শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফাইব্রয়েড টিউমার ও প্রেগনেনসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইব্রয়েড টিউমার ও প্রেগনেনসি

ফাইব্রয়েড টিউমার জরায়ুর একটি অতি পরিচিত টিউমার। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের প্রতি ১০০ জনে ৩৫ জন মহিলার এই টিউমার থাকতে পারে। এই টিউমারের লক্ষণগুলো হলো মাসিকের সময় অধিক রক্তপাত ও ব্যথা হওয়া যদিও ৭৫% ক্ষেত্রে এই টিউমার কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। প্রেগনেনসির সময় কিংবা অন্যান্য কারণে পেটের আল্ট্রাসাউন্ড করার সময় ধরা পড়ে। অবস্থান ভেদে এই টিউমার তিন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন সাব সেরাস, ইন্ট্রা মুরাল এবং সাব মিউকাস। এর মধ্যে সাধারণত সাব মিউকাস টিউমারই অধিক জটিলতার কারণ হয়ে থাকে। গর্ভধারণের আগেই যদি এই টিউমার ধরা পড়ে তবে একজন অভিজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। টিউমারটি যদি আকারে ছোট হয়ে থাকে এবং বাচ্চা হওয়ার পথে এটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করলে গর্ভধারণের চেষ্টা করে যেতে হবে। এক্ষেত্রে টিউমার অপসারণ করার দরকার হবে যদি দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে এবং বন্ধ্যত্বের আর কোনো কারণ না পাওয়া গেলে।  তিন বা এর অধিকবার গর্ভপাত হলে। 

বন্ধ্যত্ব সমস্যার জন্য টিউমার অপারেশন করার আগে কিছু শর্ত পূরণ করা জরুরি। বন্ধ্যত্বের জন্য অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা দেখে নেওয়া, হিস্টারো স্যালফিংগোগ্রাম বা ল্যাপারোস্কপি করে ফেলোপিয়ান টিউব (ডিম্বনালী) খোলা কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে, স্বামীর শুক্রাণু বা বীর্য নরমাল থাকতে হবে। জরায়ুতে টিউমার থাকা অবস্থায় গর্ভধারণ হয়ে থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা কোনো অসুবিধা করে না। কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের কারণে মা এবং সন্তানের বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে। যেমন— গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে বিশেষ করে টিউমারটি যদি সাব মিউকাস হয়। কারণ সাব মিউকাস টিউমার জরায়ুর ভিতরে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রূণ এবং প্লাসেন্টার স্থাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।  * প্রেগনেনসির কারণে এই টিউমারেরও কিছু পরিবর্তন হয় যা জটিলতা তৈরি করে। যেমন, জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউমারের আকার ও সাইজ পরিবর্তন হতে পারে।  * প্লাসেন্টা যদি টিউমারের উপর

অবস্থিত হয় তবে অনেক সময় প্লাসেন্টা সেপারেশন হয়ে এন্টি পারটাম হেমোরেজ (রক্তপাত) হতে পারে। এছাড়া বাচ্চার ওজন কম হওয়া, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা), সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়া ইত্যাদি জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। * ফাইব্রয়েডের কারণে অনেক সময় নরমাল ডেলিভারির পথ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সিজারের প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া ডেলিভারির সময় এবং পরবর্তীতে অধিক রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে এবং সাবধানতা অবলম্বন করার  দরকার হয়।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (অবস-গাইনি)

ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর