মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জটিল রোগের লক্ষণ বুক ধড়ফড়

জটিল রোগের লক্ষণ বুক ধড়ফড়

বুকের মাঝখানে অথবা বামপাশে ধুকধুক করা বা হাতুড়ি পেটানোর মতো অনুভূতি হওয়া বা হৃদস্পন্দন অনুভব করাকে এক কথায় বুক ধড়ফড় করা বলা হয়। বুকের মাঝখানে হৃৎপিণ্ড সব সময়ই স্পন্দিত হচ্ছে কিন্তু মানুষ অত্যধিক পরিশ্রমের সময় ব্যতীত অন্য সময় এই হৃদস্পন্দন অনুভব করে না। যদি কেউ স্বাভাবিক অবস্থায়ও হৃদস্পন্দন অনুভব করেন তবে তাকেও পালপিটিশন বলা হয়। অল্প পরিশ্রম করতে গেলে, তাড়াতাড়ি কোনো কাজ করতে চাইলে অথবা একটু বেশি পরিশ্রম, হাঁটাহাঁটি বা হালকা দৌড়াদৌড়ি করার সময় বুক ধড়ফড় করলে তাকেও হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হৃদরোগের কারণে বিশ্রামকালীন সময় মানে শুয়ে-বসে থাকাকালীন সময় অথবা অত্যধিক টেনশন করলে সঙ্গে সঙ্গে পালপিটিশন শুরু হয়ে যেতে পারে, আবার কেউ কেউ রাতে বিছানায় শুইতে গেলে বুক ধড়ফড় অনুভব করে থাকেন, এদের মধ্যে কেউ কেউ বালিশে কান পাতলেই হার্টবিট শুনতে পান এবং ভয়ভীতির সঞ্চার হয়। আবার কেউ হয়তো বুক ধড়ফড় করার সময় মাথা হালকা অনুভব করে থাকেন এবং কেউ কেউ শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে দাঁড়াতে পারেন না, আবার কেউ কেউ অজ্ঞান পর্যন্ত হতে পারেন। হৃদরোগ বুক ধড়ফড়ের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত, তবে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, যে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি, অত্যধিক মদপান, নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ এবং অনেক মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিবেচনায় আনা হয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুক ধড়ফড় করার প্রধান কারণ হৃদরোগ। বুক ধড়ফড়ের সঙ্গে হৃদরোগের কারণে শ্বাসকষ্ট, দম কমে গিয়ে অস্থির হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, মাথা হালকা অনুভব করার মতো অবস্থা হতে পারে। কারও কারও এ সময় টয়লেটের বেগ হতে পারে এবং কেউ কেউ অস্থিরতা অনুভব করে থাকেন। আবার কারও এ অবস্থায় হাত-পায়ে শক্তি কমে গিয়ে অসাড় মতো হয়ে যায়। বেশ কিছু জটিল রোগের কারণে মানুষের মধ্যে বুক ধড়ফড় করার মতো লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে যেমন- ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বা হার্ট ব্লক, হার্টের বাল্বের সমস্যা, হার্টে জন্মগত ত্রুটি, কার্ডিও মাইয়োপ্যাথি, মাইয়ো কার্ডাইটিস, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও হার্টঅ্যাটাক ইত্যাদি। আরও যেসব জটিল কারণে পালপিটিশন হয়ে থাকে তাহলো- রক্তশূন্যতা, থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা, অ্যাজমা বা হাঁপানিজনিত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেডিসিন যেমন- সালবিউটামল জাতীয় মেডিসিন ও থিউফাইলিন জাতীয় মেডিসিন ইত্যাদির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। যদিও এসব ঠুনকো কারণে পালপিটিশন হয়ে থাকে তথাপিও এ ধরনের ব্যক্তিদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চেকআপের মাধ্যমে হৃদরোগ আছে কিনা তা স্থির করতে হবে, কারণ যারা হৃদরোগে ভুগছেন তাদেরও এসব কারণে বুক ধড়ফড় করার মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তাই অবহেলা না করে এসব ব্যক্তি কোনোরূপ হৃদরোগে আক্রান্ত কিনা তা নির্ণয় করা আবশ্যক।

ডা. এম. শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর