শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পোশাকে বিজয়

পোশাকে বিজয়

♦ মডেল : ফেরদৌসী শম্পা ♦ ছবি : রাফিয়া আহমেদ ♦ পোশাক : কে-ক্রাফ্ট ♦ মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা বুকে ধারণ করতে পারাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আর তাই জাতীয় দিবসগুলো এলে পোশাকে প্রাধান্য পায় পতাকার লাল-সবুজ। আসছে বিজয় দিবস। এই দিনের পোশাক ভাবনা নিয়ে তরুণ সমাজের চিন্তার যেন অন্ত নেই। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই। নিজেদের আয়োজনে রেখেছে লাল-সবুজের সমাহার। আজকের আয়োজনে পোশাকে বিজয় ভাবনা নিয়ে  বিস্তারিত লিখেছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

চলছে বিজয়ের মাস। বাঙালির জন্য পরম এক অর্জনের মাস এটি। সব নিপীড়ন ভুলে বিজয়োল্লাসের মাস হিসেবেও পরিণত হয়েছে এ মাস। তাইতো বিজয় দিবস উপলক্ষে আমাদের মাঝে চলে উৎসবের আমেজ। বাঙালি সমাজে দেখা যায় বিশেষ সাজ পোশাকের আয়োজন। তাছাড়া জাতীয় চেতনাকে তুলে ধরার  ক্ষেত্রে দিবসভিত্তিক পোশাক পরিধান এখন অন্যতম একটি মাধ্যম। বিগত কয়েক বছর ধরে এ কাজটি খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে করে যাচ্ছে আমাদের ফ্যাশন হাউসগুলো। মূলত ক্রেতার চাহিদাকে মাথায় রেখে তাদের এই আয়োজন যা আমাদের জীবনাচরণে এমন পরিবর্তনের সূচনা করেছে। আমাদের জাতীয় জীবনে বইছে নতুন এক ধারা।

সাজসজ্জায় এগিয়ে আমাদের তরুণীরা। সাজ পোশাকের ভিতর দিয়ে বিজয় দিবসে নিজেদের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবিকেই তুলে ধরার চেষ্টা করে তারা। বিজয় দিবস আমাদের কাছে নিঃসন্দেহে গর্বের আর অহংকারের। এদিনে বাঙালির পোশাকে উঠে আসে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রং। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট, ফতুয়াতে ইতিহাস-ঐতিহ্য, দেশীয় চেতনার ছোঁয়ায় নিজেদের রাঙিয়ে তোলেন তরুণ-তরুণী, বয়োবৃদ্ধ থেকে শিশু পর্যন্ত।

বাঙালিয়ানা মানেই তো শাড়ি। তাই শাড়িতে সেজে উঠতে চান আমাদের নারীরা। সঙ্গী হয় নানা রকম সুতির শাড়ি। বিশেষ করে তাঁতের শাড়ি, টাঙ্গাইল ও জামদানি শাড়িগুলো বেশি প্রাধান্য পায়। আমাদের বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্গে এ ধরনের শাড়ি মানিয়েও যায় বেশ। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর তৈরি লাল কিংবা সবুজ অথবা এ দুটো রঙের মিশ্রণে তৈরি শাড়ি এ দিবসের জন্য বেছে নেন সবাই। শাড়িতে নকশা হিসেবে প্রাধান্য পায় ব্লক ও প্রিন্ট। এ ধরনের শাড়িও সব বয়সী নারীর বেশ ভালো মানিয়ে যায়। যারা আরেকটু গর্জিয়াস শাড়ি পরতে চান, তাদের জন্য কাপড়ে বৈচিত্র্য আনতে ব্লক ও প্রিন্টের শাড়িতে কাঁথা, চুমকি ও গ্লাসের কাজ করা হয়। শাড়ি কিংবা তসর সিল্ক এই কাতারে জায়গা পেয়ে যায়। এ ধরনের শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজেও থাকে বাহারি রঙের ছোঁয়া। তার সঙ্গে যোগ হয় নতুন ডিজাইন।

 

সময়টি শীতকাল হওয়ায় ফ্যাশনে কিছু বৈচিত্র্য রাখা হয়। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন লম্বা হাতার ব্লাউজ। অথবা যে কোনো একটি রঙের শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে নিতে সঙ্গী হতে পারে পছন্দের লাল-সবুজ শাল। যারা শাড়ি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না তারা সালোয়ার-কামিজ অথবা পছন্দের ডিজাইনের লম্বা ধরনের কুর্তা পরে নিতে পারেন। কামিজ বা কুর্তার সঙ্গেও পছন্দসই একটি শাল। শাড়ির পাশাপাশি দিবসটিতে সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়ার ফ্যাশনও কম যায় না। যারা শাড়ি পরতে চান না, তারা সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, টপস, যে কোনো টপসের সঙ্গে লাল-সবুজ সিঙ্গেল ওড়না, ফতুয়া জিন্স পরতে পারেন অনায়াসে।

বাঙালি নারীর সাজ গয়না ছাড়া যেন অপূর্ণ। শাড়ির সঙ্গে লাল-সবুজ হাত ভরা রেশমি কাচের চুড়ি অথবা বিভিন্ন মেটালের চুড়ি পরা যেতে পারে। গলা, কানে গয়না হিসেবে বিডস, পার্ল, মেটালের গয়না দিবসভিত্তিক সাজপোশাকে বেশ মানিয়ে যায়। এ ধরনের গয়নাতে নান্দনিকতার ছোঁয়ার সঙ্গে থাকে দেশীয় উপাদানের সংমিশ্রণ। তাছাড়া মেটালের গয়না প্রস্তুতকারকরা প্রতিবছর বাজারে নতুন নতুন গয়না নিয়ে আসছে। মাটির গয়না, পাথরের সেট, পুটি, বিডস ইত্যাদি থাকে এ ধরনের গয়নায়। আপনার সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন একটি গয়না বেছে নিতে পারেন আপনি। 

এবার আসা যাক মেকআপ আর চুলের সাজসজ্জায়। শাড়ির সঙ্গে ভারী সাজ ভালোই লাগবে। তাছাড়া এখন সময়টা শীতকাল। এ সময় সাজ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। কুর্তি, টপসের সঙ্গে  হালকা সাজই সুন্দর। তবে সাজগোজ শুরু করার প্রথমে মুখে পাঁচ মিনিট ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ত্বক নরম করে নিন। তারপর লিকুইড ফাউন্ডেশন লাগিয়ে ভালোমতো ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার হালকা ফেস পাউডার লাগান, তার ওপর পিচ কিংবা গোলাপি ব্লাশন বুলিয়ে নিন। ব্যস, মুখের বেজ মেকআপ শেষ। দিনভর সাজ থাকবে বলেই চোখে পানিরোধক কাজল ভালো হবে। শাড়ি বা পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে এবার শ্যাডো পরে নিন। পাপড়িতে মাশকারা দিলে চোখ সুন্দর দেখাবে। ঠোঁটের লিপস্টিকে রং নির্বাচন করুন গোলাপি, ব্রাউন, লাল, কমলা রঙের শেড। সবশেষে শাড়ির পাড়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে টিপ পরে নিন। আর রাতের সাজে স্মোকি চোখের সাজই মেকাপে পরিপূর্ণতা আনবে। চোখের কাজল রেখা ঘেঁষে ঘন করে আইলাইনার লাগান। নিচের পাতার ভিতরের অংশে ঘন কাজল দিয়ে নিচে বাদামি শ্যাডো টানুন। পাপড়িতে ঘন করে মাশকারা দিন। আর রাতে চোখে যে কোনো শ্যাডো পরতে পারেন।  সে ক্ষেত্রে হাইলাইট হতে পারে সোনালি, বাদামি, রুপালি, পার্ল ও তামাটে রং। চোখের কোণে একটু কালো শ্যাডো মিশিয়ে নিলেই চোখের সাজের সঙ্গে পরিপূর্ণতা পাবে রাতের সাজ।

এবার নজর দিতে হবে চুল সাজে। শ্যাম্পু করে কন্ডিশনিং করে নিন। খোলা চুলে ওয়েভ কার্ল, স্পাইরাল করে নিতে পারেন। যারা চুল আটকে রাখতে চান তারা চুলে বেণি করতে পারেন, পনিটেল, ফ্রেঞ্চ বেণি করে নিলেও ভালো লাগবে। শাড়ি পরলে সঙ্গে হাত খোঁপা করে নিতে পারেন। খোঁপায় গুঁজে নিতে পারেন লাল একটা গোলাপ, অথবা হরেক রকম চুলের কাঁটা গুঁজে খোঁপায় তুলুন নতুন ছন্দ। সব শেষে সুগন্ধির ছোঁয়া আপনাকে সতেজ ও ফুরফুরে রাখবে সারা দিন।

বিজয় দিবসের রং বলতে মূলত লাল-সবুজকেই বোঝায়। তাই বিজয় দিবসের ফ্যাশনে প্রাধান্য পায় লাল আর সবুজ রং দুটি। আর কোনো রঙের ছোঁয়া থাকুক বা না থাকুক এই লাল-সবুজ রং ছাড়া বিজয় দিবসের ফ্যাশন একেবারেই বেমানান। তাই দিনটিতে সাজুন নিজের মতো করে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট, কুর্তা, ফতুয়া, যেটাই পরুন না কেন লাল-সবুজকে প্রাধান্য দিন।

আজকাল যে কোনো বড় ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে  ছোটখাটো দোকান সবগুলোতেই বিজয় দিবসের জন্য ছেলেদের নানা পোশাক পাওয়া যায়। টি-শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবিতে থাকে লাল-সবুজ রঙের ছোঁয়া, বিজয় দিবসের নানা ডিজাইন। পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন নিজের পোশাকটি। সঙ্গে রাখতে পারেন লাল-সবুজ শাল।

এই দিনে পিছিয়ে থাকবে না শিশুরা। বিজয়ের উল্লাসে সবচাইতে বেশি উল্লসিত হয় শিশুরা। বড়দের হাত ধরে স্মৃতিসৌধে যাওয়াটা তাদের কাছে অনেক আনন্দের। আর তাই এই দিনে তাদের জন্য তো একটি পোশাক চাই-ই। শিশুদের ফ্যাশনে আধিক্য পায় লালের ব্যবহার। নিজের সন্তানকে রাঙিয়ে তুলুন লাল বা লাল-সবুজের মিশ্রণের ভালোবাসায়। এর সঙ্গে হাতে দিতে পারেন আমাদের পতাকার প্রতিকৃতি। ছোট হাতে বেশ সুন্দর মানিয়ে যাবে। এছাড়া বিজয় দিবসে কিছু শিল্পী গালে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পতাকা এঁকে দেন সম্মানীর বিনিময়ে। ইচ্ছা করলে একটি পতাকাও আঁকিয়ে নিতে পারেন নিজের ও সোনামণির গালে। এই দিনে হকারদের কাছে মিলবে নানা রকম লাল-সবুজের রিজব্যান্ড ও হেডব্যান্ড। এগুলো কিনে দিয়েও শিশুদের আনন্দকে আরও কয়েকগুণ বাড়ানো যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর