শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আপনি কি হার্টে ‘রিং’ পরেছেন?

আপনি কি হার্টে ‘রিং’ পরেছেন?

আপনার হার্টের রক্তনালিতে এক বা একাধিক ব্লক ছিল, যার ফলশ্রুতিতে চিকিৎসকের (Invasive Cardiologist) পরামর্শক্রমে এক বা একাধিক রিং পরেছেন। কেউ কেউ আবার রক্তনালি বারবার ব্লক হওয়ার জন্য একাধিকবার রিং পরেছেন। আবার কেউ রিং পরার পর আবারও বাইপাস করেছেন। আবার কেউ প্রথমে বাইপাস করার পর পরবর্তীতে আবার ব্লক দেখা দেওয়ায় দ্বিতীয়বার আবার রিং পরেছেন। আপনি হয়তো এটাও জানেন যে, হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির ব্লক একটা ক্রমঅগ্রসরমান অসুস্থতা যা প্রাকৃতিক নিয়মে (Disease trends) ধীরে ধীরে আকারে ও সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে কোনো কারণে যদি ব্লকের সৃষ্টিকারী প্লাগ হঠাৎ আকারে বড় হয়ে যায় অথবা ফেটে যায়, তবেই আপনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবেন। যেহেতু হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির ইসকেমিয়া বা রক্তপ্রবাহ স্বল্পতা সৃষ্টি করে, তাই এ রোগকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয়। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ একটি বর্ধনশীল অসুস্থতা তাই দিনে দিনে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়াটাই এ রোগের স্বাভাবিক আচরণ। আপনাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ প্রতিরোধ করতে হবে এটাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এ প্রতিরোধ দুই ধরনের হতে পারে। যদি কেউ রোগ সৃষ্টির আগেই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন, তবে এটাকে বলা হবে প্রাথমিক প্রতিরোধ। যেহেতু IHD ক্রমবর্ধনশীল অসুস্থতা, তাই যে কোনো সময় থেকে প্রতিরোধ শুরু করলে নিশ্চিত সুফল পাওয়া যাবে। রোগ শুরু হওয়ার পরও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন। রোগ শনাক্ত হওয়ার পর গড়ে তোলা প্রতিরোধকে সেকেন্ডারি প্রতিরোধ বলা হয়ে থাকে। এসব প্রতিরোধের সঠিক নিয়ম জেনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে যে কেউ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন। তবে আপনার এর জন্য সময় এবং শ্রম দুটিই দিতে হবে। আপনার উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিকস কিংবা উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হতে পারে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বা ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে কোনো উপায়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা। আমাদের অনেকেরই ধারণা হার্টে ব্লক ছিল রিং পরেছি, এর জন্য আর তেমন কিছু করার প্রয়োজন নেই। এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক ও বিপজ্জনক। আপনি ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের অংশ হিসেবে বিদ্যমান ব্লক খোলার জন্য রিং পরেছেন তার মানে এই নয় যে, আপনি ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের পুরোপুরি চিকিৎসা পেয়ে গেছেন। বর্তমান সময় পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে যেসব অসুস্থতাকে এর জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিকস, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার অস্বাভাবিকতা, গতিহীনতা বা অলস জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, কিডনি রোগ, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা ইত্যাদি। চেকআপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করাই এই রোগ প্রতিরোধের উত্তম উপায়। এর জন্য প্রয়োজন হবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। রোগীর শারীরিক ও হৃৎপিণ্ডের যোগ্যতামাফিক গতিশীলতা বা কর্মতৎপরতা বা কায়িক শ্রম করার অভ্যাস করা, আগে উল্লিখিত অসুস্থতার চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ ওষুধপত্র চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে  গ্রহণ করা। কারণ প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট

(কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,

কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন

ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর