মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এইডস : প্রতিরোধেই মুক্তি

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

এইডস : প্রতিরোধেই মুক্তি

(পূর্ব প্রকাশের পর) যেহেতু এইচআইভির বিরুদ্ধে প্রতিষেধক কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই প্রতিরোধ করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে এর থেকে নিস্তার পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। কার্যকর কোনো ওষুধপত্র আবিষ্কৃত হয়নি। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে যেমন ভুগবেন, এর সঙ্গে পরিবার বা সমাজের অন্যদের জন্যও হুমকি হয়ে থাকবেন। এইচআইভি প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকি অনুধাবনের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। মানুষের চিন্তায় ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এইডস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। এছাড়া বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু বিশ্বস্ত একজন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রাখতে হবে। একাধিক যৌনসঙ্গী পরিহার করতে হবে।  নিরাপদ যৌনক্রিয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে অসংক্রমিত লোক এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। নিয়মিত ও সঠিকভাবে কনডম ছাড়া যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। অবাধ এবং অবৈধ যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকাই হলো এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকার সর্বোত্কৃষ্ট পন্থা। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিরও মনে রাখা উচিত তার ব্যবহূত সুই বা ইনজেকশন অন্যকে ব্যবহার করতে দিবেন না। একবার ব্যবহার করা যায় এমন জীবাণুমুক্ত সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। শরীরে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে সে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এইচআইভি নেই। যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কারও যৌনরোগ থাকলে দ্রুত চিকিত্সা করাতে হবে। যৌনসঙ্গীর এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে অথবা নিয়মিত ও সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি। তবে যেসব মা প্রয়োজনীয় থেরাপি গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তান আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৮৫ ভাগ রোধ করা সম্ভব। জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে প্রতিরোধমূলক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নারী-পুরুষ যে কোনো মানুষের শরীরে এইচআইভি পাওয়া গেলে তাকে ভয় পাওয়া, ঘৃণা করা বা তার কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত নয়। তাকে সমবেদনা জানানো, যত্ন করা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। রোগটি ঘৃণার হলেও মানুষ তো আর কোনোক্রমেই ঘৃণার পাত্র নয়। তাই এইচআইভি অন্য কারও বা নিজের শরীরে পাওয়া গেলে কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এইচআইভি পজিটিভ হলে তাত্ক্ষণিক মৃত্যু ঘটবে না, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একজন রোগী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারবেন। রোগীর আশা ও আত্মবিশ্বাস জরুরি। [শেষ]

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর