২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ১৬:২১

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারা বছর সচেতন থাকতে হবে : ডিএনসিসি মেয়র

অনলাইন ডেস্ক

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারা বছর সচেতন থাকতে হবে : ডিএনসিসি মেয়র

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, 'ডেঙ্গু এখন আর কোন নির্দিষ্ট সিজনের সমস্যা না। ডেঙ্গুতে এখন সারা বছর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু বর্ষায় না, শীতকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধু বর্ষায় নয়, সারা বছরই সচেতন থাকতে হবে।'

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) আয়োজিত কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু বিষয়ক জনসচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডিএনসিসি মেয়র।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'ড্রেন বা নর্দমার পানিতে কিন্তু এডিস মশার জন্ম হয় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিসের লার্ভা জন্মায়। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, অব্যবহৃত কমোড, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতি তিনদিনে অন্তত একদিন জমে থাকা পানি ফেলে দিন। প্রতি শনিবার নিজেদের বাসা বাড়ি পরিষ্কার করি তাহলেই এডিস মশার কামড় থেকে আমরা নিরাপদ থাকতে পারবো।'

মেয়র আরও বলেন, 'প্রচারণার পাশাপাশি আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিচ্ছি। আমি না জানিয়ে ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে। সেখানে ২৮টি ভবনের বেজমেন্টে প্রচুর লার্ভা পেয়েছিলাম। কারওয়ান বাজারে সরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা, টিসিবি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন এবং যমুনা অয়েলের ভবনেও অভিযান চালিয়ে লার্ভা পেয়েছি। সবাইকে জরিমানা করেছি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা কারো ভবনের ভিতরে গিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করবে না। নিজ নিজ ভবনের ভিতরে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিজেদেরকে নিয়ে হবে। পরবর্তীতে আমি আবার জাপান গার্ডেনে পরিদর্শনে গিয়েছে এবং তখন কিন্তু কোন লার্ভা পাওয়া যায়নি। তারা জানালো পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছি তাই এখন সর্তক হয়ে গেছি।' 

তিনি বলেন, 'কাউকে জরিমানা করা বা জেল দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো কোথাও যেন এডিসের লার্ভা না জন্মে। আমরা চাই সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। কমিউনিটির সবাই সচেতন হলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।'

উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'করোনার সময়ে দেখেছি চিকিৎসকরা, নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। ভয়াবহ করোনায় আপনাদের অবদানের জন্য আমি আপনাদের স্যালুট জানাই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতে আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছি। কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনারা প্রচারণার যে কর্মসূচি নিয়েছেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নিপসম ও ডিএনসিসি যৌথভাবে কাজ করবে। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা প্রদান করা হবে।'

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা মশা মারার জন্য দোকান থেকে অ্যারোসল ও কয়েল কিনে ব্যবহার করি। মশা হওয়ার পরে মশা মারার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়। সিটি কর্পোরেশন থেকে মশার লার্ভা ধ্বংসে লার্ভিসাইডিং করা হয়। কিন্তু পরিপূর্ণ মশা হওয়ার আগে লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক যদি ওভার দ্য কাউন্টারে এভেইলেবল কিনতে পাওয়া যায় তাহলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। সবাই দোকান থেকে কিনে কীটনাশক ব্যবহার করে উৎসস্থলেই মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারবে। স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুরোধ করবো এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, 'আমরা চাই ডেঙ্গুতে যেন একজনেরও মৃত্যু না হয়। কিন্তু এটি শুধু চাইলেই হবে না। আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু ঢাকা শহরে না, পুরো দেশে প্রচারণা চালাতে হবে। ব্যাপক প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।'

নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, 'প্রতিটি মানুষের বাড়িঘর আঙ্গিনা এবং আশেপাশের জায়গা, কর্মস্থল যত্নসহকারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা উচিৎ। বসবাসের জায়গা সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিষ্কার করতে হবে। এডিস মশা সাধারণত ২০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে তাই যে কোন ব্যাক্তির বাড়িঘর আঙ্গিনা এবং আশেপাশের জায়গা, কর্মস্থল ও বসবাসের জায়গা যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এডিস মশাসহ অন্যান্য প্রজাতির মশা ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর এখন একটি এ্যান্ডেমিক রোগ, যদি আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করি তাহলে বছরব্যাপি এ রোগটি হওয়ার সম্ভবনা থেকে যাবে। সে কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি মেয়র কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু বিষয়ক জনসচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং অন্যান্য অতিথি ও চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে সচেতনতামূলক র‍্যালিতে অংশ নেন। এ সময় মেয়র জনগণের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, ইউনিসেফের প্রতিনিধি লরেন্স ওযুবা, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

সর্বশেষ খবর