শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস ও যক্ষার সম্পর্ক

ডায়াবেটিস ও যক্ষার সম্পর্ক

আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ডায়াবেটিস এবং যক্ষা অন্যতম। কায়িক পরিশ্রম কম করা, খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন, বংশগত এবং অন্যান্য কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে যক্ষা যা একটি জীবাণুঘটিত রোগ, আমাদের সমাজে সবসময় বিদ্যমান এবং প্রধানত দরিদ্র শ্রেণি বেশি আক্রান্ত। যেহেতু যক্ষা একটি জীবাণুঘটিত রোগ, তাই যে সব রোগে বা কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ওই রোগীদের যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। আর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। ডায়াবেটিস রোগী যক্ষায় আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে যথেষ্ট দেরি হয়ে যায়। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের যক্ষারোগের লক্ষণ সাধারণ যক্ষারোগীদের মতো নাও হতে পারে। যদিও যক্ষারোগে প্রধানত ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে থাকে কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুসবহিভর্‚ত যক্ষা আক্রান্তের হার অনেক বেশি। যক্ষারোগ নির্ণয়ের অন্যতম পদ্ধতি হলো কফ পরীক্ষা করা এবং বুকের X-ray করা। এই দুই ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় X-rayতে যক্ষারোগের লক্ষণ সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না এবং কফের মধ্যে জীবাণু পাওয়ার হার অনেক কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে যক্ষারোগ নির্ণয়ের জন্য High Degree of suspicion দরকার। যক্ষারোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় অতিরিক্ত সাবধানতার দরকার হয়। সঠিক নিয়মে পূর্ণ মাত্রায় ওষুধ সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায়ও যক্ষারোগের ওষুধ সমানভাবে কার্যকর। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। কারণ রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হলে যক্ষা বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং যক্ষারোগের ওষুধ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। সাধারণত বেশিরভাগ যক্ষারোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। তবে যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এতবেশি নয় এবং অন্য কোনো ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা নেই, তাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ইনসুলিনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এনে পরবর্তীতে ইনসুলিনের পরিবর্তে ডায়াবেটিসের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যক্ষার এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ একই সঙ্গে প্রয়োগ করার ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।

ডায়াবেটিস একটি এমন রোগ যার দ্বারা শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার যক্ষারোগও অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার সময় অতিরিক্ত সাবধানতা প্রয়োজন। যেমন যদি কোনো ডায়াবেটিস ও যক্ষা আক্রান্ত রোগীর বুকে  পানি জমে সেক্ষেত্রে রোগীকে যক্ষারোগের ওষুধের সঙ্গে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিতে হয় যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। যেসব  রোগী দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের বেলায় কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে যে সব যক্ষার ওষুধ কিডনি দ্বারা শরীর থেকে নির্গমন হয়, সেগুলোর মাত্রা কমিয়ে দিতে হতে পারে, যেমন ইথামবিউটস এবং স্ট্রেপটোমাইসিন। তাই ডায়াবেটিকস রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন

অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ,

মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর