শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শীতেও গ্ল্যামারাস

ফেরদৌস আরা

শীতেও গ্ল্যামারাস

প্রকৃতি এখন শীতের চাদর পরিধান করে উষ্ণতার সন্ধানে উম্মুখ দিনাতিপাত করছে। বলাবাহুল্য, শীতকাল হলো সাজসজ্জার জন্য বেশ আরামদায়ক একটা সময়। আর আরামের সময় হলেও শীতের মিষ্টি রোদ ত্বককে পুড়িয়ে দেয় খুব তাড়াতাড়ি। এদিক থেকে শীত হলো সাজের শত্রু! ফলে এ সময়ে ফিটফাট থাকা ভীষণ জরুরি। মেকআপের ব্যাপারে প্রয়োজন বিশেষ সতর্কতা। ত্বকের সজীবতা সবাইকে মুগ্ধ করে। শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে নয়, প্রযোজ্য ছেলেদের ক্ষেত্রেও। সজীব ত্বকের জন্য চাই একটু বাড়তি পরিচর্যা। বিশেষ করে শীতের এ সময়টায়। শীতের সময় কীভাবে তা করবেন সেটা জানাচ্ছেন- ফেরদৌস আরা

 

শীতকাল সাজসজ্জার জন্য আরামদায়ক ঋতু হলেও এ শীতের রোদ ত্বককে পুড়িয়ে দেয় খুব তাড়াতাড়ি। তাই বলা হয় শীত হলো সাজের শত্রু। আর তাই এ সময়ে ত্বকের যত্ন এবং সাজসজ্জায় দরকার বাড়তি সতর্কতা। সে জন্য খুব বেশি কিছু করার দরকার আছে তা কিন্তু নয়। তবে সচেতনতা ও সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই।

 

শীতে সুস্থ ত্বক : শীতে ধুলোবালি বেড়ে যায়।  তাই ত্বক পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করুন। মুখের টি-জোন অর্থাৎ নাক-কপালের অংশ ছাড়া বাকি জায়গা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই ত্বকের ধরন বুঝে বাড়তি যত্ন নিন। ত্বকের যত্নে সাধারণত যে ফেসওয়াশ গরমকালে ব্যবহার করেছেন সেটাই রাখুন, তবে শুধু টি-জোনটুকুর জন্য। বাকি শুষ্ক স্থানগুলো সাধারণ ফেসওয়াশ বা ফোমিং ক্লিনজার দিয়ে ধোবেন। বেশি শুষ্কতা দেখা দিলে ক্রিম ক্লিনজার, ক্লিনজিং মিল্ক অথবা গ্লিসারিন বার ব্যবহার করুন। প্রতিদিন মাইল্ড স্ক্রাব ব্যবহার করতে ভুলবেন না। তৈলাক্ত ত্বকে জেল বা হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যেগুলোতে তেলের পরিমাণ কম, পানির পরিমাণ বেশি।

 

শীতে ত্বকের গ্ল্যামারাস : শীতের শুষ্কতা ত্বক থেকে কেড়ে নেয় আর্দ্রতা। এ সময় ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত। আপনার একটু সতর্কতা ও চেষ্টায় ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রেখে আপনাকে করে তুলবে গ্ল্যামারাস।

০. ময়েশ্চারাইজার : আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে প্রতিদিনের রুটিনে ময়েশ্চারাইজার রাখুন। আপনার ত্বক ফেটে যাওয়ার মতো ক্ষতিও পূরণ করবে একটি সঠিক ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার। ময়েশ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার করলে আবার ত্বকের ক্ষতি হওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারবেন।

০. সানস্ক্রিন : শীতের মিষ্টি রোদকে ভয়ের চেয়ে উপভোগই করে সবাই। অনেকেই এ সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না। এই রোদ ত্বকের ক্ষতি করে। ত্বককে কালো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে চাইলে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এসপিএফ ১৫ বা বেশি মাত্রার এসপিএফ সংবলিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

০. হাইড্রেটিং ক্লিনজার : শীতকালে তাপমাত্রা কমে ত্বক তার আর্দ্রতা হারায়। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া আপনার ত্বক থেকে আর্দ্রতা মুছে ফেলে ত্বককে রুক্ষ করে তোলে। ত্বকের উপরিভাগ ফেটে যায়। ত্বকের ফেটে যাওয়া থেকে সুরক্ষায় হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। ক্লিনজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্বকের আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক রাখতে সক্ষম এমন ক্লিনজার বেছে নিন। এটি আপনার ত্বককে আর্দ্রতা হারানো থেকে রক্ষা করে।

০. টোনার : টোনার ত্বকের ময়লা ভিতর থেকে দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। রুক্ষ আবহাওয়ায় ধুলোবালি অনেক সহজেই ত্বকের উপরিভাগে আটকে গিয়ে ত্বককে কালো করে ফেলে। এ ছাড়াও এই ধুলোবালি ব্রণের সৃষ্টি করে থাকে। তাই শীতকালে টোনার ব্যবহার অনেক জরুরি। টোনার ত্বকের পিএইচের পরিমাণ ঠিক রাখে। যে টোনার অ্যালকোহলমুক্ত সেটি ব্যবহার করুন।

০. গরম পানি নয় : কনকনে শীতে গরম পানিতে গোসলের থেকে আরামের কিছুই নেই। শীতকালে ক্লান্তি দূরীকরণের এই বিশেষ উপায় সব সময় ব্যবহার করবেন না। কারণ গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলে ত্বককে রুক্ষ করে ফেলে। হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। ত্বকের দীপ্তি বজায় থাকবে।

০. ত্বক থেকে মৃতকোষ তুলে ফেলুন : শীতকালে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারানোর ও ত্বককে কালো দেখানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে ত্বকের উপরিভাগের মৃতকোষ। সপ্তাহে অন্তত দুবার ভালো স্ক্রাবার ব্যবহার করে ত্বককে মৃতকোষমুক্ত রাখুন। স্ক্রাবার এই মৃতকোষকে দূর করে। তাই ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে স্ক্রাব করুন।

 

ঘরোয়াভাবে ত্বকের যত্নে

০. কলার পেস্ট শুষ্ক ত্বককে প্রাণবন্ত করে তোলে। মধুও শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী। টমেটোর রসের সঙ্গে একটু মধু পেস্ট করে নিন। অনেক ভালো ফল পাবেন।

০. তৈলাক্ত ত্বকে শসার রস ভালো কাজ করে। শসার রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে লাগান। এতে তেলতেলে ভাব কমে ত্বকের উজ্জ্বলতাও ফিরে আসবে।

০. পেঁপে পেস্ট করে ১০-১৫ মিনিটের জন্য মুখে দিয়ে রাখুন। ত্বকের পোড়া ভাব দূর করবে। গাজর পেস্ট করে ১০ মিনিটের জন্য লাগালে উপকার পাবেন। চন্দন পেস্ট করে লাগান। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে নিন।

০. সাধারণ থেকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য দুধের ক্রিম অথবা টক দই-এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপের পানি মেশান। মুখ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন। কলা পেস্ট করে মধু মিশিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন। ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

০. নারিকেল তেল কিন্তু ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফেরাতে চমৎকার কার্যকরী। মুখে নারিকেল তেল লাগান। সুতির রুমাল গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো মতো নিংড়ে নিন। মুখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। মুখটা মুছে নিয়ে এবার গোলাপ জল লাগিয়ে নিন। সব ধরনের ত্বকেই এটি মানিয়ে যাবে।

শীতে চুলের যত্নে : শীতে অনেকের চুল উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। তাই চুলের যত্নে কিছু টিপস।

০. অলিভ অয়েল ও মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ সময় খুশকিও খুব বেশি হয়। চুল সবসময় পরিষ্কার রাখুন। অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু লাগাতে পারেন।

০. তৈলাক্ত চুলের জন্য, আধা কাপ মেয়নেজ হালকা গরম করে নিন। মাথায় লাগিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট রাখুন। ভালো মতো শ্যাম্পু করুন। চমৎকার সিল্কি ভাব পাবেন।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো কোনো নাইট ক্রিম বা আমন্ড অয়েল লাগাতে পারেন। আমন্ড অয়েল ত্বক ময়েশ্চারাইজের সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলবে।

 

টিপস

শীতের এই সময়ে আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবারের টিপস ফ্রস্টি মেকআপ বা আইসি মেকআপ।

০. প্রথমেই স্কিন টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে ফাউন্ডেশন বেছে নিন আগে। নরম-উজ্জ্বল লুকের জন্য হালকা ফাউন্ডেশনই ভালো।

০. স্কিন টোন যাতে গ্লো করে এজন্য ব্যবহার করুন হাইলাইটিং ক্রিম।

০. মেকআপে ‘উইঙ্গড আইজ’ লুক পেতে চোখের উপরের পাতায় একটু আইলাইনার দিয়ে দিতে পারেন।

০. লিকুইড আইলাইনার দিতে না চাইলে পেন্সিল দিয়ে টেনে তারপর লিকুইড ব্যবহার করতে পারেন।

০. রাতের পার্টিতে ন্যাচরাল কুল-লুককে হাইলাইটস করতে পিংক ব্লাশঅন ব্যবহার করুন। আকর্ষণীয় দেখাবে আপনাকে।

০. ফ্রস্টি লুকে চোখের মেকআপে ল্যাশলাইনের উপরের অংশে পার্লি হোয়াইট আইশ্যাডো লাগাতে হবে। সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে ব্লু শিমারি শ্যাডো এবং বাইরের দিকের অংশের জন্য পার্লি ব্ল্যাক।

০. এ ছাড়া আই শ্যাডোর কালার হিসেবে বেছে নিতে পারেন অন্য কোনো কুল শেড। সাদা, রুপালি, আইস ব্লু বা গোলাপি মানাবে।

০. পেন্সিল লাইনার দিয়ে আইল্যাশের ঠিক উপরে রেখা টানলে চোখ আরও উজ্জ্ব্ল দেখাবে। এরপর ব্যবহার করুন মাসকারা।

০. মেকআপ নিয়ে পরীক্ষা করতে চাইলে চিকবোনে ক্রিমের জায়গায় আইশ্যাডো দিয়েও হাইলাইট করা যেতে পারে।

. সাধারণত এই মেকআপের সঙ্গে গোলাপি বেশি মানায়, সঙ্গে লাগানো যেতে পারে সিলভার গ্লস।

০. ফ্রস্টি মেকআপের সঙ্গে একটু ডার্ক টাইপের ড্রেসআপ রাতের পার্টির জন্য বেশ মানানসই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর