বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার গোটা বিশ্বে এ দিবস পালিত হয়। এবছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় Obesity & Kidney Disease অর্থাৎ অতিরিক্ত ওজনই কিডনি ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত ওজন কিডনি রোগ এবং হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের কারণ। অনেকেরই জানা নেই বিশ্বের প্রতি ১০ জনে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত। উন্নত দেশগুলোর ধীরগতিতে কিডনি বিকলের প্রথম এবং প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। বাংলাদেশেও একইভাবে কিডনি বিকলের প্রধান দ্বিতীয় কারণ ডায়াবেটিস। কারণ অতিরিক্ত ওজন আমাদের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ রোগকে ত্বরান্বিত করে। পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সুস্থ কিডনির জন্য সুস্থ জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজকাল দেখা যায় ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা বিভিন্ন তৈলাক্ত খাবারের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে। এমনকি প্রতিদিনের খাদ্যও কার্বোহাইড্রেটের প্রাধান্যই বেশি। সেক্ষেত্রে শাক-সবজি বা ফলমূল একটু বেশি খেতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুরা ছোট বয়স থেকেই কম্পিউটার এবং স্মার্ট থেকে গেমস খেলছে। যেখানে খুব একটা কায়িক শ্রমের প্রয়োজন নেই। তাই শিশুকাল থেকেই মোটা হয়ে যাচ্ছে তারা। এ ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কিডনি রোগ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন মৃত্যুব্যাধির ঝুঁকি বাড়ছে। তাই শিশুকাল থেকেই শিশুটি যাতে মুটিয়ে না যায় সে জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুর প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মাছ, মাংস, ডিম, দুধের পাশাপাশি শাক-সবজি, ফলমূল এবং বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। শিশুর খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। সাঁতার বা সাইক্লেনিং করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। কোনো অবস্থায়ই যাতে মুটিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডায়রিয়া থেকে পানিশূন্যতাই আকস্মিক কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ। তাই তো ডায়রিয়া হলে যাতে পানিশূন্যতা না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময় তীব্র ব্যথানাশক ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। তাই অবশ্যই মনে রাখতে হবে যখন তখন ইচ্ছামতো ব্যথানাশক ওষুধ কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মহিলারা অনেক সময় গ্রামে গর্ভপাত করেন। অনেক সময় ইনফেকশনসহ অধিক রক্তক্ষরণের কারণেও আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। তাই অবশ্যই মহিলাদের এ ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। অনেক সময় কিডনির পাথরসহ যে কোনো Obstruction এর কারণে আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্যই কারণ বের করে কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। আকস্মিক ও ধীরগতিতে কিডনি বিকলের কারণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা যদি মেনে চলা যায় তবে কিডনি রোগের মতো জীবননাশা রোগ থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব। এজন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে এসব লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ মাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
করণীয় : শিশুদের গলাব্যথা বা খোসপাঁচড়া হলে অবহেলা করা যাবে না, কারণ তাতে কিডনি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিডনির যে কোনো প্রদাহ বা ইনফেকশনে অতিসত্বর চিকিৎসা করাতে হবে। যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তারা অবশ্যই কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত কিডনি চেকআপ করে নিন। কারণ তাদের কিডনি রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি থাকে। নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত ওষুধ সেবনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিন। অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যসম্মত আহারের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
অনেক সময় ব্যথানাশক ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিকও কিডনি বিকলের কারণ হয়। ধূমপান পরিহারকরুন। ডায়রিয়া হলে অবহেলা করবেন না।
কিডনি রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ডা. সহেলী আহমেদ সুইটি, সহকারী অধ্যাপক,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা,
চেয়ারপারসন, সেইভ লাইফ ফাউন্ডেশন।