প্রথম আলো পত্রিকায় ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন দেশের আলেম-ওলামাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ। তারা প্রথম আলো নিষিদ্ধসহ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকার যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে শিগগিরই তারা দাবি আদায়ে রাজপথে নামবেন।
এর আগে ২০০৭ সালে ধর্ম অবমাননার কারণে সারা দেশের আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষ যখন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার ও প্রথম আলো নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামেন, সে সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মধ্যস্থতায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের হাত ধরে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করেন মতিউর রহমান। তওবা করে বলেছিলেন ‘ধর্মে আঘাত আসে এমন কিছু আর কখনোই করবেন না।’ কিন্তু গেল পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ৩০ মার্চ প্রথম পৃষ্ঠায় ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে ঈদ মুবারক লেখার পাশে কুকুরের ছবি দিয়েছে ঈদ শুভেচ্ছায়। এ কুকুরের ছবি দেওয়ায় দেশের আলেম-ওলামারা বলছেন, এটা একটা ধর্ম অবমাননার শামিল।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন ‘প্রথম আলোকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো ঈদের মতো একটি পবিত্র ইবাদতকেও কটাক্ষ করতে দ্বিধা করেনি।’ ‘প্রথম আলোর ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি, এ কেমন অদ্ভুত আচরণ’? সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কথা বলেন তিনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ বলেন, জনশ্রুতি রয়েছে প্রথম আলো ভিনদেশের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। মাঝেমধ্যেই তারা ইসলাম ধর্ম ও দেশি কৃষ্টি-কালচারের বিরোধী খবর প্রচার করে। ঈদ শুভেচ্ছায় কুকুরের ছবি প্রকাশ করে প্রথম আলো জঘন্য অপরাধ করেছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী যে কোনো ধর্মেরই কটাক্ষ করা অপরাধ। প্রথম আলো ইসলাম ধর্মে আঘাত করেছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করতে হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ঈদ মুসলমানদের জন্য আনন্দের ও ইবাদত কবুলের সময়। প্রথম আলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঈদের সঙ্গে কুকুরের ছবি দিয়ে ধর্ম অবজ্ঞা অপমান অসম্মান করে তারা কুফরি করেছে। তাদের প্রচলিত আইনে শাস্তি দেওয়া উচিত। দিতে হবে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, প্রথম আলো আগেও হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননা করে ইসলামের দুশমনদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। ঈদের আনন্দে কুকুরের ছবি প্রকাশ ন্যক্কারজনক ও মারাত্মক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেন, ঈদের চাঁদের পাশে কুকুরের ছবি প্রকাশ আপত্তিকর। এটা ধর্মীয় অবমাননার শামিল। কুকুরের ছবি দিয়ে তারা কী বোঝাল?
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, প্রথম আলো ঈদসংখ্যায় কার্টুনে কুকুরের ছবি দিয়ে দেশের কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ে ও ইমানে আঘাত করেছে। পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কিছুদিন পরপর ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আঘাত করে আসছে। ইসলামবিরোধী সব তৎপরতা উসকে দিচ্ছে। প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ইসলামবিরোধী তৎপরতা থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেন, ঈদের খুশিতে একটা কুকুরের দৃশ্যমান ছবি দ্বারা মুসলমানদের একটা ধর্মীয় চেতনাকে হেয় করা হলো। এটা একটা ধর্ম অবমাননার শামিল।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঈদের চাঁদের কার্টুনের সঙ্গে কুকুরের ছবি আঁকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রথম আলো পত্রিকায় এ কার্টুন ছবির মাধ্যমে মুসলমানদের পবিত্র ঈদের চাঁদের সঙ্গে কুকুরের ছবি এঁকে ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে। এ কার্টুনের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈদ উদ্যাপনকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে। মুসলমানদের বছরে দুটি পবিত্র ঈদকে এভাবে কুকুরের ছবি আঁকার মাধ্যমে প্রথম আলো পত্রিকা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। এ কার্টুনের জন্য প্রথম আলো পত্রিকাকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৭ সালে ধর্ম অবমাননার কারণে সারা দেশের আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষ যখন মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার ও প্রথম আলো নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামেন, সে সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মধ্যস্থতায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের হাত ধরে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করেন মতিউর রহমান। তওবা করে বলেছিলেন ‘ধর্মে আঘাত আসে এমন কিছু আর কখনোই করবেন না।’ তওবা রক্ষা করেননি প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মুসলমানদের বহির্বিশ্বে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিত্রায়িত করার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে মিডিয়াস্টার লিমিটেডের মিডিয়া হাউসগুলো। উসকানি দিয়ে দেশের মুসলমানদের সহিংসতায় জড়ানোর চেষ্টা করেছে। আর এ কাজ সবচেয়ে বেশি করেছে প্রথম আলো। বিগত সময়ে জঙ্গি নাটক তৈরি, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দাড়ি, টুপি ও হিজাবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচারণা করেছে প্রথম আলো। আলেম-ওলামারা বলছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ও বিতর্কিত করার চেষ্টা প্রথম আলোর অনেক পুরোনো অভ্যাস। দাড়ি-টুপিওয়ালাদের জঙ্গি সাজিয়ে মুসলমানদের দমন করতে চেয়েছে প্রথম আলো।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের বিবৃতি : গতকাল দলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ৩০ মার্চ প্রথম আলো ঈদ শুভেচ্ছার কার্টুনে কুকুরের ছবি দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা চরম ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। অবশ্যই এ ধৃষ্টতার জন্য পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জমিয়ত নেতৃবৃন্দ আরও বলেছেন, পত্রিকাটির সম্পদক এর আগেও একবার হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননা করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.)-এর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এবার ঈদে এসে আবারও একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হলো। এ জঘন্য আচরণ কিছুতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে ইসলাম ও ইসলামি ভাবধারাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে চাওয়ার অর্থই হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রতিকার চাই। যৌথ বিবৃতিতে দলের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন, সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস তালুকদার, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া এসব কথা বলেছেন।