শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গহনা বৃত্তান্ত

সবারই ইচ্ছা থাকে নিজের বিয়েটাকে অন্য আট-দশজনের চেয়ে আলাদাভাবে উদযাপনের। আর সেজন্য সাজসজ্জা কিংবা আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির কোনো অন্ত থাকে না। পুরুষের যেমন যাবতীয় প্রস্তুতি রাখতে হয়, তেমনি নারীদেরও সাজানোর জন্য প্রয়োজন হয় নানা অলঙ্কারের। সেসব অলঙ্কার ছাড়া বিয়ে যেন কল্পনাই করা যায় না। জানাচ্ছেন— মনীষা আক্তার

গহনা বৃত্তান্ত

বিয়ের গহনা ছাড়া বিয়ে অকল্পনীয়। কনের সাজ নিয়ে যত কথা উঠুক— এটি বাদ দেবে, সাধ্য কার? যদিও গহনার বাক্স আর আগের মতো নেই। অলঙ্কার ছাড়া যেন নববধূ কল্পনাই করা যায় না। কত্তো রকমের অলঙ্কার।

একসময় বিয়ের কনের ওজনের সমপরিমাণ গহনা দিয়ে বধূবরণ করা হতো। আর এই ঐতিহ্য চলে আসত প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। কত রকমের বাহারি গহনা! সীতাহার, পাটিহার, কণ্ঠহার, পুষ্পহার, সাতনরি হার, মাদুলি, টিকলি, টায়রা, ঝাঁপটা, কোমরের বিছা, বাজু, মানতাশা, গোলাপবালা, চূড়, রতনচূড়, হাঁসুলি, নূপুর, পায়ের খাড়ু, ঝুমকা, কানপাশা, কানবালা, নথ, টিকলি, আংটি, তাজ, খোঁপার কাঁটা আরও কত কী! কনে সেজে উঠত বাহারি অলঙ্কারে। তখনকার সময় মানা হতো সংস্কার।

এখন সময় বদলেছে। বদলে গেছে সাজসজ্জার অন্যতম আকর্ষণ গহনাও। গহনার ডিজাইনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। পরার ধরনও বদলেছে অনেকটাই। অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে এখন বহু পরিবারই ঝুঁকে পড়েছে সোনার প্রলেপ দেওয়া রুপা কিংবা গোল্ড প্লেটেড গহনায়। আবার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হীরা, কুন্দন, দৃষ্টিনন্দন মুক্তা কিংবা মহামূল্যবান ধাতু প্লাটিনামও বিয়ের আসরের ঔজ্জ্বল্য রক্ষা করছে। আর রং পরিবর্তনের মেলায় সোনালি রঙের বদলে গহনায় যোগ হয়েছে রঙবেরঙের নানা পাথর। পোশাক কিংবা বিয়ের থিমের সঙ্গে মিলিয়ে এসব পরছেন অনেকেই। ফ্যাশন, ফিউশন যা-ই বলি না কেন, এখনো কনের অলঙ্কার ঘিরে আলোচনায় বিয়েবাড়ি।

 

সোনার গহনা

 

অনেকেই বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠান মাত্রই গহনার প্রদর্শনী। কেননা এতে প্রকাশ পায় আভিজাত্য, রুচি, যুগের চাহিদা আর আর্থিক সামর্থ্য। এ নিয়ে চলে নানা এক্সপেরিমেন্ট, নানা আয়োজন। বিয়ের অলঙ্কারের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আসে সোনার গহনার নাম। সোনার গহনার ডিজাইনেও এসেছে পরিবর্তন। পুঁতির ব্যবহার থাকছে, থাকছে মুক্তার ব্যবহারও। এক্ষেত্রে বিয়ের পোশাকের সঙ্গে মানানসই রঙের স্টোন ও পুঁতির ব্যবহারটাই বেশি লক্ষণীয়। কালারের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য এসেছে এখনকার সোনায়। হলদে ও সাদা সোনার পাশাপাশি রোজ গোল্ড বা গোলাপি সোনার ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে প্রচলিত গহনায়। অনেকে আবার পোশাকের রঙের সঙ্গে পারফেক্ট ম্যাচিংয়ে মিনা করিয়েও নিচ্ছেন বিয়ের গহনায়।

 

 

হীরার গহনা

 

এই সময়ে এসে কেবল সোনার গহনাই নয়, হীরার গহনাও দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকের কাছে তো এটি আভিজাত্যের প্রতীক। তাই সোনার গহনার পাশাপাশি হীরার গহনার প্রতি আজকাল তরুণীদের একটা বিশেষ ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। হীরার গহনার মধ্যে ছোট ছোট নকশার গহনাগুলোই ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হীরার আংটি, নাকফুল আর কানের দুলের চাহিদাই বেশি।

 

রুপার গহনা

 

বিয়েতে রুপার গহনা খুব বেশি একটা পরতে দেখা যায় না। তবে আজকাল কিছু কিছু মেয়ে নিজের বিয়েটাকে একটু ব্যতিক্রমী করতে রুপার গহনা পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন।

 

গোল্ডপ্লেট

 

সোনার গহনার সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়েই বাড়ছে গোল্ডপ্লেটেড গহনার চাহিদা। কারণ সোনার দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় অনেকেই চাহিদামতো সেগুলো কিনতে পারেন না। সেদিক থেকে গোল্ডপ্লেটেড গহনাগুলো চাহিদামতো কেনা যাচ্ছে অনেক কম খরচেই। আর এগুলো দেখতে অনেকটা সোনার গহনার মতো মনে হওয়ায় অনেকে এগুলো পরেই সেরে নিচ্ছেন বিয়ের কাজটি। গোল্ডপ্লেটেড গহনাগুলো গোল্ড কালার না করে আপনি এন্টিক কালার কিংবা কপার কালারেরও করে নিতে পারেন। পছন্দমতো ডিজাইনের গহনা রুপা বা অন্য কোনো মেটাল দিয়ে বানিয়ে তাতে সোনার প্রলেপ করে নিয়ে সহজেই যে কোনো অনুষ্ঠানে পরা যায়। গোল্ড প্লেটেড গহনা এখন বিয়ের মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর