বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

হৃদরোগীদের ঈদ আনন্দ

হৃদরোগীদের ঈদ আনন্দ

আমাদের সমাজে ঈদ একটি বৃহৎ অনুষ্ঠান তো বটেই সর্বোপরি এক আনন্দঘন দিনও বটে। বছরের এ দিনে সবাই সর্বোচ্চ আনন্দে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করেন। উৎসবের আমেজে খাওয়া-দাওয়ার পর্বটিও কিন্তু সর্বাধিক প্রচলিত ও পছন্দনীয়। ঈদে আনন্দের সঙ্গে খাদ্যসামগ্রীর আয়োজন, বিশেষ করে যার যার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খাদ্যসামগ্রীর আয়োজন করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও পোশাক-আশাক তো আছেই। আজকাল ৪০-৪৫ বছর বয়স থেকেই অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বেশকিছু হৃদরোগী দেখে থাকি, তারা অনেকে ১০ বছর আবার কেউবা ২০ বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানেও সুস্থ জীবনযাপন করছেন। এসব বয়সী মানুষের খাদ্যগ্রহণে বিধিনিষেধের ফলে মনোকষ্ট হলে তাদের আচার-আচরণগত ও শারীরিক-মানসিক পবিরর্তন ঘটে, যা অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি স্বীকার করতে চায় না, বরং সহ্য করে নেয়। শর্তসাপেক্ষে হৃদরোগীরাও অন্যদের মতো ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন, বিশেষ করে সব ধরনের খাদ্যবস্তু ঈদের দিনে গ্রহণ করতে পারবেন। খাদ্যবস্তু মানব শরীরে সাধারণভাবে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার ঘটিয়ে থাকে এবং অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে যে বিষক্রিয়া, বদহজম, ডায়রিয়া, পরিমাণে বেশি খাওয়ার ফলে অস্বস্তি বা কষ্টবোধ করা ইত্যাদি অসুস্থতা ঘটিয়ে থাকে। এগুলো তাত্ক্ষণিক কার্যকর থাকে। খাদ্য ঘটিত পবির্তনগুলো বহুলাংশে দীর্ঘমেয়াদি। যেমনি অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ খাদ্যগ্রহণ করেও মোটাসোঁটা বা স্বাস্থ্যবান হওয়া সম্ভব নয়। যেমনি সম্ভব নয় স্বল্প সময়ে খাদ্যগ্রহণের মাত্রা কমিয়ে ওজন কমানো। আপনি চাইলেই খাদ্যগ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আপনার স্বল্প সময়ে ওজন কমাতে পারবেন না। কারণ খাদ্যগ্রহণের মাত্রার বেশকম ঘটলে ওজন পরিবর্তিত হয়, এটা অঙ্কের হিসাবের মতোই স্পষ্ট। খাদ্যগ্রহণের ক্যালরির পরিমাণ এবং ওই ব্যক্তি মেটাবলিক চাহিদা, এর মধ্যে কমবেশি হলেই ওজন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে। ঈদে একদিন কমবেশি খেয়ে আপনার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, কারণ এগুলো নির্ণিত হয় আপনার দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যগ্রহণের এবং শারীরিক কার্যক্রমের বিবেচনায়। তবে কিছু কিছু ডায়াবেটিক রোগী স্বল্পমেয়াদি রক্তে সুগার খাদ্যগ্রহণের মাত্রার সঙ্গে বেশকম হয়ে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- হাইপোগ্লাইসেনিয়া ও হাইপারগ্লাসনিয়া। তা ছাড়া কারাও ডায়াবেটিসের জটিলতা নির্ণিত হয় দীর্ঘমেয়াদি সুগারের (HbA1C) মাত্রার ওপর। স্বল্প সময়ের তারতম্য খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। ঈদ আনন্দে খাদ্যগ্রহণের প্রকার ও পরিমাণ একটু বেশি হলেই যে কেউ খুব বেশি সমস্যায় পড়বেন তাও নয়, কারণ সমাজের সবাই তো আনন্দ ভোগ করেই থাকে। যারা বর্তমানে হৃদরোগী তারাও তো আগে তাই করেছেন। তবে খাদ্যগ্রহণের ফলে যে কেউ স্বল্পমেয়াদি অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। হৃদরোগীরা স্বল্পমেয়াদি অসুস্থতা যেমন বিষক্রিয়া, বদহজম, ডায়রিয়া, পরিমাণে বেশি খাওয়ার ফলে অস্বস্তি বা কষ্টবোধ করা ইত্যাদি অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। ঈদে হৃদরোগীরা তাদের সাধ্যের মধ্যে সব ধরনের খাদ্যই গ্রহণ করতে পারবেন। এখানে সাধ্য বলতে কিছু বিষয়কে বুঝানো হলো, যেমন কত পরিমাণ খেলে কষ্ট পাবেন না, কত পরিমাণ বা কি খেলে বদহজম হবে না, কি খেলে  ডায়রিয়া হতে পারে, মানে পেটে কতটুকু খাবার সহ্য করতে পারবে, ইতিপূর্বে কোন ধরনের খাদ্যবস্তু খেয়ে আপনার বদহজম হয়েছিল।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,

কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন

ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর