ছেলেরা ফ্যাশনে এখন বেশ এক্সপেরিমেন্টাল। সেমি কিংবা ফুল ফরমাল যাই হোক না কেন, অফিশিয়াল আর পার্টি ফাংশনে এসেনশিয়াল। সঙ্গে জুড়ে নিন মানানসই এক্সেসরিজ। ফরমাল টাইমও হয়ে উঠবে রঙিন।
ক্যাম্পাসের গণ্ডি পেরিয়ে ছেলেটি এখন পা দিয়েছে অফিশিয়াল জীবনে। জিন্স, টি-শার্টের ক্যাজুয়াল ছেড়ে এখন পুরোপুরি ফরমাল। চোখে দামি গগজ আর রিস্টব্র্যান্ডের যুতসই ফ্যাশনে এখন কম দেখা মেলে। ফরমালেও পার করতে হয় গোটা দিনটি। তাই বলে কি ফরমালে ট্রেন্ডি হওয়া যায় না! ছেলেদের পোশাকের দুনিয়ায় ফরমাল পোশাকও এখন ভীষণ রকম ট্রেন্ডি। ফ্যাশনের স্টাইলিংয়ের সঙ্গে জুড়ে নিন মানানসই এক্সেসরিজ।
ক্যাম্পাসের রঙিন জীবনগুলোকে ছাপিয়ে অনেকেই কম-বেশি পেশাজীবী। পেশাদারিত্বের খাতিরে ক্যাজুয়ালকে পেছনে ফেলে ফরমাল হওয়ার চেষ্টায় ব্রত অনেকেই। দামি গগজ আর রিস্টব্র্যান্ডের যুতসই ক্যাজুয়াল ফ্যাশনে এখন আর তেমন দেখা যায় না। তাই বলে তো ফ্যাশন থেমে নেই। ফ্যাশন দুনিয়ায় ফরমালও এখন ভীষণভাবে ট্রেন্ডি ইন। প্রতিবছরই তাতে নতুন কায়দা যোগ হচ্ছে। ফরমালের সেই সাবেকিয়ানার সঙ্গে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন ট্রেন্ড। স্টাইলিংয়ে ডিভার ভাব আনতে ব্যবহার করছে রকমফের এক্সেসরিজ।
এ প্রসঙ্গে ইজির ফ্যাশন ডিজাইনার তৌহিদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকাল ছেলেদের অফিশিয়াল ফ্যাশনে কত অপশন। যারা কোনো দিন ফরমালের ধার ধারেননি তারাও এখন পেশাদারিত্বের খাতিরে বেছে নিচ্ছেন ফরমাল পোশাক। অনেকে পুরোদস্তুর ফরমাল পোশাকে না মজে সেমি ফরমালেও অফিস বা পার্টি মেইনটেন করছেন। তাতে অফিসও সারা হচ্ছে, ফ্যাশনেও আসছে নতুনত্ব। তাতে যোগ হচ্ছে ফ্যাশনেবল এক্সেসরিজও।’
প্রথম কয়েক দিন অফিসের পোশাক নিয়ে তেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাই ভালো। প্রথমে অফিসের পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করুন। খুব ফরমাল বা ক্যাজুয়াল কোনোটাই না, বরং মাঝামাঝি চলারই চেষ্টা করুন। এখানে কাজের ক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। এতে অবশ্য একটু সুবিধাও আছে। অফিশিয়াল এবং পার্টি ফাংশন দুটোই সেরে ওঠা সম্ভব। আগে ছেলেদের মধ্যে জামাকাপড় নিয়ে তেমন মাথাব্যথা দেখা না গেলেও এখন তারাও বেশ সচেতন হয়ে উঠেছে। সব সময়ই ট্রেন্ডের সঙ্গে হাল ফ্যাশনের স্টাইলিং আর সিল্যুয়েট মিলিয়ে নিজেদের সাজিয়ে তুলছে। এখন আর তারা তথাকথিত ‘ছেলেদের রং’ যেমন নীল, সবুজ, সাদা, কালোতেই আর নিজেদের আটকে রাখছে না। বিভিন্ন রঙে রঙিন করে তুলছে পেশাদারি জীবন।
ফরমাল পোশাক
এটা সম্পূর্ণ অফিসের পোশাক। আসল বিষয়টা হলো সম্পূর্ণ ব্লেজার সেট থাকতে হবে। আবার ব্লেজার ছাড়াও চলে। যেখানে শার্টে বেশি চড়া রং না পড়ে নরম কোনো রং বেছে নেওয়া উচিত। সাদা, হালকা নীল, ক্রিম রঙা ইত্যাদি রং থাকতে পারে শার্টে। ফুলহাতা শার্টের ওপর টাই পরতে হবে। প্যান্ট হতে পারে কালো, অ্যাশ, লাইট ব্লু, অফ হোয়াইট এবং ক্রিম রং-এর। তবে অফিসের পোশাক যতই ঢিলেঢালা হোক, খুব ঘরোয়া ধরনের পোশাক দিয়ে অফিস না করাই ভালো। পোশাকে রুচির ভাবটা তো থাকতে হবে। অক্সফোর্ড জুতা এই পোশাকের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ঘড়ি পরলে সেটা চেইন বা বেল্ট যে কোনোটাই হতে পারে। তবে ডায়ালটা হতে হবে ছিমছাম। কোমরের বেল্টটাও হবে ফরমাল। অন্যথায় বেমানান লাগবে।
সেমি ফরমাল পোশাক
এটা সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতের পোশাক। অনেক ছেলে এখন এই পোশাককে রাতের অফিস পার্টিতে দেদার ব্যবহার করে আসছে। সেমি ফরমালের কোট যেটা শার্টের ওপর পরা হয়, তার সামনের অংশের ল্যাপেলে কিছুটা সিল্কের মতো কাপড় ব্যবহার করা হয়। প্যান্টেও দুই পাশে একই রঙের স্ট্রাইপ থাকতে পারে। কোমরে কোমরবন্ধ পরা হয় ব্ল্যাক টাই বা সেমি ফরমাল পোশাকে। পায়ে প্যাটেন্ট লেদারের অক্সফাম, অপেরা পাম্প শু যাই পরা হোক না কেন, সেটা হবে চকচকে। অফিসের পোশাক যেমনই হোক, পোশাকের কাটছাঁট এবং ফিটিং-এ টুকটাক জ্ঞান থাকাও জরুরি। খুব কম ছেলেরই ফ্যাশনের হালচাল সম্পর্কে জানা। তাই ফরমাল বা সেমি ফরমাল যে কোনো পোশাকই কেনার আগে পোশাকের সেলাই, রং, ট্রেন্ড কী, সেটা মাথায় রেখে পোশাক বাছাই করা উচিত। প্রয়োজনে ডিজাইনারের পরামর্শ নিতে পারেন।
অনেকেই প্রথম দেখায় খেয়াল করে পায়ের দিকে। এমনটি বেশি দেখা যায় ইন্টারভিউ বোর্ডে। তাই চেহারা সুন্দর রাখার পাশাপাশি জুতাও চকচকে রাখা দরকার। আপনি হয়তো একটা ভাইভা বোর্ডে দামি স্যুটের সঙ্গে সাদামাটা জুতা বেছে নিলেন, পুরো সাজটাই ভেস্তে যাবে। সংগ্রহ থেকে জুতা পরার আগে সেটা ঠিকমতো পলিশ করে নিন। সম্ভব হলে ভালো মানের জুতা সংগ্রহে রাখুন। কারণ, এক জোড়া জুতা স্টাইলের অন্য অনেক দিকের খুঁত ঢেকে দিতে পারে।
শুধু পোশাক আর জুতা নয়, ফুলটাইম ফরমালকে আরও রঙিন করে তুলতে পারে রকমফের এক্সেসরিজ। ঘুরেফিরে এক পোশাক যদি বারবারও পরা হয় তাতে কোনো ক্ষতি নেই। সেটা শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলবে। তাই বলে আপনি যদি আজকে পরা পোশাকটা না ধুয়ে আবার পরদিন পরেন, তাহলে আপনার স্টাইল মার খেয়ে যাবে। পোশাকগুলো পরিষ্কারের পর শুকিয়ে আয়রন মাস্ট। কেননা, ফরমাল পোশাক আয়রন ছাড়া একেবারেই বেমানান। এ ছাড়া কোন শার্টের সঙ্গে কোন প্যান্ট বা জুতাটা কেমন পরছেন, সেটাও মাথায় রাখুন। সঙ্গে রোদচশমা, ঘড়ি, বেল্ট, টাই বা সাসপেন্ডার (পোশাকের সঙ্গে ব্যবহূত বিশেষ ধরনের বেল্ট) কোথায়, কীভাবে ব্যবহার করছেন, তার ওপর আপনার সৌন্দর্যের সম্পর্ক গভীর।
বর্তমানে ছেলেরা অনেক বেশি এক্সপেরিমেন্টাল। পেশার খাতিরে নিজেদের করপোরেট লুকের পাশাপাশি নিজেকে করে তুলছে ফ্যাশনেবল। তাদের ভাষ্য, ফরমাল, অফিশিয়াল ও পার্টি; দুটোই এসেনশিয়াল। কেননা, অফিশিয়াল পোশাক ফরমাল তো হবেই, তবে এক ঘেয়েমি যেন না হয়।