১৬ জুন, ২০২৪ ০০:৫১

ঈদ যাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

অধ্যাপক ডা.ইমনুল ইসলাম ইমন

ঈদ যাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

অধ্যাপক ডা.ইমনুল ইসলাম ইমন

ঈদ-উল-আযহা সমাগত। ঈদ মানে খুশির জোয়ার, ঈদ মানে খুশির সম্ভার। তাই শিকড়ের টানে মানুষের গণযাত্রা শহর ছেড়ে গ্রামে প্রিয়জনের কাছে। তাই গণপরবিহন-দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ মুখ ও টার্মিনালে এখন ঢাকা ছাড়তে মানুষের ভিড়। কারো হাতে ব্যাগ, কারো কোলে বাচ্চা অথবা হাতে ধরা শিশুর ছোট্ট হাত। ঈদ আনন্দ প্রিয়জনের সাথে ভাগ করতে নাড়ির টানে ঢাকা ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ, ছুটি শেষে ঈদের আনন্দ স্মৃতি নিয়ে আবারো ফিরবেন কর্মস্থলে। 

এই ঈদ যাত্রার বিভিন্ন রকম ভোগান্তি আমরা দেখতে পাই যেমন বাস, ট্রেন, লঞ্চের  টিকিট পাওয়া না পাওয়া, পথে যানজটে দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা, সময় মতো বাড়ি না পৌঁছানো ইত্যাদি। এ সকল ভোগান্তির পাশাপাশি ঈদ ভ্রমণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়টি কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকির খুঁটিনাটি জানা থাকলে ঈদ যাত্রা হতে পারে আনন্দময় এবং প্রাণবন্ত।  শিশু, বয়স্ক এবং রোগীদের পক্ষে লম্বা যাত্রা পথের ধকল সহ্য করা খুব কঠিন হয়। 
তাই আসুন জেনে নেই কী কী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে আমাদের এই ঈদ যাত্রা সবদিক থেকে নিরাপদ আর নির্বিঘ্ন হবে।

*পরিধেয় পোষাক
ঈদ যাত্রার জন্য প্রথম যে বিষয়টা আসবে তা হচ্ছে ব্যাগ গোছানো। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রসহ এমনকি ছোট শিশু বা বয়স্কদের জন্য যা প্রয়োজন তা সঙ্গে রাখা উচিত। সময়টা গরমের, তাই হালকা আরামদায়ক, সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক পরিধান করুন। যাত্রার সময় নরম জুতা, স্যান্ডেল অথবা কেডস্ পড়ার অভ্যাস করতে হবে। একেবারে নতুন জুতা পরে কোথাও রওনা হবেন না। এতে পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। মেয়েদের জন্য হাই হিল পরিহার করে চলাই শ্রেয়।

*খাবার নিয়ে সতর্কতা
ঘরের তৈরি খাবার এবং পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং বাচ্চাদের পানি পান করতে উৎসাহিত করুন। এই সময়ে খাবার ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাইরের খাবার বাচ্চাদের খেতে  দিবেন না।

*প্রয়োজনীয় ঔষধ
কিছু কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ যেমন শরীর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, ডায়রিয়ার জন্য খাবার স্যালাইন, সাধারণ সর্দি কাশির জন্য এন্টিহিস্টামিন, পেটব্যথা, ফোলা গ্যাসের জন্য ওমিপ্রাজল ইত্যাদি সাথে রাখুন। এছাড়া তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক মলম সাথে রাখুন। মোবাইল  ফোনে চিকিৎসকের ফোন নাম্বার ঠিকানা সংগ্রহে রাখুন। শিশুদের বিভিন্ন মেয়াদি অসুখ যেমন বাতরোগ, অ্যাজমা বা এলার্জি রোগে ভুগছে তার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ নিতে একদম ভুলবেন না।

*যানবাহনের সতর্কতা
জানালা দিয়ে মাথা বা হাত বের করে রাখবেন না। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চে উঠতে চেষ্টা করবেন না। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। শিশুরা সব সময় জানালার পাশে বসতে চায়, তাই অতিরিক্ত বাতাসের কারণে ভ্রমণের ঠিক পরেই আক্রান্ত হয় সর্দি-জ্বর অথবা সাধারণ কাশিতে। তাই শিশুদের জানালার পাশে বসা থেকে বিরত এবং শিশুদের ধরে রাখবেন যাতে করে পড়ে গিয়ে শিশুদের দুর্ঘটনার শিকার না হতে হয়।

*মোশন সিকনেস
অনেক শিশুকে বাসে বা যানবাহনে উঠালে বমি বমি ভাব এমনকি বমি করতে দেখা যায়, সাথে মাথা ঘোরাও থাকতে পারে যাকে বলে ভ্রমণজনিত মোশন সিকনেস। এই প্রতিরোধে ট্যাবলেট/সিরাপ অটোসিল অথবা স্টিমিটিল জাতীয় ঔষধ ভ্রমণের আধ ঘণ্টা আগে খাওয়ালে এই অসুবিধা থেকে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও বাস-ট্রেনে চলাচলের সময় শিশুদের চোখ বন্ধ করে রাখলে অথবা ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও এই অসুবিধা টের পাওয়া যায় না বললেই চলে।

*গর্ভবতী ও বয়স্কদের জন্য সতর্কতা 
গর্ভবতী নারীরা অতিরিক্ত ঝুাঁকি হয় এমন পথে ভ্রমণ যত সম্ভব পরিহার করুন। গর্ববতীদের প্রথম তিন মাস এবং ডেলিভারির দুই অথবা তিন মাস আগে ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই ভালো। গর্ভাবস্থায় একাকী ভ্রমণ করা উচিত নয়। বয়স্কদের বেলায় যাত্রাপথে তারা যেন একই অবস্থায় বেশিক্ষণ বসে না থাকেন। এই জন্য যানবাহনের মধ্য দিয়ে যেন কিছু চলাফেরা করেন সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। বয়স্কদের প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ যেমন ইনহেলার, ইনসুলিন, প্রেসারের ঔষধ ইত্যাদি সাথে নিতে ভুলবেন না। 

*জরুরি প্রয়োজনে
পরিচিত ডাক্তার এবং পুলিশের ফোন নম্বর সাথে রাখুন। অসুস্থ অথবা কোনো বিপদে পড়লে যেকোনো সময় ডাক্তারের পরামর্শ ও বিপদের সময় পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন। পুলিশের সাহায্য নিতে যেকোনো জায়গা থেকে ৯৯৯ এই নম্বরে ফোন করবেন।

*অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান
অপরিচিত কেউ খাবার বা পানি যাত্রাপথে আপনাকে দিলে খাবেন না। যাত্রাপথে মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীর আনাগোনা থেকে সতর্ক থাকবেন।


*বাড়ি গিয়ে যা করবেন
কুরবানির ঈদ তাই পরিমিত খাবার খাবেন। তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন, বেশি করে পানি খাবেন সাথে শাকসবজিও খাবেন। অকারণে রোদে ঘোরাফেরা করবেন না এবং বাইরের খাবার খাবেন না। বরং বাড়িতে বসে প্রিয়জনের সাথে গল্প করে ঈদের আনন্দে মেতে উঠবেন।

*শেষ কথা 
ঈদের আনন্দ যেন দুঃখ বয়ে না এনে আমাদের জীবন আনন্দময় করে তোলে। সাথে ঈদ যাত্রার আনন্দ, বিষাদময় না হয়ে যেন হয় আরামদায়ক। সবাই খেয়াল রাখবেন, হতে হবে যত্নবান, দায়িত্বশীল এবং সতর্ক।

লেখক: অধ্যাপক, শিশু বিভাগ 
আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড,মিরপুর -১০ ঢাকা। হটলাইন:
১০৬৭২

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর