চলতি বছরের জুনে অনুষ্ঠেয় পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সময় জানাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আইএমএফ। ব্রিফিংয়ে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান (মিশন প্রধানও) ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বাংলাদেশ এখন সঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি, চলমান। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি ছাড়ের বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক শুরু হচ্ছে। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। আমরা সব সময় বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার কথা বলে থাকি। তবে বাংলাদেশকে এখনই পুরো বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি- তেমন না। স্বল্প মেয়াদে বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করার একটা ভালো সময় যাচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। আগে নিয়মিতভাবে যা কমছিল। আবার ব্যাংক এবং খোলাবাজারে ডলারের দরে ব্যবধান অনেক কম। এ সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যাপক বাড়ছে। দেশের মূল্যস্ফীতিও কমছে। অবশ্য জিডিপির তুলনায় এখনো মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি রয়েছে।
আইএমএফের মিশন প্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে এটা (মূল্যস্ফিতি) ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর শর্তের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর জিডিপি অনুপাতের ব্যবধান অনেক বেশি। জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আয় দীর্ঘদিন ধরে একই পরিমাণে থাকছে। কখনো কখনো কমে যাচ্ছে। এই অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করছাড় রয়েছে। আবার ভিন্ন-ভিন্ন করহার রয়েছে। এসব বিষয়ে সংস্কার আনতে হবে। সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আদায় ও তদারকি ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে এসব পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। এ ছাড়া পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ সময় মিশন প্রধান জানান, এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চলমান ঋণ কর্মসূচি শেষ হবে ২০২৬ সালে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত রয়েছে। গত ২ এপ্রিল আইএমএফের মিশনপ্রধান পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। গত দুই সপ্তাহে তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে মিশনের ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।