শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এইডস : প্রতিরোধেই মুক্তি

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

এইডস : প্রতিরোধেই মুক্তি

আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের কল্যাণে, উন্নত চিকিত্সার প্রভাবে এবং মানুষের সচেতনতার কারণে সংক্রামক রোগের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধি। তারই একটি হলো এইডস। এইডস এক আতঙ্কের নাম, এক মরণব্যাধি, এক সংক্রামক রোগ। সারা বিশ্বেই আজ এই রোগের ছড়াছড়ি, এমনকি মহামারী। তবে খুব কম মানুষই এই রোগের সঠিক তথ্য সম্পর্কে অবগত আছেন। সত্যিকার অর্থে রোগটি ভীতিকর হলেও প্রতিরোধ যোগ্য। হিউম্যান ইমিউনো  ডেফিসিয়েনসি ভাইরাস (এইচআইভি) এই রোগের জীবাণু। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষ যেমন হেলপার টি সেল, মনোসাইট, ম্যাক্রফেজ, ডেনড্রাইটিক সেল, চর্মের ল্যাঙ্গার হেন্স সেল, মস্তিষ্কেও গ্লায়াল সেল ইত্যাদিকে আক্রমণ করে ও সেগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। ফলে মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন যে কোনো সংক্রামক জীবাণু সহজেই এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে পারে। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার এই অবস্থাকে এইডস বলে। এই অবস্থায় শরীরে প্রতিরোধ করার মতো কোনো কার্যকরী কোষ না থাকায় যে কোনো রোগ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরীরে নানা উপসর্গসহ এর বিস্তার ঘটে। এইডস রোগীর ক্ষেত্রে খুব সাধারণ সংক্রামক রোগও স্বাভাবিক চিকিত্সায় ভালো হয় না। ঘনঘন ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি হয়। এমনকি কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সার শরীরকে আক্রমণ করে। এ ছাড়া শরীরের ওজন হঠাত্ করে খুব বেশি কমে যায় এবং শরীর খুব বেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু হয়। ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম রোগটিকে শনাক্ত করা হয়। ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু নিউমোনিয়ার রোগী পাওয়া যায়, যার কারণ নিউমোসিস্টিস ক্যারিনিয়াই নামক একটি জীবাণু, যার বর্তমান নাম নিউমোসিস্টিস জিরোভেসি। পরে আফ্রিকায় প্রাদুর্ভাব ঘটে ক্যাপোসিস সারকোমা নামক একটি টিউমারের। ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম একজন ফরাসি বিজ্ঞানী এইডসের জীবাণু আবিষ্কার করেন, নাম দেন এলএভি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা নাম দেন এইচটিএলভি। ১৯৮৬ সালে এর নামকরণ করা হয় এইচআইভি, যা এখনো প্রচলিত। বর্তমানে রোগটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় এবং কারা ঝুঁকিপূর্ণ, অসচেতনতা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, সুস্থ জীবনের অনুশীলন না করাটাই এই রোগের প্রধান ঝুঁকি। এইচআইভি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো—১. এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কনডম ছাড়া যৌন মিলনের মাধ্যমে। ২. সমকামী, বহুগামী ব্যক্তি এবং বাণিজ্যিক ও ভাসমান যৌন কর্মীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ৩. আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে। ৪. যুব সমাজের মধ্যে নেশার আধিক্য এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ। ৫. আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, অস্থিমজ্জা, চোখের কর্নিয়া ইত্যাদি শরীরে সংস্থাপনের মাধ্যমে। ৬. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহূত টুথব্রাশ ও ক্ষত সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতি যেমন সুই, সিরিঞ্জ, কাঁচি, বেড, রেজার, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে। ৭. আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করা ডাক্তারি যন্ত্রপাতি জীবাণু মুক্ত না করে ব্যবহার করলে।

৮. এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় অথবা প্রসবের পর বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর হতে পারে। ৯. এইচআইভি আক্রান্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিবিড় ভৌগোলিক অবস্থান, দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা। ১০. শ্রমিক অভিবাসন ও মানব পাচার। এবং ১১. সর্বোপরি এইচআইভি সম্পর্কে সচেতনতা ও তথ্যের অভাব। মনে রাখতে হবে এইচআইভি রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেও এই ভাইরাস মানুষের শরীরে বছরের পর বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং এ সময় অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।

কারও শরীরে এইচআইভি আছে কিনা তা বাইরে থেকে অনেক সময় বোঝা যায় না। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে এ ভাইরাসের সংক্রামণ সম্পর্কে

পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়। [চলবে]

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর