৮ জুন, ২০২৪ ২১:১০

প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধে ঘাটতি বা পিআইডি

অধ্যাপক ডা.ইমনুল ইসলাম ইমন

প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধে ঘাটতি বা পিআইডি

প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধে ঘাটতি কী

এই রোগটি শিশুদের একটি জটিল এবং দীর্ঘ মেয়াদী রোগ। আমাদের শরীর প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের বিভিন্ন রোগ জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়, বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করে। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা Immune System নির্ভর করে বিভিন্ন কোষ, প্রোটিনসহ অন্যান্য উপাদানের ওপর, যা সম্মিলিতভাবে আমাদের রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে। 

দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়

১) জন্মগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা 
২) অর্জিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা। 

জন্মগত প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা পরবর্তীতে অর্জিত প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই রোগের কারণে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা একেবারেই থাকে না অথবা অল্পস্বল্প দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতায় দেহে বিভিন্ন রোগ জীবাণু আক্রমণে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই রোগের ব্যাপ্তি কিন্তু কম নয়। 

এ যাবৎ ৪৮৫ টি বিভিন্ন ধরনের PID রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় ছয় মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। গবেষণায় দেখা যায় প্রতি ১২০০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত। আমাদের দেশেও এই রোগের শনাক্তের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগে শিশুসহ বড়রাও আক্রান্ত হতে পারে ।

রোগের লক্ষণ সমূহ
বার বার বিভিন্ন অসুখের সংক্রমণ এই রোগে মূল লক্ষণ, যেমন নিউমোনিয়া, কান পাকা, ডায়রিয়া, ত্বকে সংক্রম সহ জ্বর। এছাড়াও এলার্জি, অটোইমুউনিটি এমনকি ক্যানসারেও শরীরে বিভিনন অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুকে বার বার বিভিন্ন ধরণের এন্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করতে হয় । 

এই রোগের দশটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতামূলক চিহ্ন হলো 

১.বছরে চারবারের বেশি কান পাকা
২.বছরে  দুইবারের বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ।
৩.বছরে দুইবারের বেশি সাইনাসে সংক্রমণ । 
৪.দুই বা ততোধিক শরীরের অভ্যন্তরে সংক্রমণ হওয়া 
৫.দীর্ঘমেয়াদী মুখের ক্ষত বা অঙ্গে ছত্রাকের সংক্রমণ 
৬.দেহের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে বার বার পুঁজ জমে যাওয়া । 
৭.সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিবারই শিরা পথে এন্টিবায়োটিক দেয়া। 
৮.দুই বা ততোধিক মাস সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরেও রোগীর উন্নতি না হওয়া। 
৯.শিশুর ওজন ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া । 
১০.পরিবারের অন্য  সদস্যদের এই রোগে আক্রান্ত হওযার ইতিহাস থাকা । 

রোগ শনাক্তকরণ

রোগের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে রক্ত পরীক্ষা করে রোগটি শনাক্ত করা যায়। এইখানে উল্লেখ্য যে, এই রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যয়বহুল এবং সব হাসপাতালে করা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু বিভাগে আওতায় এই সকল রোগের সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। 

জটিলতা সমূহ
১.কানে শুনতে অসুবিধা হওয়া । 
২.ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া । 
৩.দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়া । 
৪.শিশুর একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া

চিকিৎসা
রোগটি জটিল রোগ হলেও নিরাময়যোগ্য কিন্তু চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয়বহুল। নিয়মিতভাবে শিরাপথে ইমিউনোগ্লোবুলিন ওষুধ ব্যবহার করলে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভবপর। পুনঃপুন সংক্রমণ হওয়ার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিছু কিছু ওষুধ সারা জীবন খেয়ে যেতে হবে যা কিনা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে প্রতিরোধে সহায়ক। পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত হারে শিশুকে প্রদান করতে হবে। কিছু টিকা আছে যা কিনা এই সকল শিশুদের দেয়া যাবে না। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধে নিউমোনিযা এবং ফ্লুর টিকা প্রদান করার ব্যবস্হা করতে হবে। PID রোগের তথ্য সমূহ সবাইকে জানাতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধি করে রোগটিকে দ্রুত শনাক্তের ব্যবস্থা করে চিকিৎসার আওতায় আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


লেখক: অধ্যাপক শিশু রোগ বিভাগ, 
আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, 
মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর