অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি সংশোধনযোগ্য নয়, সম্পূর্ণ বাতিলযোগ্য। এই আইনে ক্ষতিগ্রস্তদের অবিলম্বে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যত দেরি হবে তত তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আইন : জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আরএমএমআইওর নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী সি আর আবরার। বক্তব্য রাখেন আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম, মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, এমআরডিআইয়ের হেড অব প্রোগ্রাম অ্যান্ড কমিউনিকেশনস মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে আইনটি বাতিলে এত দেরি হওয়ার কথা নয়। আইনটিকে যারা কর্তৃত্ববাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যারা হুকুমের আসামি তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো আইনের মধ্যে আর সাইবার সিকিউরিটি শব্দটি থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, আমার উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। আইনের পরিবর্তন এখনো হয়নি। প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন হচ্ছে না, প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার পরিবর্তন হচ্ছে না। সেই জায়গায় আমাদের হাত দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে জাতীয় নিরাপত্তার নামে গোয়েন্দা সংস্থা থাকবে অস্বীকার করব না। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থায় যে চর্চা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, সেটির দৃষ্টান্ত কিন্তু আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি। দেশে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা থাকবে। তবে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার যেন না হয়, তা নির্মূল করার জন্য আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করতে হবে।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে প্রচুর মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মন খুলে সমালোচনা করতে। তবে, হাসিনার সময়েও মামলা হতো, এখন ইউনূসের সময়েও মামলা হচ্ছে। শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, আমাদের মানসিকতা হচ্ছে হয়রানি করা। হয়রানি করাটা মুখ্য উদ্দেশ্য। নতুন আইন করার ক্ষেত্রে কেউ যাতে ওই আইনে হয়রানি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ন্যাশনাল সিকিউরিটির আলোচনাকে আর সাইবার সিকিউরিটির আলোচনাকে যদি আমরা আলাদা করতে না পারি, তাহলে আমাদের আরও অনেক বড় অধিকার ক্ষুণ্ন হবে, এটাও মাথায় রাখা দরকার।