকাল দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, তার মা ভারত ছেড়ে গিয়েছেন বলে যে খবর চাউর হয়েছে সেটি সঠিক নয়। তিনি এখনো ভারতে অবস্থান করছেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলেছেন, সংক্ষিপ্ত নোটিসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপারে আমি আপনাদের বলেছি, তার পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। এটি তার ওপর নির্ভর করছে, তিনি কীভাবে বিষয়গুলো এগিয়ে নেবেন।’

দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত দুই মাসে দেড় শতাধিক হত্যামামলা দায়ের হয়েছে। তাকে গণহত্যার জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার কথা অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই আলোচনা আছে। গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাকেও বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করার ইস্যুতে একাধিকবার কথা বলেছেন আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, বিচার শুরু হলে অবশ্যই ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় যে কোনো দণ্ডিত ব্যক্তির প্রত্যর্পণ চাইবে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা দিল্লিতেই আছেন -বিবিসি : শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে চলে গেছেন এ-জাতীয় সব খবর ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা। দিল্লির সাউথ ব্লকের এক উচ্চপদস্থ সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘যে পরিস্থিতিতেই আসুন না কেন, শেখ হাসিনা এ মুহূর্তে ভারতের সম্মানিত অতিথি। তিনি যদি পরে তৃতীয় কোনো দেশে যানও, সেটা নিয়ে আমাদের লুকোছাপা করার তো কোনো কারণ নেই!’ ফলে শেখ হাসিনা গোপনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কোনো দেশে পাড়ি দিয়েছেন, এসব ‘খবর’ উপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর