ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান জানিয়েছে, ২১ এপ্রিল ইস্টার সোমবার ৮৮ বছর বয়সে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্টায় নিজ বাসভবনে মারা যান তিনি। এদিকে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা শোকাহত। এএফপি ও বিবিসির খবরে বলা হয়, পোপ ফ্রান্সিস, যিনি ইতিহাসে প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভ্যাটিকানের কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল এক বিবৃতিতে জানান, স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে রোমের বিশপ ফ্রান্সিস ঈশ্বরের কাছে ফিরে গেছেন। তাঁর পুরো জীবন ছিল প্রভু ও চার্চের সেবায় উৎসর্গিত। পোপ ফ্রান্সিস দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন। তরুণ বয়সে তাঁর একটি ফুসফুস আংশিক অপসারণ করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁকে রোমের গেমেলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু হয়ে পরে তা ডাবল নিউমোনিয়ায় রূপ নেয়। হাসপাতালটিতে তিনি ৩৮ দিন ছিলেন- যা তাঁর ১২ বছরের পোপজীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ চিকিৎসা ছিল।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ, এক বৃষ্টিভেজা রাতে আর্জেন্টিনার বাসিন্দা হোর্হে মারিও বারগোলিও পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন। তার প্রথম বক্তব্য ছিল সাধারণ এক বুয়োনাসেরা (ইতালিয়ান ভাষায় শুভ সন্ধ্যা)- যা তার নম্র ও মানবিক রূপের ইঙ্গিত দিয়েছিল। তিনি গরিবদের পাশে দাঁড়ানো, শরণার্থীদের আলিঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে ভিন্নধর্মী এক পোপ হিসেবে পরিচিত হন। তবে তাঁর খোলামেলা বক্তব্য, এলজিবিটিকিউ+ক্যাথলিকদের প্রতি সহানুভূতি, পুঁজিবাদের সমালোচনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের কারণে অনেক রক্ষণশীল অসন্তুষ্ট ছিলেন। ২০১৮ সালে চিলির এক পুরোহিতের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন, যা তার পোপজীবনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। করোনাভাইরাস মহামারির সময় পুরো বিশ্ব যখন লকডাউনে, তখন ফাঁকা সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই একই নৌকায় আছি- দুর্বল ও বিভ্রান্ত। আমাদের একে অপরকে সহানুভূতি দিয়ে পাশে থাকতে হবে।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর সরলতা, সহানুভূতি এবং গঠনমূলক চিন্তাভাবনার জন্য বিশ্বজুড়ে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ক্যাথলিক চার্চসহ বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।