শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রুক্ষ দিনে স্নিগ্ধতা

রুক্ষ দিনে স্নিগ্ধতা

♦ মডেল : জাহান ইমু ♦ ছবি : রাহুল চৌধুরী ♦ লেখা : ফেরদৌস আরা

হিমেল হাওয়ার দিনগুলোতে কমবেশি সবারই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। কনকনে হিমবাহে অনেকেরই ত্বক ফেটে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তবে যাদের ত্বক এমনিতেই একটু শুষ্ক ও রুক্ষ প্রকৃতির, অন্যদের চেয়ে তাদের সমস্যা একটু বেশিই হয় এ সময়টাতে। ফলে সাজের ক্ষেত্রে পোহাতে হয় নানা ঝক্কি। তাই শীত মৌসুমে প্রয়োজন বিশেষ সতর্কতা।

 

রুক্ষ দিনে ত্বক ভালো রাখার প্রথম কথা হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। তবেই ত্বক থাকবে সুন্দর ও সজীব। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে বেড়ে যায় রাস্তার ধুলোবালি। ফলত শীতের মৌসুমে বাইরে থেকে ঘরে ফিরলে পরিলক্ষিত হয় ত্বক। বাইরের ধুলোবালি আর বৈরী আবহাওয়ায় রুক্ষ ত্বককে করে তোলে শুষ্ক। ফলে ত্বকে কোনো প্রাণ থাকে না। তখন ত্বক প্রাণহীন দেখায়। এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। কারণ, ত্বকের স্নিগ্ধতার মূল রহস্য হলো পানি এবং ভিটামিন-ই-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।

 

এ ছাড়া নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। তবে শুরুতে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। শীতে মুখের টি-জোন অর্থাৎ নাক-কপালের অংশ ছাড়া বাকি জায়গা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এই শুষ্কতা থেকে সুরক্ষায় ভালো মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। কেননা, ঋতুভেদে ভালো মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার না করলে ত্বক প্রাকৃতিক তেল হারায়। অতিরিক্ত রুক্ষতা সারাতে ক্রিম ক্লিনজার, ক্লিনজিং মিল্ক অথবা গ্লিসারিন বার ব্যবহার করতে পারেন। নিয়ম করে মাইল্ড স্ক্রাব ব্যবহার করতে ভুলবেন না। তৈলাক্ত ত্বকে জেল বা লাইট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। এগুলোতে তেলের পরিমাণ কম হয় এবং পানির পরিমাণ থাকে বেশি।

 

এ সময় সানবার্ন খুব বেশি হয় এবং তা কেবল মুখে নয়, পিঠে ও হাত-পায়েও হয়। তাই সব সময় ছাতা ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে ব্যাগে সব সময়ের জন্য একটা ফেসওয়াশ রাখুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন বিউটি ক্লিনিক কিংবা পারলারে গিয়ে ময়েশ্চারাইজার ফেসিয়াল করাতে পারেন। এবং কসমোলজিস্টদের পরামর্শে ঘরোয়া রূপরুটিন তৈরি করে নিন। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এ সময় অনেকের ত্বকে দাগ ও রিঙ্কেল দেখা যায়। এসব রোধ করতে, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। শীতকালীন শাকসবজি খেতে পারেন বেশি বেশি। এ ছাড়া মাছ এবং ফলমূলও খেতে হবে।

 

এ সময় ত্বকে অনেক সময় ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়। এগুলো নাকের পাশে ও নাকে দেখা যায়। এই ধরনের গর্ত বন্ধ করতে হলে টমেটোর রস, মুলতানি মাটি, ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের শুষ্ক ত্বক, তারা এ সময় নিয়মিত গিসারিন সাবান দিয়ে গোসল করতে ভুলবেন না। গোসলের পর ভেজা শরীরে ভ্যাসলিন, লোশন বা এ জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকে আর্দ্রভাব বজায় থাকবে। ত্বকের আরেকটি সমস্যা হলো বয়সে ছাপ কিংবা চামড়া ঝুলে পড়া। এমন যেন না ঘটে তাই,  ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি অতি জরুরি। এক্ষেত্রে ত্বকে এসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এতে মুখের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। গ্রিন টি পান করলেও এমন সমস্যার সমাধান হবে।

 

পাশাপাশি হাত, পা, গলা, ঘাড়সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও একইভাবে যত্ন নেওয়া উচিত। ধুলাবালি থেকে চুল রক্ষা করতে মাথায় শীত  মৌসুমে স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন নারিকেল তেল ও জলপাইয়ের তেল একসঙ্গে গরম করে চুলে ম্যাসাজ করে  শ্যাম্পু করলে চুল হবে ঝরঝরে। এ ছাড়া চুলের বাড়তি যত্নে টক দই, কলা, পেঁপে দিয়ে ঘরে তৈরি প্যাক ব্যবহার করলে চুল ভালো থাকে।

 

সম্ভব হলে চিনা বাদাম পেস্ট, টক দই,  লেবুর খোসা ও পুদিনাপাতা দিয়ে প্যাক  তৈরি করে মুখে লাগানো যেতে পারে। এটা অনেক উপযোগী এ সময়ে। তা ছাড়া গাজর বেন্ড, আমন্ড অয়েল এবং মধু  পেস্ট করে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া পাকা টমেটো দিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। বাজারে ক্যালামাইলিন লোশন পাওয়া যায়। শীতে সানবার্ন থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে এই লোশন কার্যকর। ঠোঁটের মোহনীয়তা লেবু ও মধু মিশিয়ে সকাল ও বিকালে ম্যাসাজ করতে পারেন। লিপস্টিক হিসেবে দিনে সানপ্রোটেকশনসহ লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই হাত-পা এবং মুখে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর