শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

সরকারের অনীহায় বন্ধ ছাত্র সংসদ নির্বাচন

♦ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে হয় ডাকসু ভোট ♦ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা

আকতারুজ্জামান

স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। অথচ শেখ হাসিনা ৫ মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় এসে দেশশাসন করেছেন প্রায় ২১ বছর। আর খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি দুই মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ১০ বছর দেশশাসন করেছেন। পালাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশশাসন করলেও কোনো সরকারেরই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নিয়েই সরকারের ভয় ছিল। কারণ, তারা বিক্ষুব্ধ হলে সরকারের গদি টিকে থাকে না। তথ্যমতে, ২০১৯ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে সচল হয় ডাকসু ও ১৮টি হল সংসদ। এসব সংসদের সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালে। এরপর চার বছর পেরোলেও ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচন হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ  চাকসু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ রাকসু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ জাকসুসহ অন্য ছাত্র সংসদেরও। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার থেকেও।

সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এতদিন একচেটিয়াভাবে চলেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মকান্ড। সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোও তেমন কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লক্ষ্য করা গেছে ক্ষমতায় থাকা দলীয় ছাত্র সংগঠনের অস্ত্রের ঝনঝনানি আর খুনের রাজনীতি। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে গত জুলাই ও আগস্টেও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। যদিও ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। একইভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়েছে ছাত্রলীগ।

২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভিপি নির্বাচিত হওয়া নুরুল হক নূর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্রসমাজকে সরকারগুলো সব সময় ভয় পেয়েছে। কারণ, সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একমাত্র ছাত্ররাই ফুঁসে উঠতে পারে। ছাত্ররা ফুঁসে উঠলে কোনো সরকারের গদি টিকে থাকে না। সেটি ’৫২, ’৭১, ’৯০-এর ঘটনায় প্রমাণিত। হয়তো এ কারণেই যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তারা ডাকসু, চাকসু, রাকসু, জাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়নি।

তিনি বলেন, দলভিত্তিক ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রদের হাতে কালো টাকা ও পেশিশক্তির রাজনীতি তুলে দেওয়া হয়েছে তাদের দলীয় লাঠিয়াল বাহিনী বানানোর জন্য। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে মেধাবীরা নেতৃত্বে আসবে। আর মেধাবীদের দিয়ে তো নানা অপকর্ম করানো সম্ভব হবে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলো চায়নি যে মেধাবীরা ছাত্র রাজনীতিতে আসুক। ফলে যথাসময়ে হয়নি ছাত্র সংসদ নির্বাচনও। অবিলম্বে সব ছাত্র সংসদে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নুরুল হক নূর বলেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেবে তারা।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যাপীঠগুলোর প্রশাসকরাও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে মত দিচ্ছেন।

এদিকে, রাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে গত ৩৪ বছর। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। রাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে প্রশাসন।

ঢাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ডাকসু নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামতের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দ্রুততম সময়ে করা যায় কিনা- সে ব্যাপারে উপাচার্যদের বলেছি। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে এ নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে জানান তিনি।

 

সর্বশেষ খবর