শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
হোসেইন খালেদ

অদম্য মনোবল ছাড়া সাফল্য আসে না

তাসনিয়া লস্কর

অদম্য মনোবল ছাড়া সাফল্য আসে না

পুরান ঢাকায় জম্ম এবং লালবাগ ও ধানমণ্ডিতে বেড়ে ওঠা। ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রেই কাজ করেন। পরে দেশে ফিরে যোগ দেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আনোয়ার গ্রুপে। ২০০৭ সালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং দেশের কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সে দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন এখনো। তিনি উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতা এবং আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেইন খালেদ। তার ব্যবসায়ী জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে ফ্রাইডের সঙ্গে আলাপচারিতায়। জানাচ্ছেন- তাসনিয়া লস্কর

ছবি তুলেছেন- মেহেদি আল হাসান

 

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। স্বাধীনতার ঠিক পাঁচ বছর পরের কথা। ১৯৭৬ সালের ১৮ মার্চ। এক ব্যবসায়ী পরিবারে ৬ সন্তানের পর আবারও ঘর আলো করে জম্ম নিল আরেকটি শিশু। তার দাদা ও বাবা নামকরা ব্যবসায়ী। হিসাব বলছে এই ছেলেটিও ব্যবসায়ী হওয়ার কথা। আদতে তাই হলো। অন্য আট/দশটি পরিবারের ছেলের মতো তিনিও পড়াশোনা শেষ করলেন। যোগ দিলেন পারিবারিক ব্যবসায়। আর সেটিকে টেনে নিতে শুরু করলেন একেবারে নিজের মতো করে। নিজেই হয়ে উঠলেন বড় ব্যবসায়ী। সেই শিশুটিই আজকের শীর্ষ ব্যবসায়ী হোসেইন খালেদ। বর্তমানে ঢাকা চেম্বারস অফ কমার্সের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।

 

পরিবারের ১৮৬ বছরের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়েই ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন হোসেইন খালেদ। জানালেন, ‘বাবাকে কাছ থেকে দেখেছি। ব্যবসা আমাদের পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িত ছিল। আমার বাবাই ছিলেন আমার ব্যবসায়ে আসার পথ-প্রদর্শক। বাবা প্রতি সপ্তাহে আমাকে কারখানায় নিয়ে যেতেন। আমি খুব উপভোগ করতাম। ফলে ব্যবসাবান্ধব একটা পরিবেশের মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা। ফলে জগৎটাকে অস্বীকারের কোনো উপায় ছিল না।

 

বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ছোট থেকেই গড়ে তুলতে। হয়তো সে কারণেই কারখানার পরিবেশের সঙ্গে বারবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কারখানার  শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা, একসঙ্গে বসা, কারখানা কীভাবে চালাতে হয় তাও অনেক ছোটবেলাতেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। নিজের কাজে হয়তো অনেক ব্যস্ত থাকতেন, তবু বাবা ছেলেকে প্রচুর সময় দিতেন। আর ছেলেও প্রতি রাতে অপেক্ষা করতো কখন বাবা ফিরবেন। কারণ বাবা ফিরলেই বাবার সঙ্গে খেলতেন ছোট্ট হোসেইন খালেদ। ঠিক বাবার মতো করেই তিনি এখন তার সন্তানদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে হোসেইন খালেদ ২ পুত্র সন্তানের বাবা। দুই পুত্র এবং তিনি, ফুটবল খেলতেই বেশি পছন্দ করেন। সময় পেলেই ফুটবল নিয়ে নেমে পড়েন। তবে শুধু ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নন তিনি। ক্রিকেট, ব্যাটমিন্টনও খেলেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে তার পছন্দের দল ব্রাজিল। ক্রিকেটে নিজের ভালোবাসার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের খেলা থাকলে মাঠে গিয়ে বা টিভিতে দেখতে পছন্দ করেন। ব্যস্ততার কারণে সব সময় খেলা দেখার সময় না পেলেও খোঁজখবর ঠিকই রাখেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে সদালাপি হোসেইন খালেদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠলেও ছোটবেলায় তিনি উড়োজাহাজ চালানোর স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একদিন আকাশে উড়বেন। মজার ব্যাপার হলো পাইলট হওয়ার যে আকাক্সক্ষা তার মনের ভেতর ছিল সেটি এখনো বহাল তবিয়তেই মনের ভেতর রয়ে গেছে। এখনো সুযোগ এলে পাইলট হতে চান।

হোসেইন খালেদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সান ফ্লাওয়ার কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। তারপর উদয়ন স্কুল। সেখানকার পাঠ চুকিয়ে তিনি ম্যাপল লিফ স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল এবং ‘ও’ লেভেল শেষ করেন। তারপর বিবিএ করতে পাড়ি জমান সুদূর আমেরিকায়। এরপর এমবিএ শেষ করে ফিরে আসেন দেশে। পরের ঘটনা সবার জানা। পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিয়ে নিজেকে তুলে এনেছেন অন্যরকম উচ্চতায়।

পড়াশোনার সময় তো বটেই এখনো ব্যবসায়িক কাজে দেশের বাইরে যেতে হয়। আর তখন তার সবচেয়ে ভালো লাগে দেশের বাইরে নিজের দেশের পণ্য দেখলে। জানালেন- ‘এটা একেবারেই অন্যরকম অনুভ‚তি। দেশের বাইরে নিজের দেশের তৈরি পণ্য দেখলে অন্যরকম ভালোলাগা ছুঁয়ে যায়। বাইরে গিয়ে কোনো পণ্যের গায়ে মেড ইন বাংলাদেশ লেখা দেখলে আমি সেটা কেনার চেষ্টা করি।’

ফ্যাশন নিয়ে আলাদা কোনো ভাবনা তার নেই। যেখানে যেটা মানানসই বা যেটাতে আরাম বোধ করেন সেটা নিয়েই থাকতে পছন্দ করেন। তবে সবকিছুর মধ্যেও ঘড়ি তার বিশেষ পছন্দ। এর বাইরে গাড়ির ব্যাপারেও তার একটু শখ আছে। অনেকে পছন্দের জিনিস কিনে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করলেও তিনি প্রয়োজন না থাকলে অপ্রয়োজনে কোনো জিনিস কিনেন না। তার ব্যবসায়িক উচ্চতা হিসাব করলে অনেক কিছুই মনে হতে পারে। কিন্তু মানুষটি একেবারেই সাদামাঠা জীবনযাপন করেন। বাংলাদেশে জম্মে তিনি নিজের জীবনকে সার্থকই মনে করেন। বললেন- ‘বাংলাদেশে না জম্মালে আমি হোসেইন খালেদ হতে পারতাম না।’

তবে তিনি সব সময় চেষ্টা করেন ব্যবসায়িক জীবন এবং পারিবারিক জীবনকে আলাদা রাখতে। এতে সুবিধাও অনেক।

এরপরও জীবনে অনেক খারাপ মুহূর্ত আসে। তখন? জানালেন- ‘ব্যবসা অনেকটা চাকার মতো। এটা আগাতেও পারে, পেছাতেও পারে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিতে হবে। হোসেইন খালেদ কেবল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীই নন- তিনি বিভিন্ন সমাজসেবা কাজের সঙ্গেও জড়িত। এই সমাজসেবার শিক্ষাটাও তার পরিবার থেকেই পাওয়া। পারিবারিকভাবেই তাদের অনেকগুলো সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়ে বাবার দূরদর্শিতা, মায়ের অন্যান্য শিক্ষা আর নিজের অসাধারণ গুণের কারণেই হোসেইন খালেদ এখন তরুণদের মডেল। সাফল্য আর তরুণদের নিয়ে তার বক্তব্য হলো- ‘অদম্য মনোবল ছাড়া কোনো সাফল্য আসে না।’ আমাদের দেশে প্রচুর তরুণ উদ্যোক্তার দরকার আছে। এই তরুণদের মনোবল হতে হবে আকাশচুম্বী। তাদের মনের ভেতর বিশ্বাস রাখতে হবে- সফল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

হোসেইন খালেদ নিজেও কিন্তু অন্যদের তুলনায় অনেক তরুণ একজন উদ্যোক্তা। তিনি বিশ্বাস করেন এই তরুণদের পিঠে চড়েই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। হয়তো আগামী দশ-পনেরো বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত দেশে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর