১৫ নভেম্বর, ২০২৩ ১৭:১২

ড্রাগন ফল এখন সুপার ফুড

চৌধুরী তাসনীম হাসিন

ড্রাগন ফল এখন সুপার ফুড

বিদেশি এ ফলটি আজ হয়ে উঠেছে আমাদের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এদেশে প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে এই ফল, যা সাধারণত চীন বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে আগত। এই ট্রপিকাল ফলটি তার অনন্য বাহ্যিক গঠন, সুমিষ্ট স্বাদ এবং টেক্সচারের জন্য আমাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আজ আপনাদের জানাব ড্রাগন ফলের সুপার ফুড হয়ে ওঠার কারণ। ড্রাগন ফল সুমিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এতে রয়েছে লো সুগার। ১০০ গ্রাম ড্রাগন থেকে গড়ে মাত্র ৯ গ্রাম সুগার পেয়ে থাকি। এর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম যা আমাদের হার্ট হেলথের জন্যও উপকারী। ড্রাগন ফলে সোডিয়ামের পরিমাণও বেশ কম হওয়ায় একে লো-সোডিয়াম ডায়েটেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার অনেকটা আমরা পূরণ করতে পারি প্রতিদিন একটি ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমে। এতে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণও অনেক বেশি, এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলেট। ড্রাগন ফল বেশ কয়েকটি রঙের হয়ে থাকে, আমাদের দেশে সাধারণত গোলাপি বা বেগুনি রং, লাল রঙের পাশাপাশি সাদা রঙের ড্রাগন ফল বেশি দেখা যায়।

এ ছাড়াও হলুদ রঙের ড্রাগন ফল অন্যান্য দেশে সচরাচর দেখা যায়। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। সুগারের পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা মাঝারি সাইজের ড্রাগন ফল দৈনিক একটি করে বা বড় সাইজের ড্রাগন ফল অর্ধেকটি দৈনিক মূল খাবারের পর খেতে পারেন, যা রোগীর সুগার লেভেলকে অ্যাফেক্ট করবে না। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ড্রাগন ফল বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অলিগো স্যাকারাইডস, যা আমাদের শরীরের গুড ব্যাক্টেরিয়াল ফ্লোরাকে উজ্জীবিত রাখে। যার ফলে এটি আমাদের হজম শক্তির বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে।

আমরা সবাই এজিং প্রোসেস নিয়ে চিন্তিত থাকি, এই ড্রাগন ফলের এন্টি অক্সিডেন্টস ও ভিটামিন সি আমাদের স্কিনের রিংকেলস, পিগমেন্টেশন, ডিসকালারেশন দূর করতে সহায়তা করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাওয়ার পাশাপাশি কিছুটা ড্রাগন ফলের পেস্ট ডিরেক্ট স্কিনে ব্যবহার করতে পারি, তাতে আরও বেশি উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে ড্রাই স্কিন ও স্কিন পিগমেন্টেশন থেকে নিরাময় পেতে। এ ফল আমাদের চুলের জন্যও উপকারী। দুধের সঙ্গে ড্রাগন ফল দিয়ে স্মুদি তৈরি করে খুব সহজেই একটি হাই ক্যালসিয়াম ফুড আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি, যা আমাদের হাড়ের গঠনের জন্য উপকারী। সবচেয়ে যাদের চোখে ছানি আছে বা যাদের চোখের পাওয়ার কমে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চোখের ছানি ও দৃষ্টি শক্তি প্রখর করার জন্যও এটি উপকারী।

ড্রাগন ফল ছানি পড়া ও এর ম্যাচুরিটি প্রোসেসকে স্লো ডাউন করতে পারে। প্রেগনেন্সি বা নার্সিং মা’দের জন্যও এর উপকারিতা অনেক। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, আয়রন যা প্রেগনেন্সিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে কারও কারও ড্রাগন ফলে অ্যালার্জি হতে পারে। অতিমাত্রায় খেলে বিশেষ করে খালি পেটে খেলে কিছু গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন পেট ফাপা, পাতলা পায়খানা বা পেটে ব্যথা হতে পারে।

লেখক : চিফ ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট, ইউনাইটেড হাসপাতাল লি.

সর্বশেষ খবর