বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পোলট্রিশিল্পের সমস্যা: সম্ভাবনা ও করণীয়

পোলট্রিশিল্পের সমস্যা: সম্ভাবনা ও করণীয়

বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময়ী কৃষিভিত্তিক শিল্প পোলট্রি। দেশের আমিষ চাহিদার বড় একটা অংশ পূরণ হচ্ছে এই খাত থেকে। ইতিমধ্যে পোলট্রি খাতে বিনিয়োগ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ৫৫ হাজার কোটি  টাকার অধিক। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত হারে  বিনিয়োগ বাড়ছে না।

গত ২৩ এপ্রিল ২০১৬ শনিবার ইডব্লিউএমজিএল কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজন করে  ‘পোলট্রিশিল্পের সমস্যা : সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। বৈঠকে অংশ নেন সাবেক সচিব, পুষ্টিবিদ, শিক্ষক, গবেষক, সরকারি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ, প্রাণীবিদসহ পোলট্রি খাতের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের।

বৈঠকের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন : শামীম আহমেদ ও আলী রিয়াজ

ছবি তুলেছেন : জয়ীতা রায়

 

 

দেশীয় শিল্পসহায়ক নীতিমালা করতে হবে

—আনোয়ার ফারুক

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, আমাদের সফল খাত হিসেবে অন্যতম প্রধান শিল্প কৃষিখাত। বর্তমানে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে আমরা চতুর্থ। প্রতিবছর ৩৫ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনেও আমাদের সফলতা অনেক। সফলতার আরেক খাত হচ্ছে আমাদের পোলট্রিশিল্প। ফাস্টফুড প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রিয় হওয়ায় পোলট্রিশিল্পও অনেক এগিয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য গ্রহণে পরিবর্তন এসেছে। এখন গ্রামের সবাই প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে তিন-চার দিন মাংস খায়। সরকারের এই খাতে আরও সহযোগিতা দেওয়া উচিত। কর আরোপের ক্ষেত্রে আরও সহনীয় হতে হবে। আমদানিনির্ভর শিল্পে সুবিধা না দিয়ে দেশীয় শিল্পসহায়ক নীতিমালা করতে হবে। ২০০৭ সালে বার্ড ফ্লু আক্রমণে দেশের পোলট্রি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হয়েছে। আমরা বার্ড ফ্লু’র আক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারিনি। সেটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু যেভাবে নজর দেওয়া দরকার সেখানে অনেক ঘাটতি আছে। এই খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারাই মূলচালিকাশক্তি। পোলট্রিশিল্প যে পর্যায়ে আছে এখন উচিত যৌথভাবে পরিকল্পনা করা। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের পরিকল্পনা নিতে হবে। কর কীভাবে সহনীয় রাখা যায় সে বিষয়টি ভাবতে হবে। পোলট্রি খাতে উন্নয়নে দেশের স্বার্থে সরকারের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।

 

পোলট্রি খাতের উন্নয়নে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে

—কালিপদ হালদার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর কমিশন সদস্য কালিপদ হালদার বলেন, উদ্যোক্তারাই এই খাতকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়াই এই পোলট্রি খাত আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে অবিশ্বাস্যভাবে ২.৪ শতাংশ অবদান রাখছে। কারও সহযোগিতা ছাড়া যে খাত গড়ে ওঠে তার স্থায়িত্ব অনেক বেশি হয়। পোলট্রিশিল্পও ঠিকে থাকবে। এনবিআর এই খাতের উন্নয়নে যা কিছু করা প্রয়োজন সবই করেছে। ভবিষ্যতেও সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। বিভিন্ন শিল্পে সুবিধা দিয়ে অনেক সময় তার অপব্যবহার হয়। ভ্যাকসিন আমদানিতে বিশেষ সুবিধা আছে। তবে অনেক সময় দেখা যায় ভ্যাকসিনের কথা বলে অননুমোদিত ওষুধ আমদানি করা হয়। এছাড়া পোলট্রিশিল্পের কথা বলে এনে অন্য খাতে ব্যবহার বা বাইরে বিক্রি করা হয়। এছাড়া কর সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের স্বার্থ জড়িত থাকে। সেটিও আমাদের দেখতে হয়। পোলট্রিশিল্পের সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানি। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। এই খাতের আরও উন্নয়নে আপনারা গবেষণা ফান্ড তৈরি করুন। গবেষকদের পিএইচডি করতে সহায়তা দিন। অনেক সমস্যা চিহ্নিত হবে। যা সমাধান করাও সম্ভব হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য এই খাত থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্জিত মুনাফার ওপর কোনো কর নেই। শুল্ক বিভাগে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা সমাধান করা হবে। পোলট্রিশিল্পে সুবিধা দিলে অপব্যবহার হওয়ার ঘটনা আছে। এ জন্য উদ্যোক্তাদেরও সচেতন থাকা উচিত।

 

ডিম উৎপাদনে উদ্যোক্তারা নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন

—অজয় কুমার রায়

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, পৃথিবীতে আমিষের চাহিদা পূরণ করছে ডিম। একটি ডিমের খাদ্য গুণাগুণ যে কোনো খাদ্যের চেয়ে বেশি। ডিমের ৯৪ ভাগই মানব শরীরে কাজে লাগে। একটি ডিমের ওজন ৬০ গ্রাম হলে ৫৪ গ্রামই কাজে লাগে। ডিমই একমাত্র খাদ্য যার মধ্যে সব ধরনের ভিটামিন আছে। এত কম মূল্যে আর কোনো খাদ্য থেকে যা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। ২০০৫ সালে দেশে ৫৪২ কোটি ডিম উৎপাদন হয়েছে। ২০১৫ সালে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে ১০৮৯ কোটি। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিরাট অর্জন।

এই সফলতার কৃতিত্ব উৎপাদকদের। দেশের পুষ্টি ঘাটতি পূরণে এই শিল্পের বিকল্প নেই। স্বকর্মসংস্থানের জন্য বড় ভূমিকা রাখছে পোলট্রিশিল্প। এখন আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে হলে বিশ্বমানের ডিম ও মাংস উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। পোলট্রিশিল্পে নানা ধরনের বিষাক্ত খাদ্য ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ আমাদের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। এ জন্য সব ব্যবসায়ীকে সচেতন থাকতে হবে। সারা দেশে ১১৬টি পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন শিল্প রয়েছে। আরও কয়েকটি চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এসব উৎপাদক যেন দায়িত্বশীল আচরণ করেন। তাহলে এ শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।

 

পোলট্রির মতো খাতগুলো প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখছে

—নঈম নিজাম

খাবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইস্যুকে সারা বিশ্বে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পোলট্রিশিল্প দেশের আমিষ চাহিদা পূরণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। এ শিল্পে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। বিনিয়োগ ২৫ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। ২০২০-২১ সালে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সেই দিকটা মাথায় রেখে এ খাতের সমস্যাগুলো দূর করা দরকার। খাবারের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্য এসেছে। পোলট্রির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় ফ্রাইড চিকেনের দোকানও অনেক বেড়ে গেছে। বেকার যুবকরা মাছ ও পোলট্রিতে ঝুঁকছে। বর্তমান বাস্তবতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখছে পোলট্রিশিল্প। গ্রামের কৃষক ঘরের পাশে হাঁস-মুরগি পালছেন। ডিম বিক্রি করছেন। খুব ছোট্ট জায়গায় পোলট্রি খামার করা যায়। গ্রামে গেলে দেখা যায়, একজন কৃষক তার ছোট্ট বাড়িতে এক সঙ্গে হাঁস-মুরগি ও গরু পালন করছেন। বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করছেন। বাড়ির সঙ্গেই টং দোকান বানিয়ে সেখানে তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছেন। এগুলো আমাদের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। পোলট্রির সঙ্গে অনেক খাত জড়িত। লাখো মানুষের রুটি-রুজি হচ্ছে পোলট্রি থেকে। আমাদের অনেক সমস্যা। কিন্তু সেসব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিই না। বাংলাদেশ প্রতিদিন জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে ধারাবাহিকভাবে গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করছে। আমরা চাই এখান থেকে বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের দিকনির্দেশনাও উঠে আসবে।

 

নারীর ক্ষমতায়নে পোলট্রির অবদান আছে

—শামছুল আরেফিন খালেদ

সরকার নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে। আর গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারে পোলট্রিশিল্প। কারণ এটিই তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও লাভজনক বিনিয়োগ। তবে মুনাফা কমে যাওয়ায় এখন অনেকে এ খাত থেকে সরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ শহরে এসে গার্মেন্টে কাজ করছেন। কিন্তু সবাই তো সেটা করছেন না। তাই নারীর ক্ষমতায়ন চাইলে এ খাতকে প্রণোদনা দিতে হবে যাতে নারীরা আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসেন। পোলট্রি শুধু ব্যবসাই নয় একটি মহৎ শিল্প। পোলট্রিকে বাদ দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী আমিষের জোগানের কথা ভাবা যাবে না। আমিষ চাহিদা পূরণে আমেরিকা থেকে ফ্রোজেন মুরগি আনার কথাও অনেকে ভাবতে পারেন। কিন্তু সেটা সামাজিক সমস্যা তৈরি করবে। কারণ কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না আমদানি করা এসব ফ্রোজেন মুরগি হালাল। তাই প্রাণিজ আমিষের জোগান দেশের মধ্যে থেকেই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পয়লা বৈশাখে ইলিশ খাননি। তার বদলে খাদ্যতালিকায় ডিম ও মুরগির মাংস রেখেছিলেন। এমন নৈতিক প্রণোদনা পোলট্রিশিল্পের জন্য অনেক বড় উৎসাহ। নিরাপদ পোলট্রিশিল্প গড়ে তুলতে সব খামারকে নিরাপত্তা জালের মধ্যে এনে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যায়। এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যারা প্রক্রিয়াজাত মাংস উৎপাদন করতে চায় তাদের সহযোগিতা ও প্রণোদনা দেওয়া দরকার।

 

পোলট্রিকে নিরুৎসাহিত করলে কর্মসংস্থান কমবে

—ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ খান

পোলট্রিশিল্প দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে গুরুত্ব্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এটি অনেক বড় সম্ভাবনার একটা জায়গা। ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে এটাকে নিরুৎসাহিত করলে যুবকশ্রণি আগ্রহ হারাবে। কর্মসংস্থান কমবে। বেকারত্বের হতাশায় যুবশ্রেণি মাদকসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে। নারীসমাজ পিছিয়ে যাবে।

পোলট্রিশিল্পকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এ শিল্পে প্রকৃতপক্ষে বর্জ্য বলে কিছু নেই। এখানকার বর্জ্য দিয়ে বায়োগ্যাস উত্পন্ন করা যায় যা দিয়ে রান্নার কাজ এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর অব্যবহৃত অংশ দিয়ে জৈবসার হয়। অল্প জায়গায় ভার্টিক্যালি (বহুতল ব্যবস্থায়) এ শিল্প গড়ে তোলা যায়। এছাড়া দেশে উৎপাদিত ভুট্টার ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পোলট্রিশিল্পের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ কৃষিকেও সহযোগিতা করছে এ খাতটি। গ্রামের অনেক দরিদ্র মানুষ অর্থের অভাবে পোলট্রিশিল্পে এগিয়ে আসতে পারছে না। তাই এ শিল্পের বিকাশে এ খাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।

দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে পোলট্রি। কিন্তু এ খাতকে কৃষি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। ফলে নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত খাতটি। গবাদি ও পোলট্রিকে প্রাণিজ কৃষি হিসেবে স্বীকৃতি এ খাতটির সম্প্রসারণ সহজ হবে। পোলট্রি খাতের উন্নয়নের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

২০২৫ সাল পর্যন্ত পোলট্রিকে করমুক্ত করা দরকার

—সাইদুর রহমান বাবু

পোলট্রি একদিকে যেমন সম্ভাবনার শিল্প, অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণও। আমরা ব্যবসায়িক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। কয়েক বছর আগে বার্ড ফ্লুর আক্রমণ ঘটেছিল। বার্ড ফ্লু এসে এ শিল্পের যথেষ্ট ক্ষতি করে গেছে। অনেক মুরগি মারা গেছে। অনেক খামারি পথে বসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসেবে পোলট্রিকে অন্তত আরও কিছুদিন করমুক্ত রাখা উচিত ছিল। এতে খামারিরা নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেত। তাছাড়া দেশের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা পূরণে সরকারের ভিশন-২০২১ পূরণ সহজ হতো। বর্তমানে দেশের পোলট্রি খাত থেকেই ডিম ও মুরগির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। মুরগির বাচ্চাও এখান থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সফলতা কাজে লাগিয়ে এখন ডিম, বাচ্চা, মুরগির খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে না। ২০২১ সালের ভিশন চিন্তা করলে ক্রমান্বয়ে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসেবে আগে এটি করমুক্ত ছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে হঠাৎ করে কর আরোপ করা হয়। তবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ খাতটিকে করমুক্ত করলে ২০২১ সালের ভিশন পূরণ সহজ হবে। তখন এ খাতে বাইরের অনেকে বিনিয়োগ করবে। ৫০ হাজার কোটির বেশি বিনিয়োগ আসবে। তখন এক কোটির বেশি মানুষ পোলট্রি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। গার্মেন্টের পর এই সেক্টর সফলতার মুখ দেখছে। এক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু হঠাৎ করে কর আরোপ করায় পোলট্রি খাতটির দ্রুত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

পোলট্রি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে

—মসিউর রহমান

পোলট্রি খাতটি খুব দ্রুত বাড়ছিল। নব্বই দশকে এ খাতে বিনিয়োগ ছিল এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা ২৫ হাজার কোটিতে ঠেকেছে। হঠাৎ এ খাতে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করে লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এ খাতটি অনেক বড় হয়ে গেছে, কর আরোপ দরকার। কিন্তু মনে রাখা দরকার, পোলট্রিশিল্পে কিন্তু সবাই আসে না। এসব সমস্যার কারণে এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সেক্টরটি বড় হয়েছে। আগে একটা ফার্মে সর্বোচ্চ হাজারখানেক মুরগি থাকত। এখন ২০ লাখ মুরগি আছে এমন ফার্মও গড়ে উঠেছে। ভোক্তাদের সাহায্য আর উৎসাহে এটা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে যে পরিমাণ ডিম ও মুরগি উৎপাদন হচ্ছে, চাহিদা তার চেয়ে চারগুণ। গার্মেন্টকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় সেক্টর। সবকিছু পক্ষে থাকলে আগামী ২-৩ বছরে পোলট্রি হবে দেশের সবচেয়ে বড় সেক্টর। সরকারের সহযোগিতা পেলে ২০২০ সাল নাগাদ উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুণ হবে। আমরা প্রণোদনা চাই না, সমস্যার সমাধান চাই। আগে প্রতি মাসে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হতো। গত তিন বছরে সেভাবে বৈঠক হয়নি। ট্যানারি আইনে বলা আছে, তাদের বর্জ্য ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তারা সেটা করছে না। আর দোষ আসছে আমাদের কাঁধে। বিষয়গুলোয় সরকারের নজর দেওয়া দরকার। পোলট্রিশিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি যোগ হবে।

 

কাস্টমস ঝামেলা দূর করা দরকার

—ডা. নজরুল ইসলাম

ডিম ও মাংস মধ্যবিত্তের ক্রয়ের নাগালে। যে কারণে মানুষ সহজেই এ খাবার গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি লাভ করতে পারে। কিন্তু পোলট্রিশিল্প বিকাশে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে এইচএস কোডের আওতায় পণ্যের কাস্টমস ঝামেলা দূর করা খুবই জরুরি। এর কারণে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা প্রায়শই হয়রানি হচ্ছেন। এটি সরকারের উদ্যোগে দ্রুত নিরসন করা দরকার। পোলট্রিশিল্পে ব্যবহৃত কিছু উপকরণ অন্যান্য শিল্পেও ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় আমাদের পণ্যকে অন্য সেক্টরের মনে করে অধিক হারে কর আরোপ করা হয়। এ দিকটিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এটা পোলট্রিশিল্পের ক্ষতি করছে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই পোলট্রি খাত অনেক দূর এগিয়েছে। এটা শুধু ভোক্তাদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। দেশের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদা পূরণে পোলট্রি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ সেক্টরকে এগিয়ে নিতে উন্নত জাত উদ্ভাবন, ভ্যাকসিন তৈরি, উন্নত খাদ্য উদ্ভাবনে পর্যাপ্ত গবেষণা দরকার। কিন্তু কৃষিতে গবেষণা হলেও পোলট্রিতে দৈন্যদশা। পোলট্রিতে গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। এক সময় এ খাতে শিক্ষিত ও বিত্তশালী মানুষ ছিল না। ভোক্তাদের চাহিদার কারণে আজ হয়েছে। বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশে হবে না। মুরগি, মাছ ও ভুট্টা সাপোর্ট দেবে। দেশের অন্যতম সম্ভাবনার খাত হিসেবে পোলট্রিশিল্পের সমস্যাগুলো দূর করা জরুরি।

 

ফার্মের মুরগি ও ডিম ব্যাকটেরিয়ামুক্ত

—মো. সিরাজুল হক

নানা অপপ্রচারের কারণে অনেকে বিষক্রিয়ার ভয়ে ফার্মের ডিম ও মুরগি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু একজন খামারি ব্রয়লার মুরগি নিজের সন্তানের চেয়েও যত্নে লালন করেন। কারণ খামারে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে পড়লে মুরগি বাঁচবে না। খামারের মুরগি ও ডিম সম্পূর্ণ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত। ভুল ধারণার কারণে অনেকে বেশি দাম দিয়ে দেশি মুরগির ছোট ডিম কিনে খান। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত যে, ডিম যত বড়, প্রোটিন তত বেশি। এছাড়া কিছু মানুষ পোলট্রি খাবারে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করত। জেল-জরিমানার পর তারা সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। পোলট্রি শিল্পের জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশে এটা তৈরি করতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার এ পরিস্থিতিতে কেউ তাতে আগ্রহী হবে না। একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠায় অন্তত ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পোলট্রিশিল্পের যে অবস্থা তাতে বিনিয়োগ উঠে আসতে অনেক সময় লেগে যাবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে পোলট্রিশিল্পকে আধুনিক রূপ দিতে প্রতিটি জেলায় ল্যাব করা উচিত। প্রান্তিক খামারিদের জন্য বীমা চালু করা দরকার যাতে কোনো দুর্যোগের পর তারা সহজে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। এ শিল্পটা সরকারের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই জিডিপিতে ২ দশমিক ৪ শতাংশ অবদান রাখছে। যদি সরকারের সহযোগিতা পেত তাহলে এ খাত সবাইকে ছাড়িয়ে যেত।

 

ডিম নিয়ে আমাদের ভুল ধারণা আছে

—ড. মো. আমিনুল ইসলাম

অনেকে মনে করেন ডিম খেলে মুটিয়ে যাবেন। কিন্তু ডিম ওজন কমায়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। চোখের ছানি ও ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। সপ্তাহে একজন নারী ছয়টি ডিম খেলে তার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৪০ ভাগ কমে যায়। দেশের আমিষ ও পুষ্টি ঘাটতি পূরণে পোলট্রিশিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশে বর্ধিত জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা পূরণে পোলট্রির বিকল্প নেই। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের বছরে মাংসের চাহিদা ৫৬ কেজি। সেখানে আমরা গড়ে খাই মাত্র ১১.২৭ কেজি। একমাত্র পোলট্রি দিয়েই দ্রুত এ চাহিদা পূরণ সম্ভব। অল্প সময়ে, অল্প জায়গায়, অল্প পুঁজিতে এ শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এদেশে ৬০ লাখ মানুষ পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি আমরা পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি যুক্ত করেছি। ক্ষুদ্র খামারিরা প্লান্ট বসিয়ে নিজেদের জ্বালানি চাহিদাও পূরণ করছে। বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে এ খাতের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। দেশেই গবেষণা করে বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী জাত উদ্ভাবন করতে হবে। এছাড়া মানসম্মত পোলট্রি খাদ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিছু মানুষ পোলট্রি খাদ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত গ্রোথ হরমোন মেশাচ্ছেন। ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য খাদ্যে ব্যবহার করছেন। ভয়ে অনেকে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। গুটিকয়েক মানুষের অনৈতিক কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো খাতের ওপর। 

 

ভ্যাকসিন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে

—ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া

এক সময় দেশের পোলট্রি মাংস মানুষ খেত না। আমাদের ছোটবেলায় পোলট্রি মাংস সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ছিল। সবাই দেশি মুরগি খেত। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। ফাস্টফুড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যে কারণে এখনকার বাচ্চারা পোলট্রির মাংস বেশি পছন্দ করে। সেই মাংস স্বাস্থ্যকরভাবে উৎপাদন করতে হবে। পোলট্রিতে যেসব ওষুধ ও ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয় সেসব নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। বিদেশ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ভ্যাকসিন আমদানি করা হচ্ছে। বেশি ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য এসব ভ্যাকসিন খাওয়ানো হয়। যে ডিম বা মাংস পুষ্টির জন্য খাব সেটা যদি হয় বিষ তাহলে অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে। এ ঝুঁকিটা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এজন্য ভোক্তা অধিকার আইন খুব কঠোর হওয়া উচিত। আমি আমেরিকা ও কানাডায় দেখেছি সেখানে কত সুন্দর স্বাস্থ্যকরভাবে ডিম ও মাংস উৎপাদন ও প্যাকেটজাত করা হয়। আমাদের দেশে তা হয় না। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়। আমেরিকায় যেসব ভ্যাকসিন মেয়াদ শেষের পর্যায়ে কম দামে সেগুলো কিনে বাংলাদেশে বাজারজাত করা হয়। যেগুলো আমাদের পোলট্রি শিল্পে ব্যবহার করা হয়। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমাদের দেশে ভোক্তা অধিকার আইন বাস্তবায়নের অনেক ঘাটতি আছে। মানবস্বাস্থ্য বিবেচনায় সব কর্তৃপক্ষের সমন্বয় করে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

 

প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নামে নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে

—মো. সারওয়ার আলম

বাজারের ১০-১৫ ভাগ ওষুধ নিম্নমানের। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নামে নকল ওষুধ তৈরি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। শুধু পোলট্রি নয় সব সেক্টরে খাবারের বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িত তাদের কিছু লোক খাদ্যের মান বজায় রাখছেন না। ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য পোলট্রি খাদ্যে ব্যবহার করছেন। এসব বিষাক্ত পদার্থ কিডনি, লিভার নষ্ট করে দেয়। লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মুরগি ড্রেসিং করানোর সময় একই পানি দুই-তিন দিন ব্যবহার করছে। ওই মাংস খাওয়ার পর ডায়রিয়াসহ নানা রোগ হচ্ছে। যারা এমন অসৎ কাজ করছেন তারা নিজের সঙ্গেও প্রতারণা করছেন। মানুষ ভুল ধারণার কারণে মুরগি, ফল খাওয়াও বাদ দিয়েছেন। এতে একদিকে এ সেক্টরগুলো ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। বাজারে নকল ডিমের কথা বলা হচ্ছে। আমাদের চোখে এমন কিছু ধরা পড়েনি। বাংলাদেশের বাজারে এমন কিছু পেলে র‌্যাবকে জানান। ভোক্তাদের মধ্যে গুজব ছড়ালে তার প্রতিক্রিয়া খুবই খারাপ হয়। বাণিজ্যিক পোলট্রির পাশাপাশি বসতবাড়িতে হাঁস-মুরগি পালনে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এটা যে কোনো দুর্যোগে ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে। বাণিজ্যিক চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। মুরগি অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো হয় না। ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এসব ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

 

যারা অংশ নিলেন

আনোয়ার ফারুক, সাবেক সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়

কালিপদ হালদার, সদস্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

অজয় কুমার রায়, মহাপরিচালক, প্রাণীসম্পদ অধিদফতর

নঈম নিজাম, সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

শামছুল আরেফিন খালেদ, সভাপতি, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা

মসিউর রহমান, আহ্বায়ক, বাংলাদেশ পোলট্রিশিল্প সমন্বয় কমিটি

ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ খান, মহাসচিব, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন

সাইদুর রহমান বাবু, মহাসচিব, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

মো. সিরাজুল হক, হেড অব এনিমেল হেলথ ডিভিশন, রেনেটা

ডা. নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

মো. সারওয়ার আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব

আবু তাহের, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সঞ্চালনা

লুত্ফর রহমান হিমেল, বার্তা সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর