বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। আমেরিকার মতো দেশে ১৪ শতাংশ লোক কোনো না কোনো প্রকার কিডনি রোগে আক্রান্ত। কাজেই এ রোগের ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। কিডনি রোগ সাধারনত দু প্রকার হয়ে থাকে। আকস্মিক কিডনি বিকল হওয়া এবং ধীর গতিতে কিডনি বিকল হওয়া বা CKD। আকস্মিক কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- ডায়রিয়া/ বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, জটিল নেফ্রাইটিস, গর্ভাবস্থায় নানবিধ জটিলতা, ব্যথানাশক ঔষধ বা এন্টিবায়োটিক সেবন, নানারকম সংক্রামণ, প্রস্রাব বাধাগ্রস্থ হওয়া বা, অবস্ট্রাকটিভ কিডনি ডিজিজ ইত্যাদি। ধীরগাতিতে কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস, পালিসিসটিক কিডনি ডিজিজ ইত্যাদি। কিডনি রোগে প্রাথমিক পর্যায়ে CKD এর ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে কাজেই যখন এ রোগ ধরা পরে তখন কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক খানি কমে যায়। সাধারণভাবে কিডনি রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে- প্রস্রাব কমে যওয়া বা ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বা আমিষ বের হয়ে যাওয়া, বা রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব, শরীর ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, শরীর বা হাড়ের ব্যথা, কোমরের পেছনে ব্যথা, চুলকানি, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। অতিসহজ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। যেমন Urine R/M/E, Serum Creatinine এবং আল্ট্রাসোনোগ্রাম করলেই এ রোগের প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি কিডনি রোগ নির্ণয় করা খুব কঠিন ব্যাপার নয় কিন্তু এর জন্য দরকার সচেতনতা। আমরা অনেকে মনে করি কিডনির অসুখ হলে বুঝি রোগীর মৃত্যু অবধারিত ব্যাপারটা আসলে তা নয়। আকস্মিক কিডনি বিকল হলে চিকিৎসার মাধ্যমে এর পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। মাঝে মাঝে এসব রোগীর সাময়িক ডায়ালাইসিস ও লাগতে পারে। ক্রনিক কিডনি ডিসিসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কিন্তু এর পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়। এক পর্যায়ে এসব রোগীদের বেঁচে থাকার জন্য হয় ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। এর মাধ্যমে রোগীরা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে। কজেই আমরা বুঝতে পেরেছি যে কিডনি রোগ মানে মৃত্যু অবধারিত নয় কিন্তু এর চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল, সুতরাং এ রোগ প্রতিরোধের জন্য আমাদেরও চেষ্টা করে যেতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করতে হবে, যখন তখন
এন্টিবায়োটিক সেবন পরিহার করতে হবে।
ডা. ফাহমিদা বেগম, কনসালটেন্টনেফ্রোলজি, এ্যাপোলো হসপিটালস্, ঢাকা।