শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
সুচিকিৎসা

গর্ভের সন্তানের ভালো-মন্দ

ডা. নওশিন শারমিন পূরবী গাইনোকলজিস্ট পূরবীস হেল্প ডেস্ক, ঢাকা

গর্ভের সন্তানের ভালো-মন্দ

মাতৃত্ব নারীর গৌরব। একজন মহিলার জন্য গর্ভবতী হওয়াটা যেমন আনন্দের তেমনি রোমাঞ্চকর। কিন্তু গর্ভাবস্থায় সন্তানের খেয়াল রাখতে হয়। গর্ভবতী মাকে নিতে হয় আলাদা সতর্কতা। গর্ভের সন্তানের ভালো-মন্দের ক্ষেত্রে এ সতর্কতার বিকল্প নেই।

গর্ভাবস্থায় শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তন এবং করণীয়

প্রথম তিন মাস : প্রস্রাব বা রক্ত পরীক্ষায় যদি বোঝা যায় আপনি সন্তান সম্ভবা তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এ সময় অনেকের বমির ভাব হয়, বমিও হয়। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। অনেকের খাবারে অরুচি তৈরি হয় বা নতুন কোনো খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। এ সময়ে ফলিক এসিড সেবনে বাচ্চার মস্তিষ্ক সুগঠিত হয় এবং নিউরাল টিউব জটিলতা দূর হয়।

তিন থেকে পাঁচ মাস : প্রথম তিন মাসে যে সব খারাপ লাগছিল তার অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। আরামদায়ক ঢিলেঢালা কাপড় পরুন। এ সময়টাতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বাচ্চা আপনার পেটের ভিতর নড়াচড়া করছে। আস্তে আস্তে বাচ্চার নড়াচড়া, ধাক্কাধাক্কি আরও স্পষ্ট হবে।

পাঁচ থেকে সাত মাস : এ সময়ে আপনার পেট দ্রুত বাড়তে থাকবে। বাইরে থেকে দৃশ্যমান হবে আপনি গর্ভবতী। আগের চেয়ে ক্ষুধা বেড়ে যাবে। এ সময়ে সুষম খাবার খেতে হবে। যেমন- রুটি, আলু, ভাত, মাংস, ডিম, দুধ, পনির, দুগ্ধজাতীয় খাবার, শস্যজাতীয় খাবার ইত্যাদি। এককথায় সহজে হজম হয় এমন খাবার খাবেন। বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া পরিহার করুন। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, টমেটো, লেবু, আমলকী, বাদাম, খাবারযোগ্য হাড় ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাব পূরণ করে।

সাত থেকে আট মাস : ভাবতে শুরু করুন আপনার বাচ্চার জন্য আপনি কী কী করতে চান। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করুন। আপনার আরও সন্তান থাকলে তাদের সঙ্গে সময় কাটান এবং নতুন অতিথির বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিন। একই রক্তের গ্রুপ সম্পন্ন বন্ধু বা আত্মীয় ঠিক রাখুন যিনি আপনাকে প্রয়োজনে রক্ত দিতে পারেন। হাঁটাহাঁটি সর্বৎকৃষ্ট ব্যায়াম। আরামদায়ক ফ্ল্যাট জুতা পরুন।

আট থেকে নয় মাস : যদি হাসপাতালে বাচ্চা প্রসব করান তবে আগে থেকেই কাপড়চোপড়, টাকা-পয়সা, সেবাদানকারীর ব্যবস্থা করে রাখুন। পাশাপাশি বাড়ির বাচ্চাটি দেখাশোনার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন। প্রসব ব্যথা ওঠার আগে প্রয়োজনীয় টেলিফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহগুলো অত্যন্ত দীর্ঘ মনে হয়। এ সময়ে এমন কিছু করুন যেন একঘেয়েমি না লাগে।

তলপেটে শক্ত হয়ে আসা, কোমরের ব্যথা সামনে তলপেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া, বার বার ব্যথা ওঠা, পানিভাঙা, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব বের হওয়া- প্রসব বেদনার লক্ষণ।

 

 

গর্ভাবস্থার কিছু সাধারণ সমস্যা ও করণীয় : গর্ভাবস্থায় সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরীরকে প্রচুর কাজ করতে হয়। কিছু পরিবর্তন আপনার কাছে অসুবিধাজনক মনে হতে পারে। যদি কোনো সমস্যা মারাত্মক হয়ে দেখা দেয় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বমিভাব প্রথম দিকের একটি সাধারণ সমস্যা, তবে কেউ কেউ এতে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গর্ভাবস্থায় বাচ্চা প্রসবে সহায়তার জন্য হাড় জোড়া ও মাংস পেশিগুলো এ সময় শিথিল হতে থাকে। এ ছাড়া মায়ের বহনকারী বাচ্চার ওজন এ ব্যথার কারণ। এ সময়ে ভারী কাজ ও ঝুঁকে কাজ করার প্রবণতা পরিহার করা উচিত। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এ কারণে শাকসবজি ও প্রচুর পানীয় খেতে হবে। শরীরে পানি জমার কারণে পায়ের গিরা ও পা ফোলে। নানা কারণে এই পানি জমতে পারে। তবে যদি এর সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ ও প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যাওয়া জড়িত না হয় তবে তাকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়। মাংসপেশির সংকোচনের ফলে এক ধরনের টাটানো ব্যথা বা ঈৎধসঢ়রহম ঢ়ধরহ হয়। এটি সাধারণত ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে হয়। ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবনে এর প্রকোপ কমে যায়। পেটের আকৃতি বেড়ে যাওয়ার কারণে বদহজম বা বুক জ্বালা হয়। বুক জ্বলার পাশাপাশি অনেক সময় পাঁজরেও ব্যথা হতে পারে। 

এই সময় সন্তানকে সুস্থ রাখতে করণীয়

বিশ্রাম : স্বাভাবিক কাজ করবেন, তবে ভারী কাজ যেমন কাপড় কাচা, ভারী জিনিস তোলা ইত্যাদি পরিহার করবেন প্রথম তিন মাস ও শেষ ১ মাস। রাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন ও দিনে ২ ঘণ্টা বিশ্রাম নেবেন।

ভ্রমণ : ঝাঁকি পরিহার করতে বলা হয় প্রথম তিন মাস ও শেষ দেড় মাস। বাসের চেয়ে রেল পথ বা বিমানে ভ্রমণ ভালো।

সহবাস : সহবাসে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না, তবে প্রথম তিন মাস ও শেষ দেড় মাস মানা করা হয়।

টিটি ইনজেকশন : গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ২৪ সপ্তাহে প্রথম ডোজ টিটি টিকা দিতে হবে মাংসপেশিতে। প্রথম ডোজের দেড় মাস পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে হবে। যদি আগে টিটি টিকা নেওয়া থাকে তবে শেষ তিন মাসে একটি বুস্টার ডোজ নিতে হবে।

চেকআপ : গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে চেকআপ করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম ১৬ সপ্তাহের মধ্যে ১ বার, ২৮ সপ্তাহের মধ্যে ১ বার, ৩২ সপ্তাহের মধ্যে ১ বার এবং ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে আর ১ বার ভিজিটে আসা উচিত। এ ছাড়া যে কোনো অসুবিধায় বিলম্ব না করে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

গর্ভ এবং প্রসবকালীন উপযুক্ত সেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ মা এবং সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।




সর্বশেষ খবর