রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২ ০০:০০ টা

ডেন্টাল ক্যারিজের ক্ষতিকর দিক

অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী

ডেন্টাল ক্যারিজের ক্ষতিকর দিক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মাড়ির রোগ বেড়েই চলেছে। তবে শহর এলাকার লোকদের মধ্যে এর তীব্রতা কিছুটা কম হলেও গ্রামাঞ্চলে প্রচুর লোকের মধ্যে এই রোগ রয়েছে। যেহেতু হঠাৎ মারাত্মক কোনো অসুবিধা দেখা দেয় না, তাই মাড়ির রোগের অভিযোগও কম। যেহেতু রোগটি ধীরগতির ধ্বংসকারী, তাই প্রদাহের গতি দিনের পর দিন বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে এসে মূল্যবান দাঁতটিকে হারাতে হয়। দন্তরোগজনিত জটিলতা : মাড়ির রোগ দীর্ঘদিন পুষে রাখলে যেমন মাড়িতে প্রদাহ বা ইনফেকশন হয় তেমনি দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ রোগ দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় থাকলে দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমা হয়। যেহেতু দাঁত ও মাড়ির সঙ্গে দেহের রক্ত চলাচলের সম্পর্ক আছে, তাই ইনফেকশন রক্তের সঙ্গে গিয়ে হৃৎপিণ্ড (Heart), মস্তিষ্ক (Brain), হাড় (Bone), সন্ধি (Joint), বৃক্ক (Kidney), যকৃত (Liver) ও চর্মের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মুখের সংক্রমণ জাতীয় এই ধরনের রোগের কারণে যেসব রোগ সৃষ্টি হতে পারে বা রোগটিকে আরও ত্বরান্বিত ও দীর্ঘায়িত করতে পারে, সেগুলো হলো_ ১. হৃদরোগ (Sub-acute bacterial endocarditis) ২. বাত রোগের সন্ধি প্রদাহ (Rheumatoid Arthritis) ৩. কিডনি রোগ (Kidney Disease) ৪. চর্ম রোগ (Skin Disease) ৫. মস্তিষ্কের রোগ (Brain Disease) ৬. নাক, কান, গলার রোগ (E.N.T Disease) ৭. উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) ৮. বৃক্ক প্রদাহ_ মুখের রোগের কারণে এসব জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেই মুখ ও দাঁতের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিরোধ ব্যবস্থা : যাদের দেহে অন্যান্য রোগের উপস্থিতি আছে তাদের করণীয়_ ১. নিয়মিত দুই বেলা সকালে ও রাতে আহারের পর দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তবে যাদের নিজের করতে অসুবিধা হয় তাদের অন্যের সাহায্য নিয়ে তা করানো প্রয়োজন। ২. দাঁতের অথবা মাড়ির প্রদাহ থাকলে তা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা প্রয়োজন। কারণ প্রদাহ দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ৩. নিয়মিত একটি জীবানুনাশক ওষুধ দিয়ে মুখ কুলিকুচি করা প্রয়োজন (বিশেষত রাতের আহারের পর, ঘুমানোর আগে) ৪. কোনো অনুপস্থিত দাঁত থাকলে তা কৃত্রিম দাঁতের মাধ্যমে স্থান পূরণ করা প্রয়োজন। ৫. দন্ত চিকিৎসকের কাছে মুখ ও দাঁতের রোগের চিকিৎসার আগে দেহের অন্যান্য রোগের উপস্থিতি অবহিত করা প্রয়োজন, কারণ দন্ত শল্য চিকিৎসার পূর্বে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ যেমন জরুরি তেমনি দেহের স্বাভাবিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করাটাও অত্যাবশ্যক। ৬. বছরে অন্তত দু'বার দন্তরোগ মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। ৭. চিকিৎসার পূর্বে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি, একবার ব্যবহারযোগ্য সুচ, ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। ৮. চিকিৎসক ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পারস্পরিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র কার্যকর করাই নিরাপদ। লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ডেন্টিস্ট্রি বারডেম, হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৮১৯২১২৬৭৮

সর্বশেষ খবর