মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে, যার ফলে প্রবীণ ব্যক্তিদের বেলায় বেশ কিছু অসুস্থতা প্রায় সবার মধ্যে দেখা দিয়ে থাকে যেমন উচ্চরক্তচাপ, হার্টের ব্লক বা হার্টের রক্ত সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস, কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামক অসুস্থতা, অস্থিসন্ধির সমস্যা বা ক্ষয়জনিত বাতরোগ, হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গিয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া, হাঁটতে চলতে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পরে যাওয়ার উপক্রম হওয়া বা মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদিই প্রধান অসুস্থতা। এসব অসুস্থতার মধ্যে হূদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও তত্জনিত হূদরোগ, ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসজনিত হূদরোগ দ্রুত প্রানঘাতি অসুস্থতা বলে বিবেচিত হওয়ায় তাদের গুরুত্ব অন্যান্য অসুস্থতার চেয়ে অনেক বেশি। তাই এসব অসুস্থতা প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার গুরুত্ব অনেক বেশি। উচ্চরক্তচাপ, হূদরোগ ও ডায়াবেটিস কি কারণে হয়ে থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এসবের একক কারণ নির্ণয় করতে পারেনি, তাই এদের মাল্টিফেকটরিয়াল ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। তার মধ্যে আছে বংশগত প্রবণতা, সামাজিক কারণ, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণগত কারণ, মানসিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা ও ব্যক্তির মনমানসিকতা। এ ধরনের অসুস্থতা প্রতিকারের জন্য বেশ কিছু উপায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে বর্ণিত আছে যেমন-জীবনের সব পর্যায়ে শারীরিকভাবে সচল থাকা মানে বয়সভেদে নিরাপদ মাত্রায় কায়িকশ্রম সম্পাদন করা, যা ৮০-৯০ বছর বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও প্রযোজ্য। তার মানে জীবনের সব পর্যায়ে শারীরিক যোগ্যতা বজায় রাখুন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। শারীরিক ওজন সঠিকমাত্রায় বজায় রাখুন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করবেন না। খাদ্যে চর্বি বা তেলের মাত্রা সর্বনিম্ন মাত্রায় নিয়ে আসুন। পরিমাণমত প্রোটিন গ্রহণ করুন যেমন- ডাল, চর্বি ছাড়া মাংস, মাছ, সপ্তাহে ২টা ডিম, সপ্তাহে কমপক্ষে ১ লিটার পরিমাণ দুধ, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল ও পানি। বাজারের তৈরি খাবার বর্জন করুন কারণ এসবে আমাদের দেশের নির্মাতারা ব্যবসায়িক স্বার্থে অখাদ্য ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক চর্বি, রং ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশাতে দ্বিধাবোধ করে না। ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন- ভাত, রুটি, আলু, চিনি ও মিষ্টি গ্রহণের মাত্রা সীমিত রাখতে হবে। লবণ গ্রহণের মাত্রা কমাতে হবে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় আয়ত্ত করুন। সব সময় মানসিকভাবে উত্ফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন। ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ উভয় অসুস্থতার শেষ পরিণতি হিসেবে হূদরোগে আক্রান্ত হওয়াকেই বোঝায়। তাই যারা উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা প্রাথমিক র্পযায়ে হূদরোগ নির্ণয়ের জন্য হূদরোগের উপসর্গগুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। হূদরোগের প্রধান লক্ষণগুলো হলো— বুকব্যথা, বুকে চাপ অনুভব করা, সহজে হাঁপিয়ে উঠা বা শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যাওয়া, প্যালপিটিশন হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পেটে অতিমাত্রায় গ্যাস উৎপন্ন হওয়া, পেট ভারী হয়ে যাওয়া, দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া এবং হাত-পা ও মুখ ফুলে যাওয়া যা শরীরে পানি জমে যাওয়ার জন্য ঘটে থাকে।
ডা. এম. শমশের আলী, সি. কনসালট্যান্ট,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১