৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:৫৬

মায়েদের প্রসব পরবর্তী চিকিৎসায় রিহ্যাবিলিটেন

ডা. প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী

মায়েদের প্রসব পরবর্তী চিকিৎসায় রিহ্যাবিলিটেন

ডা. প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী

রিহ্যাবিলিটেশন কী?

মাতৃত্বের স্বাদ প্রতিটি নারী জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যতম সেরা রোমাঞ্চকর অনুভূতি। তবে, সন্তান জন্মদানের পর মায়েদের আকস্মিক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এ সময় মায়ের শরীর দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে এবং প্রায়ই হাড়, মাংসপেশি, অস্থিসন্ধি, স্নায়ু সংক্রান্ত জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। যথাযথ  চিকিৎসা নিলে, সঠিক যত্ন এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে, রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। আর মায়ের শরীর সুস্থ হলে শিশু সঠিক পরিচর্যা পায় এবং সুস্থ ও সবল থাকে।

প্রসবের পর ৬ সপ্তাহ (৪২ দিন) পর্যন্ত সাধারণত যে সকল সমস্যায় পুনর্বাসন চিকিৎসা আলোকপাত করা হয়, সেগুলো হলো-
ঘাড়, পিঠ, কোমর অথবা পা ব্যথা হওয়া।
অস্থিসন্ধিতে ব্যথা (হাঁটু, কব্জি ব্যথা)
হাত, পা এবং আঙ্গুলে ঝি ঝি ধরা, অবশ হয়ে যাওয়া।
ক্লান্তি বোধ বা অস্বস্তি অনুভব করা।
অনেক ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিতে পারে।

কারণঃ
১.হরমোনজনিত। 
২.মেরুদণ্ডের বক্রতার পরিবর্তন।
৩.শারীরিক স্থূলতা।
৪. নার্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ।
৫.পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব।  
৬.অপর্যাপ্ত খাদ্য।
৭.মানসিক অশান্তি।

প্রসব পরবর্তী রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসার উদ্দেশ্য:

১. মায়েদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানো।
২) বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো। 
৩) প্রসব পরবর্তী জটিলতার চিকিৎসা করা।
৪) প্রসব পরবর্তী জটিলতা হ্রাস করা।
৫) দ্রুত মানসিকভাবে স্বাভাবিক পরিবেশে খাপ খাওয়ানো।

প্রসব পরবর্তী পুনর্বাসন চিকিৎসা :

চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের জন্য অনেকটাই রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার উপর নির্ভরশীল থাকেন। তবে, সামান্য প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজনও হতে পারে। রোগীর কাউন্সেলিংয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

ওষুধ :

চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক স্বল্প মাত্রার বেদনাশক ওষুধ, আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটসহ অন্যান্য ওষুধ খাওয়া যাবে।

ফিজিক্যাল এজেন্ট :

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার ধরণ ও সময় মোতাবেক ব্যথার স্থানে ঠান্ডা বা হালকা গরম/কুসুম গরম পানির সেঁক অথবা হালকা ম্যাসাজ করা যাবে। প্রয়োজনে, অন্যান্য সুপারফিসিয়াল ফিজিক্যাল এজেন্ট ব্যবহার করা যাবে।

শারীরিক অনুশীলন :

প্রসব পরবর্তী  সময়ে সক্রিয় মায়েদের শরীরিক ও মানসিকভাবে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ হয়। তবে, শারীরিক অনুশীলন নির্ভর করে মায়ের প্রসব পরবর্তী অবস্থার উপর। উল্লেখ্য, প্রসবের ধরণ ও উপসর্গ অনুযায়ী ব্যয়াম, ব্যয়াম শুরু করার সময় নির্বাচন করতে হয়। কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক বাচ্চার জন্মের পরে মৃদু শারীরিক কার্যকলাপ দিয়ে শুরু করুন। আপনি নিয়মিত কয়েক মিনিট করে হাঁটা শুরু করতে পারেন এবং ধীরে ধীরে প্রতি সপ্তাহে ৫-৭ দিন প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত হাঁটতে পারেন।

ব্যায়ামের উপকারিতা : 

ব্যায়াম অঙ্গবিন্যাস সমর্থনকারী পেশি শক্তিশালী করে। 
ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।
মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখে।

কখন ব্যায়াম বন্ধ রাখবেন :

বুকে-পিঠে চাপ অনুভব করলে।
শ্বাসকষ্ট হলে।
খিচুনি দেখা দিলে।
অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন দেখা দিলে।
মাথা ঘুরালে।
অশান্তি অনুভব হলে।

অর্থোসিস : ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, অসুখের ধরণ মোতাবেক সমস্যাগ্রস্ত স্থানে প্রয়োজনে অর্থোসিস ব্যবহার করা যাবে।

খাবারঃ 

শরীরের ক্ষয় পূরণের জন্য প্রসবের পর মাকে বেশি করে খাবার খেতে হবে। 
শিশুর প্রয়োজনে মায়ের সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
প্রচুর পরিমাণে পানি অথবা পানি জাতীয় খাবার খান।
ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। 

দৈনন্দিন কাজ : 

পর্যাপ্ত বিশ্রাম (দুপুরের খাবারের পর ২ ঘণ্টা এবং রাতে  ৬-৮ ঘণ্টা) বিশ্রাম নিতে হবে। 
শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে হবে।
ভারী কাজ নিষেধ।  
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
সঠিক দেহভঙ্গি মেনে চলতে হবে।
সমতল জায়গায় হাঁটার অভ্যাস করুন।

সতর্কতা :

যেসব ক্রিয়াকলাপে পেটে প্রচুর স্ট্রেচিং হয়, সেলাইগুলিতে খুব বেশি চাপ পড়ে, সেগুলি থেকে বিরত থাকুন।
চলাফেরায় তাড়াহুড়া করবেন না। 
তীব্র মাত্রার কোনো শারীরিক অনুশীলন করবেন না। 
কোনোক্রমেই পেটে ঠান্ডা বা গরম সেঁক অথবা কোনো ম্যাসাজ করবেন না। 
হাই হিল জুতা পরবেন না। 
কম হিলের আরামদায়ক জুতা পরুন।
সিজারিয়ান জন্মের পর থেকে সেলাই এর ব্যপারে সতর্ক থাকুন। 
দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।
অসমতল রাস্তা বা অত্যাধিক সিঁড়ি ব্যবহার করবেন না। 
যেকোনো বিপদ চিহ্ন দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই উচিত। 

লেখক :

ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার 

মিরপুর-৬, ঢাকা।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর