সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিউমোনিয়া কখন সারতে চায় না

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

নিউমোনিয়া কখন সারতে চায় না

নিউমোনিয়া একটি পুরনো এবং প্রচলিত বক্ষব্যাধি। পুরনো লিখলাম এ অর্থে যে, অনেক আগে থেকেই এ রোগটি চলে আসছে। নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি প্রদাহজনিত রোগ। নিউমোনিয়া এমন একটি রোগ যা একটি জীবাণু দিয়ে হয়ে থাকে এবং সে জীবাণু যদি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল বা সেনসেটিভ হয়ে থাকে তবে সেই জীবাণুর মৃত্যুর সুফলে নিউমোনিয়া ভালো হয়ে যাবে। এমন অনেক রোগী আছেন যারা কোনো না কোনোভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত এবং অনেক নামিদামি অ্যান্টিবায়োটিক অনেক দিন ধরে ব্যবহার করার পরও নিউমোনিয়া সারছে না। এখন প্রশ্ন কেন এবং কখন নিউমোনিয়া সারতে চায় না? উলে­খ করা হয়েছে যে, নিউমোনিয়া একটি জীবাণুঘটিত রোগ, যেমন-ব্যাকটোরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাসসহ বিভিন্ন ছোট বড় এমনকি অখ্যাত জীবাণু দিয়ে এই নিউমোনিয়া হতে পারে। যদি কোন বিশেষ জীবাণু দিয়ে এ রোগটি হয়, সেটা ঠিকমতো চিহ্নিত করা না গেলে শত অ্যান্টিবায়োটিকের পর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেও সারবে না। তাই আক্রমণকারীর পরিচয় উৎঘাটন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ঠিকমত জীবাণুর পরিচয় জানতে হবে এবং সেই জীবাণু কোন অ্যান্টিবায়েটিকে নিশ্চিহ্ন হয় সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখতে হবে। নিউমোনিয়া যক্ষা জীবাণু দিয়েও হতে পারে। যদি আমরা টের না পাই যে রোগটি যক্ষা, তাহলে তো আর রক্ষা নেই। হাজারও ওষুধ দিয়েও রোগ সারবে না। যক্ষার ঠিক ঠিকমতো ওষুধটি প্রয়োগ করলেই জ্বর, কাশি, বুকব্যথা ভালো হয়ে যাবে। অনেক রোগীই আছেন, বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের দেখা যায়, নিউমোনিয়া সারছে না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ফলে হয়তো কিছুটা কমলো আবার দেখা গেল কয়েদিন পর এক্স-রে জুড়ে ছেয়ে গেছে নিউমোনিয়া নামক মেঘের মতো সাদা ছায়া। এ ধরনের প্রচুর রোগীকে ব্রঙ্কোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তাদের মধ্যে অনেকেই ফুসফুসের ক্যান্সার অথবা অন্য টিউমারে ভুগছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ধূমপায়ী। আসলে ক্যান্সারজনিত টিউমারটি ফুসফুসের শ্বাসনালিকে চেপে চেপে সরু করে ফেলে। ফলে সেই টিউমারের নিচের অংশে অবিরাম নিউমোনিয়া লেগেই থাকে। অনেক সময় শ্বাসনালিতে বাইরের কোনো পদার্থ ঢুকে গেলে ধীরে ধীরে সেই পদার্থের নিচের অংশের প্রদাহের মাধ্যমে নিউমোনিয়া লেগেই থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই পদার্থটিকে ব্রঙ্কোস্কপে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সারানো না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত নিউমোনিয়া সারবে না। বিভিন্ন রোগে বিশেষ করে বার্ধক্য ডায়াবেটিস, পুষ্টিহীনতা, ক্যান্সারে যারা ভুগছেন তারা বহুদিন ওষুধ সেবন করছেন। বহুদিন ধরে স্টেরয়েড সেবনকারী যারা তাদের মধ্যেও মাঝে মাঝে বা বিরতিহীনভাবে ফুসফুসে নিউমোনিয়া চলতে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীর নিউমোনিয়া হলে সেটা সহজে সারতে চায় না। অর্থাৎ ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ফুসফুসের প্রদাহ অন্যান্য অঙ্গের প্রদাহের মতোই ভালো হতে চায় না। অনেক সময় দেখা গেছে, নিউমোনিয়া ভালো না হয়ে ফুসফুসের ফোঁড়া তৈরি হয় অথবা ফুসফুসের চারদিকে অবস্থিত আবরণীদ্বয়ের মধ্যে পানি বা পুঁজ জমা হয়। তখন নিউমোনিয়া থেকে এ রোগের জটিলতা দূর করা সাধারণ চিকিৎসকের পক্ষে দুরূহ হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রয়োজন হয়ে পড়ে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের। কারণ সময়মতো এ রোগ নির্ণয় করতে না পারলে চিকিৎসা জটিল আকার ধারণ করে এবং বড় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। দুই দশক আগেও একজন নিউমোনিয়ার রোগী চিকিৎসকের কাছে যে ধরনের সনাতনী সমস্যা নিয়ে আসত, যেমন- প্রচণ্ড জ্বর, শ্বাস কাশের সঙ্গে বুকে ব্যথা, কফের সঙ্গে মরিচা পড়ার মতো রক্ত যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসের গতি দ্রুত চলা প্রভৃতি নিয়ে এখনকার রোগীরা আর আসে না। কারণ সমস্যার শুরুতেই রোগী কিছু না কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে। ফলে নিউমোনিয়ার প্রকৃত চেহারা বা রূপ নিয়ে সচরাচর আর রোগী এখন পাওয়া যায় না। নিজে নিজে ওষুধ গ্রহণের ফলে নিউমোনিয়ার জীবাণুগুলো রেজিস্টেন্ট হয়ে পড়ে। ফলে রোগ সারতে চায় না। যদি ফুসফুসের নিউমোনিয়াতে জটিলতা না থাকে এবং সেখানে যদি যক্ষা, ক্যান্সার, টিউমার না থাকে তবে নিউমোনিয়া সারানো এমন কোনো কঠিন ব্যাপারই নয়।

লেখক : বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর