মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শীতে সুস্বাস্থ্যের প্রস্তুতি

ডা. সজল আশফাক

শীতে সুস্বাস্থ্যের প্রস্তুতি

শীতে শরীরের যে অঙ্গটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে ত্বক। শীতে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। এ কারণে ত্বকেরও জলীয় অংশ চলে যায় বাতাসে। তাই ত্বকে শুষ্কতার সমস্যা হয় অনেকের। শুষ্কতার প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের অয়েল, ময়েশ্চারাইজার এবং ইমোলিয়েন্টের ব্যবহার নির্ভর করে। তবে প্রথমেই যে বিষয়টি জানা দরকার তা হচ্ছে— অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব (সেবাম) কমে যায় এবং ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যায় বিশেষ করে শীতকালে। শুষ্কতার সমস্যা যাদের আছে তারা সাবান একটু কমই ব্যবহার করবেন। আর যদি করতেই হয় তবে বিভিন্ন ধরনের গ্লিসারিন সোপ বা ক্ষারের পরিমাণ নেই বা খুব কম সে রকম সাবান ব্যবহার করাই মঙ্গলজনক। ত্বকে যদি সামান্য শুষ্ক ভাব দেখা দেয় তবে যে কোনো অয়েল ব্যবহারই যথেষ্ট, যেমন অলিভ অয়েল বা বেবি অয়েল। শুষ্কতার পরিমাণ যদি একটু বেশি হয় তবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারই উত্তম। কসমেটিক্সের দোকানে বিভিন্ন নামে ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, তবে গ্লিসারিনই ভালো ময়েশ্চারাইজার। ময়েশ্চারাইজার অবশ্য ত্বকে অর্থাৎ গোসলের পর শরীর মুছে ত্বকে ভেজাভাব থাকা অবস্থাতেই মেখে দিতে হবে। গ্লিসারিন মাখার ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত আঠাভাব অনেকের পছন্দ নয়। সে ক্ষেত্রে ভেজা তোয়ালে বা গামছা  কিংবা যে কোনো ভেজা কাপড় চিপে নিয়ে আস্তে এবং আলতোভাবে চেপে চেপে অতিরিক্ত আঠাভাব উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে ঘষা দেওয়া যাবে না, তাতে পুরো গ্লিসারিন মুছে যেতে পারে। শুষ্কতার কারণে যদি ত্বক ফেটে যায়, বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি এবং ঠোঁট। তবে ইমোলিয়েন্ট ব্যবহার করতে হবে। কসমেটিক্সের দোকানে বিভিন্ন ধরনের দামি ইমোলিয়েন্ট পাওয়া যায়— অয়েলেটাম ইমোলিয়েন্ট (এটি অবশ্য ওষুধের দোকানেও পাওয়া যায়) শিশুদের ত্বকে এটি খুবই উপকারী। তবে সাধারণের জন্য সবচেয়ে ভালো ইমোলিয়েন্ট  হচ্ছে ভেসিলিন। ভেসিলিন যে কোনো অবস্থাতেই (শুষ্ক অথবা ভেজা ত্বক) মাখা যায়, তবে ভেজা অবস্থায় মাখলে উপকার বেশি। ঠোঁটের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তিন বেলা আহারের সময় ঠোঁট অনেকক্ষণ যাবৎ ভিজতে থাকে এবং আহার শেষে সঙ্গে সঙ্গেই ভেসিলিন ঠোঁটে মাখলে ভেজা ভাব থেকে যায় এবং ফাটা থেকে ঠোঁট রক্ষা পায়। তবে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করলে তাতে ঠোঁট ফাটা তো কমেই না, উপরন্তু এলার্জি ভাব দেখা দেবে এবং এই এলার্জি ঠোঁটের আশপাশের ত্বকে ছড়িয়ে যেতে পারে। শীতে ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার একটি সুবিধা আছে। লিপস্টিক ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখে। পায়ের গোড়ালি ফাটাকে ঝামা দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হতে পারে, সোরিয়াসিসের প্রবণতার কারণে যদি গোড়ালি ফাটে তবে অতিরিক্ত ঘষায় সোরিয়াসিস বেড়ে যেতে পারে। তবে গোসলের সময় পায়ের গোড়ালি সামান্য ঘষে তাতে ভেজাভাব থাকা অবস্থায় ভেসলিন মাখলে গোড়ালি ফাটবে না।  পায়ের গোড়ালি ফাটা রোধে শীতে কিছুটা সময় হলেও প্রতিদিন গোড়ালি ঢাকা থাকে এমন স্যান্ডেল বা জুতা পরা উচিত। বিশেষ করে ঘরে-বাইরে ধূলিময় পরিবেশে জুতা পরলে গোড়ালিতে ময়লা লাগার সুযোগ থাকে না এবং পা বেশি শুষ্কও হতে পারে না। আর খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। সবসময় খোলা স্যান্ডেল পরলেও পায়ের গোড়ালি ফাটে। পায়ে মোজাও পরা যেতে পারে। মোটকথা, শীতে ত্বককে রক্ষার জন্য ত্বক পরিষ্কার রেখে তাতে ক্রিম মেখে দিতে হবে আর হাত-পা বারবার না ভেজানোই ভালো। ভেজালে ভালো করে ধুয়ে মুছে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিম লাগাতে হবে। ত্বকের আর্দ্রাতা রক্ষা করে ত্বককে সজীব রাখার চেষ্টা করতে হবে। সুতরাং শীতে সুস্বাস্থ্যের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাক।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর