অনুমোদিত নকশা না মেনে নির্মাণাধীন রাজধানীর ৩ হাজার ৩৮২টি ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে সঠিক জায়গায় নেওয়ার কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, অবৈধ ভবনগুলোর কাজ স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভবনগুলো আংশিক অংশ ভেঙে ফেলা হবে। প্রথম ধাপে সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ফৌজদারি মামলা দায়ের করা, নকশা বাতিল এবং প্রয়োজনে ভবনগুলো সিলগালা করা হবে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সমস্যার নগরী ঢাকা : সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এক নগর সংলাপে তিনি এসব কথা জানান। সংগঠনের সিনিয়র সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মতিন আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে সংগঠনটির প্রকাশনা ‘ঢাকাই’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একই সঙ্গে সংগঠনের উপদেষ্টা হেলিমুল আলম বিপ্লবের ঢাকার খালগুলো নিয়ে প্রকাশিত ‘ঢাকাস কেনেল অন দিয়ার ডায়িং ব্রেথ, এন ইন ডেফথ লক এট হাও দ্যা ক্যাপিটালস ওয়াটারওয়ে আর বিং চকড’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিআইপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বায়ুম লীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র-ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, রাজউক এলাকায় নির্মাণাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি ভবন চিহ্নিত করেছি, যেগুলো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। এ ভবনগুলোর যেটুকু অংশেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে সেটুকু ভেঙে ফেলব। আমি যত দিন দায়িত্বে আছি তার মধ্যে এ কাজ চালিয়েই যাব। এগুলো ভেঙে হোক কিংবা অন্যভাবে হোক তাদের নিয়মের মধ্যে আনব। আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।
নগর সরকার কিংবা এক ছাতার নিচে আনার মতো ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব উল্লেখ করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকাকে এক আমব্রেলার নিচে না আনলে যত পরিকল্পনাই করা হোক না কেন কাজে আসবে না। সব কাজের সিদ্ধান্ত একটি জায়গা থেকে আসতে হবে। সেখানে নগর সরকার হোক কিংবা এক মেয়রের কাছে ক্ষমতা থাকুক সেটায় সমস্যা নেই। নগরের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সেবাসহ সব সেবার বিষয়ে একটি জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এ মুহূর্তে যারা বাড়ি করে ফেলেছে সেগুলোর ব্যবস্থা পরে নিব। সব কাজ একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। তবে আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না সেটা নিশ্চিত করছি। আমাদের নতুন করে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা বেদখল হওয়া প্লটগুলো উদ্ধার করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করব। মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ঢাকাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করতে গিয়ে সমস্যায় জর্জরিত করে ফেলেছি আমরা। ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। ঢাকার ড্যাপের পরিকল্পনায় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা। এ ক্ষেত্রে জোনভিত্তিক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। সুশাসন, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে ঢাকার বাসযোগ্যতা ফেরানো সম্ভব।