দ্বিপক্ষীয় ব্যবসাবাণিজ্যের স্বার্থে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের একটি শাখা পাকিস্তানের করাচিতে স্থাপন করা হয়। ওই শাখাটি দীর্ঘদিন ধরে লাভজনকভাবে পাকিস্তানে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তবে দেশটির আর্থিক খাতের মারপ্যাঁচে পড়ে এখন রূপালী ব্যাংকের অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে। রূপালী ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে যৌথ মালিকানায় গড়ে ওঠা আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক কয়েক দফা নাম পরিবর্তন করে সর্বশেষ ব্যাংক মাকরমাহ লিমিটেড (বিএমএল) নামে দেশটিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রূপালী ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে করাচিতে যৌথভাবে গঠন করা হয়েছিল আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখাটি ১৯৭৬ সালে স্থাপনের পর টানা ৩০ বছর অর্থাৎ ২০০৬ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরপর এটি অন্য একটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। একীভূত ব্যাংকটি থেকে শেয়ার তুলে নেওয়ার জন্য রূপালী ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ সালে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তবে শেয়ারের দাম কম থাকায় অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ওই সময় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন পরবর্তী পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ শুরু হওয়ায় রূপালী ব্যাংকের শেয়ার ফেরত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঢাকা সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ফরেন অফিস কনসালটেন্ট বৈঠকে এ ইস্যুটিও তালিকভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান একটি সার্কুলার জারি করে যে, ওই দেশে পরিচালিত সব শিডিউল ব্যাংক এবং বিদেশি ব্যাংকের শাখার ন্যূনতম মূলধন ১০০ কোটি রুপি থাকতে হবে। ২০০৪ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেক নির্দেশনায় ওই মূলধনের পরিমাণ ২০০ কোটি রুপিতে উন্নীত করে। এ পরিস্থিতিতে রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখা নির্দেশনা মেনে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের শর্ত পূরণ করতে না পারায় ২০০৬ সালের ৪ আগস্ট ১০০ কোটি রুপি পরিশোধিত মূলধন নিয়ে দেশটির উদ্যোক্তা মেসার্স আরিফ হাবিব সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নতুন করে একটি ব্যাংক গঠন করে। যৌথ মালিকানাধীন এ ব্যাংকের নাম হয় আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। ওই যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংকটিতে তখন রূপালী ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২৯ কোটি ৫০ লাখ রুপি। এর মধ্যে সম্পদমূল্য ২১ কোটি ৫০ লাখ রুপি এবং প্রিমিয়াম মূল্য ধরা হয় ৮ কোটি পাক রুপি। এ সম্পদের বিপরীতে রূপালী ব্যাংকের ১০ টাকা রুপি মূল্যমানের ২ কোটি ৯৫ লাখ শেয়ার ছিল। অর্থাৎ যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংকটিতে রূপালী ব্যাংকের শেয়ার ছিল ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক লিমিটেড নাম পরিবর্তন করে আরিফ হাবিব ব্যাংক লিমিটেড করা হয়। ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট আবারও নাম পরিবর্তন করে সামিট ব্যাংক লিমিটেড করা হয়। আর ওই সময় থেকেই পাকিস্তানের আর্থিক খাত থেকে বাংলাদেশের রূপালী ব্যাংকের নাম হারিয়ে যায়। তবে নাম না থাকলেও ব্যাংকটিতে রূপালী ব্যাংকের শেয়ার অপরিবর্তিত থাকে। পরে যা লোকসানের কারণে বছর বছর কমতে থাকে। রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, এ ধরনের নাম পরিবর্তনে সায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে লোকসানের কবলে পড়ে পাকিস্তানের সামিট ব্যাংকও তাদের শেয়ার ধরে রাখতে পারেনি। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্যাংকটির অর্ধেকেরও বেশি (৬০ দশমিক ৪৫ শতাংশ) শেয়ার কিনে নেয় দুবাইয়ের ধনাঢ্য শেখ নাসের আবদুল্লাহ লুটাহ। পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে এটির নাম পরিবর্তন করে ব্যাংক মাকরমাহ লিমিটেড (বিএমএল) নামে দেশটিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।